হিরা লাল এখন ভিক্ষুকঃ তার জীবিকা চলে ভিক্ষা করার অর্থ দিয়ে। বয়সের ভারে শরীর ভেঙে গেছে। অন্য কোনও কাজও করতে পারেন না। তাই ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া ভাগ্যে কিছু জুটলো না। বর্তমানে দিন কাটছে বিনা চিকিৎসায় অর্ধাহারে -অনাহারে।
সুস্থ অবস্থায় মধ্য বয়সে হিরা লাল দিন মজুরি করে পরিবার নিয়ে অভাবের সংসার চালিয়ে ছেন। বাড়ি ভিটা ছাড়া কোন জায়গা নেই। নদীতে পাথর তুলে কখনও বা দিন মজুরি করে সংসার চালাতেন তিনি। এখন তার কেউ নেই। বার্ধক্যসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে কোন কাজ করতে না পেরে ভিক্ষা করে জীবন চালান তিনি। পাশের প্রতিবেশিরা বলেন, গত কয়েকবছর এই হিরা লাল ভিক্ষা করে জীবিকা চালায়। শুনেছি এই সরকার বয়স্ক দের জন্য ভাতা সহ অনেক কিছু করছেন। কিন্তু হিরা লাল এর কোন খোঁজ নিতে কেউ আসে না। অনেকে আশ্বাস দিলেও কোন লাভ হয় নি।
স্বাধীনতনা অর্জনের ৪৩ বছর পূর্তি করেছে বাংলাদেশ। সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির বাংলা এখন ষোল কোটি। পাল্টে গেছে বাংলাদেশের চিত্র তবুও পাল্টায়নি ভাগ্যহত হিরা লাল (১০০) এর ভাগ্য। এখন সুধু অর্ধাহারে-অনাহারে কিংবা অবহেলায় মৃত্যুর দিন গুনতে হচেছ ।
সরেজমিনে আটোয়ারী উপজেলার ধামন ইউনিয়নের লতিপাড়া গ্রামের পুকুর পাড়ে ছবি তোলার সময় হঠাৎ এক বৃদ্ধা চোখে পড়ে। দেখছি বৃদ্ধা খুব কষ্ট করে আমাদের দিকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে আর দূর থেকে কি জানি ইশারা করছে। আমরা কাছে গেলে তিনি খুব আস্তে করে বল্লেন বাবা আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে “আমাকে দুটো টাকা দিবে”।
এর পর শুরু হয় তার সাথে কথা ও তার সমন্ধে জানা-অজানা অনেক তথ্য জানা। আমরা জানতে পারি সে উপজেলার লতিপাড়া গ্রামের সর্গীয় আলোক চন্দ্র বর্মন এর পুত্র, হিরা লাল (১০০)। তার ছবি তোলার সময় গ্রামে লোকজন আমাদের দেখে ছুটে আসেন। জানাযায় আরো অনেক অজানা তথ্য।
হিরা লাল জানান, ১’শ বছর বয়সেও তার নাকি বয়স্ক ভাতা পাওয়ার বয়স হয়নি এবং এর পরেও যদি কার্ড করতে চাই তাহলে ৩ হাজার টাকা চেয়েছেন আ’লীগ নেতা মকাই ও ইউপি সদস্য করিম। এই দুই জনের নাম বলে অভিযোগ করেছেন। অনেক বার ছুটে গেছেন সরকারের সহায়তার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে। কিন্তু আজো পর্যন্ত কোন লাভ হয়নি।
এ বিষয়ে, ধামন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য করিমের কাছে বিষয়টি জানতে চায়লে তিনি জানান, গত বছর হিরা লালের ভাতা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সমস্যার জন্য হয় নি। এবার আমরা তার জন্য ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করছি।
কর্তৃপক্ষের একটু কি নজর পড়েনা ? কর্তৃপক্ষের কাছে একটাই প্রশ্ন এর মূল কারণ কি? না এর পেছনে কোন চক্র বসে সরকার থেকে বয়স্কদের ভাতা বা সহযোগীতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সে জীবনের শেষ মুহুর্তে সরকারের সহযোগীতার হাত থেকে পিছিয়ে আজ ভিক্ষুক। বয়স্কদের বয়স্ক ভাতা বা সরকার থেকে বিভিন্ন সহযোগীতা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু হিরা লাল আজ সহযোগীতা না পাওয়ায় কেন ভিক্ষুক? এ সমস্ত বয়স্কদের প্রতি সরকারের কোন সু-দৃষ্টি পড়বে কি? আমাদের জানা নেই।