তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রাম থেকে: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে অর্থের বিনিময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশ-প্রহরী নিয়োগের অভিযোগ উঠলে স্থানীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ১৬ জনের নিয়োগ বাতিল করে পূণঃরায় পরীক্ষা গ্রহনের নির্ধেশ দিয়েছে।
এদিকে, নিয়োগ পাওয়া নৈশ প্রহরীর নিয়োগপত্র বাতিল করায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় টাকার বিনিময়ে চাকুরি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে ১৬ টি পরিবার।
জানা গেছে, জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ৩ মাস আগে দপ্তরী কাম নৈশ-প্রহরী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর চাকুরী প্রার্থীরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কমিটি যাছাই-বাছাই শেষে শিক্ষা অফিসারের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে। মৌখিক পরীক্ষা গ্রহনের আগেই সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের সভাপতি, সহকারি শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষক তাদের পছন্দের প্রার্থীদের কাছ থেকে ৪ থেকে ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন। টাক গ্রহনের আগে জানানো হয় এ টাকা এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসার এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে ভাগ করে দেয়া হবে। এরপরই আবেদনকারীদের মাঝ থেকে চুড়ান্ত তালিকা (মেধাক্রম অনুসারে) শিক্ষা অফিসে জমা দেন। শিক্ষা অফিসার ঐ তালিকা গত ১৯ মার্চ চুড়ান্ত সুপারিশের জন্য ইএনও’র দপ্তরে প্রেরণ করলে ঐদিনই ইউএনও ১৬টি বিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র পুন:পর্যালোচনার জন্য ফেরৎ পাঠান। উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার অধিকারী বিষয়টি সহকারী শিক্ষা অফিসার মামুনর রশিদকে পুণরায় পর্যালোচনার দায়িত্ব দেন। দ্বিতীয় বার পর্যালোচনার পর সহকারী শিক্ষা অফিসার গত ২৭ মার্চ ইউএনও’র দপ্তরে পূণরায় ফাইল প্রেরণ করেন। কিন্তু ঐ ফাইলে সংশ্লিষ্ট এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সুপারিশ না থাকায় ইউএনও আবারও স্থানীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান’র মতামতসহ ফাইল প্রেরণ করার পরামর্শ দেন। এভাবে দুইমাস অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারনে এমপি ও চেয়ারম্যানের কোন মতামত গ্রহন করেনি শিক্ষা অফিস। এ অবস্থায় সরকারি নিয়োগ পরিপত্রের ৭(৪) ধারার বিধান মোতাবেক নিয়োগ কমিটি তাদের ক্ষমতাবলে পছন্দের প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর দেখিয়ে দপ্তরী কাম নৈশ-প্রহরী হিসেবে নিয়োগ দেন। নিয়োগপ্রাপ্তরা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে প্রায় একমাস ধরে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এদিকে, এমপি’র নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন গত ২৮ মে ১৬টি বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ-প্রহরী পদের নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহনের অফিস আদেশ জারি করেন। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়। অন্যদিকে, শেষ সম্বল বিক্রি করে টাকার বিনিময়ে পাওয়া চাকুরীর নিয়োগ বাতিল হওয়ার খবর পেয়ে ১৬ টি পরিবারের মধ্যে চরম উৎকন্ঠা ও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাননীয় সংসদ সদস্য মহোদয় ও উপজেলা চেয়ারম্যান পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার পরমর্শ প্রদান করেন। তাই সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুনভাবে পরীক্ষা গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।