আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর      

 width=
 

ছোটগল্প : রক্তাক্ত ভালোবাসা

বুধবার, ২১ মে ২০১৪, বিকাল ০৭:১৩

রিপনচন্দ্র মল্লিক

আমি কি কোনো ভুল করেছি? নাকি করিনি? যদি ভুল না-ই করে থাকি, তবে কেন এমন হলো, এমন তো কখনো হওয়ার কথা ছিল না। হঠাৎ করে যে এমন একটি কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলব, সেটা কখনো আমার মাথায় ছিল না।  ইচ্ছে ছিল, ওকে প্রচণ্ড রকমের কষ্ট দেব, যেন কখনো আর এমন কাজ সে না করে। কিন্তু এ আমি কী কাজ করে বসেছি। আমার যে কিছুই মাথায় আসছে না। আমি জানি, রানা আমাকে অনেক ভালোবাসে, সেটা সে নানা রকমভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করত। তবে অনেক সময় আমার কাছে সেটা কখনোই ভালো লাগত না। কেন লাগত না, সেটা আমি বুঝতে পারিনি, আর কখনো বোঝার চেষ্টা করে দেখার আগ্রহ হয়নি। আরে বাবা, ভালোবাসা কি এখানে-সেখানে যখন যেখানে দেখাতে হবে। আমি খুব রক্ষণশীল মেয়ে। আমাদের পরিবার পুরোই রক্ষণশীল। যদিও আমি অনেক ফাঁকি দিয়ে রানার জন্য পরিবারিক প্রথা ভেঙে ফেলেছি। এই যেমন হঠাৎ করে রানা ফোন করে বলবে, ‘রুনা, আমি সংসদ ভবনের পেছনে যাচ্ছি, তুমি চলে আসো।’ আমি বলি, ‘আমি এখন যেতে পারব না। আমার হাতে অনেক কাজ।’ রানা খুব রেগে যেত। আমি ওকে রাগানোর জন্য ইচ্ছে করেই এ কথা বলতাম। ওপাশ থেকে রানা বলে উঠত, ‘আমি সেকেন্ড মেপে মেপে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত থাকব, এরপর যদি তোমার ছায়া আমার ছায়ার পাশে এসে না দাঁড়ায়, তাহলে কিন্তু...।’ আমি আর কথা বাড়াতে দিতে চাইতাম না। আমি কখনো কখনো রানার এমন ডাকে অন্ধের মতো চলে এসেছি। তবে কি আমিও রানাকে আস্তে আস্তে পাগলের মতোই ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কী জানি, হয়তো তা-ই হবে। আমি রানার মোহে অন্ধ ছিলাম। একসময় পেছনে ফিরে দেখি, আমি ‘ওর’ কাছে নিজের সমস্ত কিছু বিলিয়ে দিয়েছি। রানার কাছে নিজেকে লুকিয়ে রাখার মতো আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। দুই বছর ধরে রানার সঙ্গে আমার পরিচয়। যে বছর কোটালীপাড়া থেকে ইডেন কলেজে ভর্তি হতে এসেছিলাম, সে বছরই রানার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ঢাকা কলেজ থেকে এ বছরই ওর মাস্টার্স পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। আমি ওর মোহগ্রস্ততায় অন্ধ ছিলাম। শীলাই আমার অন্ধ চোখ খুলে দিয়েছে। শীলা আমার বান্ধবী। হোস্টেলে একই রুমে থাকি। আমি তো শুরুতে শীলার কোনো কথা পাত্তাই দিতে চাইনি। কিন্তু মনের মধ্যে তবুও শীলার কথাগুলো বড়শির মতো বিঁধে ছিল। তাই একদিন রানার পিছু নিলাম। শীলার কথাগুলো একদিন নিজের চোখে দেখার চেষ্টা করলাম। আমি দেখলাম, রানা সুমনাকে নিয়ে ট্যাক্সিতে করে কোথায় যেন যাচ্ছে। সুমনাকে নিয়ে ‘ওর’ তো কোথাও যাওয়ার কথা নয়। আমার আর কোনো কিছু বোঝার বাকি রইল না। আমি সরলরেখার মতো বুঝতে পারলাম, এই শহরে কেবল আমিই রানাকে ভালোবাসি না। আমি ছাড়াও রানাকে ভালোবাসার আরো মানুষ আছে। আমি বুঝতে পারছি, রানার সামনে আমার যেমন লুকিয়ে রাখার মতো কোনো কিছু নেই, হয়তো এত দিনে আমার মতো করে সুমনারও লুকিয়ে রাখার কোনো কিছু বাকি রাখেনি। সেদিন স্পষ্ট ভাবেই আমি বুঝতে পারলাম, ‘শীলা আমাকে একটুকুও মিথ্যে কথা বলেনি। রানা শুধু আমাকেই ভালোবাসে না। সে আমার মতো আরো অনেককেই হয়তো ভালোবাসে।’ হুট করে মাথায় একটা জেদ চেপে বসল। অনেকটা নিজেকে নিজেই সাক্ষী রেখে প্রতিজ্ঞাই করে বসলাম, যেভাবেই হোক রানাকে একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে। কিন্তু সেটা যে এরকম হয়ে যাবে, সেটা কখনো ভাবিনি। হঠাৎ করে কী থেকে যে কী হয়ে গেল। মাথায় প্রচণ্ড আগুন উঠে গিয়েছিল। এমন দাউ দাউ রাগের আগুন আমার আর কোনোদিন মাথায় ওঠেনি। রাতে ফোন করে রানাকে বললাম, ‘কত দিন হলো তোমার ফ্ল্যাটে আসি না। সকালে এসে সারা দিন তোমার ফ্ল্যাটে থাকব।’ রানা বলেছিল, ‘খুব ভালো কথা। তাহলে সকালেই আমি বাজার করে নিয়ে আসব। তুমি রান্না করে খাওয়াবে। স্বামীকে যেমন স্ত্রী আদর করে খাওয়ায় তুমিও আমাকে খাওয়াবে।’

আমি বলেছি, ‘ঠিক আছে শুধু রান্না করেই খাওয়াব। আর কোনো কিছু খেতে চেয়ো না।’

‘না, না, বাবা, থাক। তোমার রান্না করতে হবে না। হোটেল থেকেই সবকিছু নিয়ে আসব। তুমি আমাকে অন্য কিছুই খাইয়ে যেয়ো।’ আজ পরিকল্পনা করেই রানার রুমে এসেছি। ওকে কঠিন করে শাস্তি দেওয়ার জন্য। চিন্তা ছিল, রানাকে এমন শাস্তি দেব, যেন আর কোনো দিন আমাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসতে না পারে। কিন্তু ধারালো বঁটি দিয়ে এভাবে ওর গলাটা কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলব, সেটা ভাবিনি। রানা অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে, এ আমার সহ্য হচ্ছিল না। আমি নিজের হাতেই আমার ভালোবাসাকে খুন করে ফেলেছি। রানার জন্য এখন খুব কষ্ট লাগছে। আমাকে হয়তো একটুকুও সে ভালোবাসত না। কিন্তু আমি যে রানাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতাম। আমার হাতে এখনো লেগে আছে রানার রক্ত। পুরো হাতটি লাল টকটকে রক্তে মাখানো। রানাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলায় বুকটা ভীষণ ভারী হয়ে উঠছে। এভাবে রানাকে হারিয়ে ফেলায় বুকের মধ্যে আমার পুরো আকাশের সমান শূন্যতার মতো লাগছে। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না। মনে হচ্ছে, রানাকে হারানোয় আমার বুক ফেটে এখনই চোখ জুড়ে প্লাবনের মতো কান্নার ঢেউ উঠবে। আমি তো রানাকে উচিত শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু এভাবে হারাতে চাইনি। লেখক : গল্পকার ও সাংবাদিক, মাদারীপুর।

মন্তব্য করুন


 

Link copied