আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৯ মার্চ ২০২৪ ● ৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: রংপুরের আলু যাচ্ছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে       গ্রাহকের ৫০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও পোস্টমাস্টার!       চার ঘণ্টা পর উত্তরবঙ্গের সাথে ঢাকার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক       ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন       রংপুরে মিস্টি ও সেমাই কারখানায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা      

 width=
 

বিশেষ প্রতিবেদনঃ আর কত ফেলানীর রক্তে রক্তাক্ত হবে কাঁটাতার ?

সোমবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৩, সকাল ০৮:১৫

ফেলানী, কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা কলোনিটারী গ্রামের নুর ইসলামের কিশোরী কন্যা। অভাবী এই কিশোরীর নাম হয়তো কাররই জানার কথা ছিল না। জীবিত ফেলানী কে মানুষ না জানলেও কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর লাশ কাঁপিয়ে দিয়েছে সারাদেশের মানুষের হৃদয়। দেশ- বিদেশের মিডিয়ায় শিরোনাম হতে দেখা গেছে তাকে। বিশ্ব জুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে। সেদিনের সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শুধু ফেলানির পরিবারকে নয়, বিশ্ব বিবেককে আজো কাঁদায়।

গত ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখ শুক্রবার ভোর বেলা ভারতের আসাম রাজ্যের বনগাঁও গ্রাম থেকে চোরাই পথে অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ভারতের-১৫১ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন চৌধুরী হাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে আন্তর্জাতিক পিলার নম্বর ৯৪৭ এর ৩ ও ৪ নম্বর সাব পিলারের পাশে নির্মমভাবে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। গুলিবিদ্ধ ফেলানীর লাশ প্রায় ৪ ঘণ্টা কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকার পর বিএসএফ লাশ নামিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। পরে ৩০ ঘণ্টা পর তার লাশ বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে।

ফেলানীর মৃত্যুর পর দেশি-বিদেশি গণ-মাধ্যমে ঝড় তোলে। কুড়িগ্রামে ছুটে আসেন তখনকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস ছোবহান শিকদার, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকারসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে ফুলের তোরা হাতে ছুটে যেতে দেখাগেছে ফেলানীর কবরের কাছে। ফেলানীর মৃত্যুর পর সরকারের পক্ষ থেকে ফেলানীর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকার সাধুবাদ পেতে পারে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এটাও সত্যি যে, ফেলানীর পরিবারের কাছে ফেলানীকে হারানোর কষ্ট কিছুতেই লাঘব হবার নয়।

যারা অবৈধ পথে সীমান্ত পার হবার চেষ্টা করে তাদের শাস্তি হোক এটা আমরা সবাই চাই। তাই বলে পশু পাখির মত নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা কেও মেনে নিতে পারে না। এটা কোন সভ্য সমাজের সংস্কৃতি হতে পারে না। ফেলানী তো চোর কিংবা সন্ত্রাসী নয়, তাকে এই অবৈধ পথে যাতায়াত করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা যেত, গ্রেফতার করে প্রচলিত আইনে শাস্তি দেয়া যেত। কিন্তু গুলি ছুড়ে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে দেয়া হলো কেন ? কোন সিন্ধান্তে ? কোন আইনে ? সে আইনে তো পাচারকারী ব্যবসায়ী ও দালালরা মরে না ?

১৯৪৭ সালে রক্ত দিয়ে এই সংসার ভাগ হয়েছিল, রক্ত দিয়েই সেই ভাগ রক্ষিত হচ্ছে। কাঁটাতার আছে কিন্তু নেই মানবিকতা। বর্তমান আ’লীগ সরকারকে ভারত বান্ধব সরকার মনে করা হয়। তাই এই সরকারের সময়ই যেন সীমান্তে বিএসএফ এর গুলি চালানোর মহোৎসব বন্ধ করার কার্যত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শুধু মুখের আশ্বাস নয়, সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধের কার্যত ব্যবস্থা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। যতবার বিএসএফের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, তারা সব সময় বলেছে, এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। বছর খানেক আগে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়, এরপর আর গুলির ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু ওই দিনই গুলি ছুড়েছে বিএসএফ। তারপরও বারবার গুলি ছুড়েছে।  আমরা প্রতিবেশিসুলভ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলি কিন্তু উদার মনোভাবাপন্ন হতে পারি না। ফেলানী হত্যা আমাদের কি সেই শিক্ষাটা দেবে না ? আমরা আর কোন ফেলানীর লাশ দেখতে চাই না। আর কত ফেলানীর রক্তে রক্তাক্ত হবে কাঁটাতার ?

মন্তব্য করুন


 

Link copied