আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

শামীম ওসমান-নূর হোসেনের কথোপকথনের কে সেই ‘গৌরদা’?

রবিবার, ২৫ মে ২০১৪, রাত ১০:৩৯

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সরকারি দলের সাংসদ শামীম ওসমান। তদন্তসংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের সূত্রের বরাতে এমন রিপোর্ট করেছিল প্রথমআলো। আর ঐ রিপোর্টে মূলে ছিল নূর হোসেনের ভারতে পালিয়ে যাবার আগে শামীম ওসমান ও নূর হোসেনের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড। এর পর ঐ অডিও রেকর্ড মিডিয়ায় প্রকাশ হয়ে পড়ে। গােয়েন্দা সংস্থার রেকর্ড করা শামীম ওসমান-নূর হােসনের ওই ফােনালাপ নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে শুক্রবার বিকেলেই শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে তার অবস্থান তুলে ধরেন। শামীম ওসমানকে ফোন করেন নূর হোসেন। কথোপকথনে শামীম ওসমান বলেন, ‘খবরটা পৌঁছাই দিছিলাম, পাইছিলা?’ জবাবে নূর হোসেন বলেন, ‘পাইছি, ভাই।’ শামীম ওসমান বলেন, ‘তুমি অত চিন্তা করো না।’ নূর হোসেন এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে শামীম ওসমানকে বলেন, ‘ভাই, আমি লেখাপড়া করিনি। আমার অনেক ভুল আছে। আপনি আমার বাপ লাগেন। আপনারে আমি অনেক ভালোবাসি, ভাই। আপনি আমারে একটু যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।’ জবাবে শামীম ওসমান বলেন, ‘এখন আর কোনো সমস্যা হবে না।’ শামীম ওসমান ‘গৌর দা’ বলে এক লোকের সঙ্গে নূর হোসেনকে দেখা করতে বলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে এই ‘গৌর দা’? এ নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করে বাংলাট্রিবিউন। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বের হয়েছে বেশ কিছু তথ্য। অডিওর কথায় এটা পরিস্কার যে, 'গৌর' নামে একজন নূর হােসেনের ‌‘মুশকিল আসান‘ তথা নিরাপদে দেশত্যাগের কাণ্ডারি হতে পারেন। অনুসন্ধানে প্রথমেই যােগাযােগ করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার বিভিন্ন স্তরে। তবে প্রায় সবাই বলেন, গৌরদা সম্পর্কে কােনও তথ্য তাদের কাছে নেই। নারায়ণগঞ্জ পুলিশের বিভিন্ন সূত্রও একই কথা জানায়। এদিকে র‌্যাব আগেই জানিয়েছে নূর হােসেন ভারতে পালিয়ে গেছে এবং কিছু কিছু মিডিয়া এ ধরনের খবর দিয়েছে যে, যশাের সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে সে। তাকে সীমান্ত পার করে দিয়েছে বাদশা ও মশিউর নামে যশােরের দুজন ফেনসিডিল চােরাচালানি। তাই এ ব্যাপারে প্রায় সবাই নিশ্চিত, তার অবস্থান এখন পশ্চিমবঙ্গে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে ‘গৌর দা‘র খোঁজে যােগাযােগ করা হয় যশােরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্তরে। তারা বলেন, এই নাম তারা আগে শােনেননি বা “এই বিষয়ে আমরা কিছু জানি না” ধরনের কথা। এ বিষয়ে যশাের ডিবি ওসি মনিরুজ্জামানকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “অডিও টেপটির কথার্বাতায় ‘গৌর দা‘র বিষয়টি অস্পষ্ট। আমরা গৌর সর্ম্পকে জানিও না, শুনিও নাই কিছু।” তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশাের পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বর্পূণ প্রসঙ্গে পরিণত হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুতর একটি বিষয়। তাই সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে নূর হােসনের অবস্থান আর ‘গৌর দা‘র পরিচয় উদঘাটনে।” শিগগিরই বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার হওয়া যাবে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে জানতে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের সেলফােনে যােগাযােগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, নিহত প্যানেল মেয়র নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, র‌্যাবই নূর হোসেনকে দেশ থেকে নিরাপদে বের করে দিয়েছে। তবে এলিট ফোর্স র‌্যাব এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ পটভূমিতে চোরাচালানি, সমাজবিরোধী, বিজিবি-বিএসএফের বিভিন্ন সোর্স মারফত তত্ত্ব-তালাশে ‘গৌর দা‘ সম্পর্কে অনুসন্ধানে ৩ জন সম্ভাব্য গৌরের কথা জানা যায় যারা সীমান্ত পথে অবৈধভাবে মানুষ পাচার করে বা তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় দিতে পারে।

গৌর সেন এদের একজন হচ্ছেন যশোর শহরের টিবি ক্লিনিক রোডের সাবেক বাসিন্দা গৌর সেন। তার বাবার নাম জীবন সেন (জীবন মহুরী)। ১৯৮০ সালের দিলে ৮ম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে এই গৌর সেনএকই শহরের ষষ্টীতলা পাড়ার অপর সন্ত্রাসী আলমাসকে হত্যার চেষ্টা করেন। গত ১৯৮৪ সালে ওই মামলায় স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। প্রায় ১৪ বছর সাজা খেটে ৯৪ বা ৯৫ সালে মুক্তি পান গৌর সেন। জেলখানা থেকে ছাড়া পাবার পর ফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন গৌর। এসময় যশোরের সন্ত্রাসী বাহিনী চাঁনপাড়ার বাচ্চু-রশীদ বাহিনীতে যোগ দেন। এ বাহিনীর সঙ্গে থাকাকালে এক পর্যায়ে বাহিনীপ্রধান বাচ্চুর ভাই রশীদকে শহরতলীর মুড়লীতে দিনে-দুপুরে খুন করে সন্ত্রাসজগতে আলােড়ন সৃষ্টি করেন। তবে পরে বিরোধী পক্ষের হাতে খুন হওয়ার ভয়ে পালিয়ে যান। ভারতের বনগাঁয়ে গিয়ে গৌর সেন যােগ দেন সেখানকার কুখ্যাত সমাজবিরোধী কালার (কালা সাহা) সঙ্গে। তার সঙ্গে সিন্ডিকেট করে চােরাচালান তথা সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পমরেন। ২০০০ সালের দিকে কালার প্রতিপক্ষ অপর সমাজবিরোধী স্বপন সাহার বাহিনীর হাতে খুন হয় কালা। সে বছরই গৌর প্রতিশোধ হিসেবে স্বপন সাহার এক বিশ্বস্ত সহচরকে খুন করেন এবং বনগাঁ ত্যাগ করেন। গৌর সেনের সর্বশেষ আস্তানা বনগাঁয়ের পাশের চাকদহে।

গৌর বিশ্বাস দ্বিতীয় সম্ভাব্য গৌর দা হচ্ছেন গৌর বিশ্বাস। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁর ঢাকাপাড়ার বাসিন্দা। একজন ভয়াবহ অপরাধী আর পেশাদার খুনি হিসেবে কুখ্যাত। তবে বছর দশেক আগে বনগাঁও ছেড়ে শিলিগুড়ি চলে যান। সেখানে একটি সন্ত্রাসী দল গড়েন। বেপরােয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে অল্পদিনেই পুলিশের ‘ওয়ান্টেড‘ তালিকায় নাম ওঠে। এরপর শিলিগুড়ি ছেড়ে ফের কলকাতা ফিরে আসেন। তবে এরপর সাম্প্রতিক বছরগুলােতে তার ব্যাপারে কলকাতা পুলিশ বা বিএসএফ‘র কাছে কােনও তথ্য নেই বলে জানান বনগাঁওয়ের একটি সূত্র।

গৌর দত্ত তৃতীয় জন হচ্ছেন গৌর দত্ত। লাকড়ি (জ্বালানি কাঠ) ব্যবসায় জীবন শুরু করলেও এখন তিনি কােটি কােটি রুপির মালিক, থাকেন বনগাঁওয়ের রেলবাজার এলাকায়। গৌর দত্তের বয়স প্রায় ৬০। গায়ের রং ফর্সা। উচ্চতা ৫ ফুট ৮/৯ ইঞ্চি। মাথায় টাক। বনগাঁ, রেল বাজারের দিকে একমাত্র শ্বেতপাথরে তৈরি বাড়িটি তার। এখন কাঠের (লগ) ব্যবসা করেন। এক সময়ের সামান্য লাকড়ি ব্যবসায়ীর হঠাৎ করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া বা তার আলিশান বাড়িটি কী করে হলো- তা নিয়ে লোকমুখে নানা কথা শোনা যায়। জানা গেছে, গৌর দত্ত অতি মূল্যবান এবং অনেক ক্ষেত্রেই দুষ্প্রাপ্য চন্দন কাঠের ব্যবসাও করেন! নূর হোসেন ইস্যুতে যশোর, কুষ্টিয়া এবং বনগাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রের ধারণা, এই ব্যক্তিই সেই গৌর দা- যার কথা শামীম ওসমান ফোনে বলেছিলেন নূর হোসেনকে!

আরও একজন গৌর! এদিকে শনিবার নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন আলোচনায় আড্ডায় আরও একজন ‘গৌর দা‘র অস্তিত্বের কথা শোনা যায়। তার নাম গৌরাঙ্গ দাস এবং তিনি উচ্চ আদালতের একজন আইনজীবী বলে শোনা যায়। তবে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জের একজন আইনজীবী বলেন, এটা নূর হোসেন পক্ষের লোকদের ছড়ানো গুজব, আসল ‘গৌর দা‘কে আড়াল এবং একই সঙ্গে নূর হোসেনের অবস্থান লুুকোতেই এই গুজব ছড়ানো হয়েছে। এখন শুধু শামীম ওসমান আর নূর হোসেনই রহস্যময় এই ‘গৌর দা‘ সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied