সূত্র মতে, রায় পরবর্তি সহিংসতা ঠেকাতে সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্তক অবস্থান থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত শক্ত- এমন সব জেলায় বড় ধরনের সহিংসতার আশ্রয় নিতে পারে তারা। হাইকমান্ডের নির্দেশে এবার তারা বেশি শক্তি দেখাতে চাইছে। জামায়াত-শিবিরের গোপন পরিকল্পনা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা।
সম্প্রতি সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমেদ, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। বৈঠকে জামায়াতের শীর্ষ এ দুই নেতার রায় ঘোষণার পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কিত আগাম গোয়েন্দা তথ্য এবং করণীয় নিয়ে আলোচনা শেষে কিছু জরুরি সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- মহানগর ও জেলার সংশ্লিষ্ট থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো, জামিন পাওয়া দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডারদের তালিকা চূড়ান্ত করা, রায়ের আগের দিন থেকে পরবর্তী ১৫ দিন কঠোর নিরাপত্তা বলবৎ রাখা, শিবিরের আত্মঘাতী স্কোয়াডকে চিহ্নিত করা, পুলিশের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অগ্রগতি, আসামিদের অবস্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কারাগার থেকে জামিন নেওয়া জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের পরবর্তী কার্যক্রম পরীক্ষা করা হচ্ছে। কারোর বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাঈদী ও নিজামীর রায়-পরবর্তী সব পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, জামায়াত-শিবির প্রভাবিত সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেটসহ ৩৪টি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ও মেট্রোপলিটন এলাকার কমিশনারদের কাছে করণীয় সম্পর্কিত একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, 'চিহ্নিত জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকা, প্রয়োজনে বিজিবি মোতায়েন ও টহল জোরদার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, সাক্ষী, ভিভিআইপি ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, হিযবুত তাহ্রীর, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতায় যাতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না চালায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা, পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আজমি, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে আবদুল মোমেন নিজামি, মীর কাসেমের ছেলে আরমান বিন কাসেম, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ও রফিক সাঈদীর কর্মকাণ্ড এবং গতিবিধি কঠোর গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখতে হবে।'
২৩ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
গত ১০ থেকে ১২ই মার্চ পর্যন্ত প্রসিকিউশনের পক্ষে মোহাম্মদ আলী, তুরিন আফরোজ ও সৈয়দ হায়দার আলী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এরপর আসামিপক্ষে মিজানুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম যুক্তি উপস্থাপন করেন ১৩ই মার্চ থেকে। এ নিয়ে জামায়াত নেতা নিজামীর মামলায় দুইবার যুক্তি উপস্থাপন করা হলো। গত ২০শে নভেম্বর এ মামলায় যুক্তি উপস্থাপন শেষে যে কোন দিন রায় দেয়া হবে মর্মে (সিএভি) অপেক্ষমাণ রেখে দেন আদালত। পরে গত ৩১শে ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির অবসরে গেলে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণই থেকে যায়। ২৪শে ফেব্রুয়ারির বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। এরপর ২৬শে ফেব্রুয়ারি নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল-১এ নিজামীর মামলায় পুনরায় যুক্তি উপস্থাপন শুরুর নির্দেশ দেন। বিডি২৪লাইভ ডটকম