আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৯ মার্চ ২০২৪ ● ৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: রংপুরের আলু যাচ্ছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে       গ্রাহকের ৫০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও পোস্টমাস্টার!       চার ঘণ্টা পর উত্তরবঙ্গের সাথে ঢাকার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক       ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন       রংপুরে মিস্টি ও সেমাই কারখানায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা      

 width=
 

ফেলানী’ নিহত হওয়ার ২ বছর:কেমন আছে ফেলানীর পরিবার?

রবিবার, ৬ জানুয়ারী ২০১৩, রাত ১১:৫৯

নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম: বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশী কিশোরী ‘ফেলানী’ নিহত হওয়ার ২ বছর পূর্তি হবে ৭ জানুয়ারী। বিয়ের পিড়িয়ে বসার স্বপ্ন নিয়ে অভাবী বাবার সঙ্গে ভারতে থেকে বাংলাদেশে আসার পথে ফুলবাড়ী সীমান্তে নির্যাতনের পর তাকে গুলি করে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্ত-রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের দ:রামখানা বানার ভিটা গ্রামের কলোনীটারীতে নুর ইসলামের বাড়ি। ‘ফেলানী’ হত্যার এক মাস পর তার বাড়িতে এসেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তার বাবা নুর ইসলামকে প্রদান করেন ৩ লাখ টাকা। এ সময় ফেলানীর বাড়ির কাচা রাস্তাটি পাকা করে ‘ফেলানী’র নামে নামকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। দুই বছর পেড়িয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। জেলা প্রশাসক ফেলানীর পিতা নুর ইসলামকে ‘ফেলানী ষ্টোর’ নামে একটি মুদি দোকান করে দেন। স্বল্প পূঁজির মুদি দোকানটি কয়েক মাসের মাথায় বন্ধ হয়ে যায়। যেভাবে ভারতে যায় ফেলানীর পরিবার: প্রায় আট বছর আগে তার পরিবার ছিল অভাব অনটনে জর্জরিত। স্থানীয় একটি পাচারকারী চক্র তাকে ভারতে ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যায় পরিবারসহ। সেখানে গিয়ে দিল্লির বঙ্গাইগাঁও এলাকার একটি ইটভাটায় কাজ নেয়। দীর্ঘদিন ইটভাটায় কাজ করে টাকা জড়ো করে ছোট্ট একটা পানের দোকান দেয়। ফেলানীর মা পানের দোকানে সাহায্যের পাশাপাশি এবাড়ি ও বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে সংসারে যোগান দিতেন। এরই মধ্যে ১৫ বছরের সুদর্শনা ফেলানীর সাথে বাংলাদেশের তার মায়ের বড় বোনের ছেলের (ফেলানীর খালাত ভাই) সাথে বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের একদন আগে নুর-ইসলাম মেয়েকে নিয়ে রওয়ানা করে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে। কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানী: ফেলানীর পিতা নুর ইসলাম জানায়, রাতে তারা ভারতের চৌধুরীহাট খেতাবের কুটি সীমান্তে চলে আসে। সীমান্তে এসে কাঁটাতারের বেড়া পাড় হওয়ার সুযোগ খুঁজে পায়না। পাচারকারীরা অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে কাঁটাতারের বেড়া পাড় করে দেওয়ার আশ্বাসে নুর-ইসলাম রাজী হলে তাদের পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। ভোর বেলা চোরাকারবারিরা বাঁশের তৈরী মই দিয়ে প্রথমে নুর-ইসলামকে পাড় করে দেয়। এপারে এসে নোম্যান্সল্যান্ড পাড় হয়ে মেয়ে ফেলানী আসার প্রতীক্ষায় থাকে নুর-ইসলাম। কিন্তু সময় পেড়িয়ে গেলেও আসেনা ফেলানী। সকাল বেলা সীমান্ত-বাসীরা দেখতে পায় কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীকে। এলাকাবাসীর ধারণা ফেলানীকে হত্যার আগে ভারতীয় বিএসএফ তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। তার শরীর ও মুখের আঘাতের চিহ্ন এমনটাই ছিল। মৃত্যুর পর ৪ ঘণ্টা পর বিএসএফ তার মৃতদেহ কাঁটাতার থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭ নং আন্তর্জাতিক মেইন পিলারের ৩নং সাব পিলারের নিকট বিজিবি ও বিএসএফ’র পতাকা বৈঠকে ফেলানীর মৃতদেহ বিজিবির কাছে ফেরত দেয়। স্বপ্নভঙ্গ ফেলানীর; শোকে ভাসে গ্রাম ‘ফেলানী’র মা জাহানারা বেগম একমাস পরজানতে পারেন ঘটনার কথা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির এক সপ্তাহ পর বিজিবির মাধ্যমে ফেলানীর মা পাঁচ ভাইবোন নিজ গ্রামে এসে ফেলানীর কবরের পাশে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ফেলানীর মা বলেন, ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায় মেয়ে ফেলানীকে নববধূর সাজে সাজিয়ে নিজের অলংকার পরিয়ে দিয়েছিলাম। দোয়াও করেছিলাম বিয়ের পর জীবন যেন সুখী হয়। কিন্তু বাড়ি পর্যন্ত আসতে পারেনি ফেলানী। সংসারের বড় মেয়ে ছিল সে। অভাবী সংসার হলেও মায়া মমতার কমতি ছিলনা। এখনো মাঝে-মধ্যেই ‘ফেলানী’র বাড়িতে ভাসে কান্নার রোল। কেমন আছে ফেলানীর পরিবার: নুর-ইসলাম বলেন, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া টাকায় কিছু জমি বন্ধক নিয়ে তাতে কৃষি কাজ করে কোন রকমে চলছি। ডিসি স্যারের দেয়া দোকানটি বন্ধ হয়ে গেছে। পুঁজি নেই তাই আবারও শুরু করতে পারছিনা। মা ও ছোট ভাইবোনদের সময় কাটে ফেলানীর স্মৃতি আওড়ায়ে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied