এ বনকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলেছে এর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নর্ত নদী। যদিও নদীটি মরা খাল ছাড়া আর কিছু না। তবে নদীটি খনন করে নদীর মাঝামাঝি একটি সেতু তৈরী করলে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি ছাড়াও পর্যটকদের আরও দৃষ্টি কেড়ে নিবে।
নদীর দু’পাড় দিয়ে যাবার সময় দেখতে পাবেন দুপাশে বিভিন্ন প্রজাতির বাহারী গাছ। শাল বনের ভিতরের আগর ও বাঁশ-বেত বাগানও সকলের নিকট দর্শনীয়ও বটে। বনের গভীরে যেতে চোখে পড়বে প্রাচীন পত্রঝরা সিংড়ার বনাঞ্চল শালবন। তবে শাল ছাড়াও জারুল, তরুল, শিলকড়ই, শিমুল, মিনজিরি, সেগুন, গামার, আকাশমনি, ঘোড়ানিম, সোনালু, গুটিজাম, হরতকি, বয়রা,আমলকি. এবং বিভিন্ন ধরনের নাম না জানা উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম গাছ রয়েছে। এ ছাড়া খরগোশ, শেয়াল, সাপ, বেজি এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও পতঙ্গ দেখতে পাওয়া যাবে এই বনে।
প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা, বিদ্যুৎ-পানি ও পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেই সিংড়া ফরেস্ট হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় এক পর্যটন কেন্দ্র। আর এই সিংড়া ফরেস্ট হতে পারে সরকারের রাজস্ব আয়ের উৎস। তবে এর একটি উন্নয়নমূলক প্রকল্প এখনও লাল ফিতায় বন্দি রয়েছে।
ব্যস্ততম শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে নিরিবিলি পরিবেশে মায়াবী হাতছানীর এক অনুপম দৃশ্য মহিমান্ধিত দিনাজপুরের সিংড়া ফরেস্ট ঠিক যেন স্বর্গের মত। তাই এই মৌসুমে প্রকৃতি প্রেমিকদের আনা-গোনাও তাই বেড়ে যায়।
এর অবস্থান দিনাজপুর জেলা শহর থেকে সড়ক পথে ৪০ কিঃমিঃ উত্তরে বীরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে অবস্থিত। বীরগঞ্জ শহর থেকে এর দুরত্ব প্রায় ৫ কিঃমিঃ।
দিনাজপুর জেলা সদর থেকে বীরগঞ্জ হয়ে সড়ক পথে এখানে আসা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ চিত্রবিনোদনের জন্য বা পিকনিক করার জন্য এখানে আসে। নয়ন জুড়ানো এই দেশী পর্যটকদের ভীড় লক্ষ্য করা যায় এ মাসে। এ ছাড়া বছরের সব সময়েই পর্যটকরা আসে। ভ্রমণ পিপাসুদের থাকার জন্য রয়েছে ১টি ছোট পরিসরে রেস্ট হাউজ, যদিও এখনও আধুনিকতার ছোয়া বঞ্চিত। পিকনিক স্পট রয়েছে দুটি। বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ পিকনিক করার জন্য বিশেষ করে শীত মৌসুমে বেশি জনসমাগম ঘটে।
যেন চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এ সময় হয়ত মনমুগ্ধ পরিবেশে মনে পড়বে সেই পুরনো দিনের গান।
বন বিভাগ জানায়, গত ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর বীরগঞ্জের ভোগনগর ইউপির ৮৫৫.৫০ একর ভূমির উপর অবস্থিত এই বনের ৭৫৫.৫০ একর জমিকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষনা করেছে বনবিভাগ। সিংড়া মৌজার নামানুষারে বনটির নামকরন হয়েছে সিংড়া ফরেস্ট বলে অনেকেই জানান। ১৮৮৫ সালে বনটি অধিভুক্ত করা হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বনবিভাগের অধীন বলে গেজেট প্রকাশ হয়।
এই গহীন অরন্য ধীরে ধীরে লোকালয়ে পরিণত হতে থাকে। গাছ চুরিসহ সংরক্ষন অভাবে গাছে-গাছালী কমে যায়। এর পরেই নতুন করে বন বিভাগ সিংড়া শাল বনের জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এ ব্যাপারে বনবিভাগের বনবিট কর্মকর্তা মোঃ হারুনুর রশিদ জানান, সিংড়া ফরেস্টকে আরও গহীন অরন্যে পরিনত করতে গত জুন থেকে ৯০হাজার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বনবিভাগ। এরই মধ্যে ২০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া এই বনের চার পাশে আদিবাসীদের নিয়ে ৯টি বনরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই জাতীয় উদ্যানের উন্নয়নে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই বনের মনোরম প্রাকৃতিক দেখতে আসা দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রতি দিন গড়ে ১৮০-২০০ জন। বিট কর্মকর্তা জানান, রাবার ড্যামের মাধ্যেমে বারোমাস নর্ত নদীকে সজীব রাখা, একটি টাওয়ার স্থাপন, শিশু পার্ক তৈরী, দর্শনার্থীর বসার চেয়ার তৈরী ও সুন্দর একটি ফটক নির্মাণসহ কিছু সংস্কারমূলক কাজ শুরু হলেই এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অমূলক হবেনা।
দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়লে রাজস্ব্য আয়ের পাশাপাশি বনের অধিবাসীদের আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃস্টি হবে এবং সিংড়া শালবন ফিরে পাবে তার অতীত ইতিহাস। আরডিআরএস এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষন বলি অথবা বন রক্ষাই বলি এর জন্য বনের চারপাশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সক্রিয় ভূমিকার বিকল্প নাই পাশাপাশি বনবিভাগের বন্ধুসূলভ আচরণ।
সিংড়া শাল বনের হারানো জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার জন্য বন থেকে শালের ডালপাতা সংগ্রহকারী ও সকল জনসাধারণের মধো গণসচেতনতা বাড়ানোসহ বন নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষে বিকল্প আয়ের অংশ হিসাবে আরডিআরএস বাংলাদেশ ৮ লক্ষ টাকার ঘুর্ণয়মান তহবিল অনুদান হিসাবে দিয়েছে।