আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

নীলফামারীতে শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস উদযাপন

বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০১৪, রাত ০৯:০২

চাইল্ড লেবার এলিমিনেশন এ্যাকশন নেটওয়ার্ক(ক্লিন) নীলফামারী জেলা কমিটির আয়োজনে সকালে বনার্ঢ্য র‌্যালি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিশু একাডেমী মিলনায়তনে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।

ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন(ইএসডিও) নীলফামারীর সহযোগীতায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাঃ নুরুন্নাহার বেগম।

ইএসডিও নীলফামারীর প্রকল্প সমন্বয়কারী আবু বক্কর সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ, ডেমক্রেসিওয়াচ নীলফামারীর এরিয়া ম্যানেজার কামাল হোসেন শাহ, নীলফামারী শ্রম কল্যান বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামীমা বেগম বক্তব্য রাখেন। শ্রমজীবী শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন উদযাপন কর্মসুচীতে।

প্রসঙ্গতঃ এখন ভয়ংকার পেশার নাম শিশু শ্রম। দিনে দিনে এই শ্রমের শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে, তারা অসহায় হচ্ছে কিন্তু প্রতিকারে কিছুই হচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন এনজিও সংস্থা, সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা এর বিরুদ্ধে আলাপ, আলোচনা, পরিসংখ্যান তুলে ধরলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রতিদিনই জীবন ধারণ আর দুবেলা আর দুমুঠো অন্নের জন্য তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতেই দ্বিধাবোধ করছে না। মূলত তাদের নিজেদের খাওয়া আর পরিবারের খাওয়ার জন্য শিশুরা লেখাপড়ার পরিবর্তে পেশার কঠিন আবর্তে জন্মের পরেই চলে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের একটি শ্রেণী তাদের ব্যবহার করে সুবিধা ভোগ করছে।সারা দেশে প্রায় ৪৫ লাখ শিশু নিষিদ্ধ শিশু শ্রমের শিকার। এদের সোনালী ভবিষ্যত অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। যে বয়সে তাদের খাতা কলম নিয়ে স্কুলে যাবার কথা ছিলো, ঠিক সেই বয়সে শুধুমাত্র দারির্দ্যের কারণে আজ ওরা শিশু শ্রমিক। গত চার বছরে এই শ্রমিক বেড়েছে ১০ লাখ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) উদ্যোগে ২০০২ সালের ১২ জুন পৃথিবীতে প্রথম বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ দেশকে এখনও শিশু শ্রমমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।

শিশু শ্রমের দিক থেকে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। দেশে তিন শতাধিক কাজে অন্তত ৭৪ লাখ শিশু নিয়োজিত। অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৯টি কাজে নিয়োজিত ১৩ লাখ শিশু।সরকারি হিসাবে, ৯৯ শতাংশের বেশি শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে। ঝরেপড়া শিশুদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন শ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

২০১১ সালের সরকারি একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রিপোর্টে দেখা যায়, শহর অঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শিশু শ্রমের প্রবণতা অনেক বেশি। শিশু শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১৫ লাখ শিশু শ্রমিক শহরে এবং ৬৪ লাখ রয়েছে গ্রামাঞ্চলে। এই শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ৪৫ লাখ শিশু শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত। ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রমে নিয়োজিত প্রায় ১৩ লাখ শিশু এক সপ্তাহে ১শ ৬৮ ঘণ্টার মধ্যে কাজ করছে প্রায় ৯০ ঘণ্টা।

বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং আইএলওর জরিপ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রয়েছে ৪৫ ধরনের। আর এর মধ্যে ৪১ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করছে শিশুরা। শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ৭৩ দশমিক ৫০ ভাগ পুরুষ শিশু এবং ২৬ দশমিক ৫০ ভাগ নারী শিশু। শিশু শ্রমিকের ৬ দশমিক ৭০ ভাগ আনুষ্ঠানিক খাতে এবং ৯৩ দশমিক ৭০ ভাগ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে মোটর ওয়ার্কসপে কাজ করা, ওয়েল্ডিং, গ্যাস কারখানা, বেলুন কারখানা, লেদ মেশিন, রিকশা চালানো, মাদক বাহক, বিড়ি শ্রমিক, বাস-ট্রাকের হেলপার, লেগুনার হেলপার, নির্মাণ শ্রমিক, গৃহ শিশু শ্রমিক, এমব্রয়ডারি, জাহাজ শিল্প, চিংড়ি হ্যাচারি, শুঁটকি তৈরি, লবণ কারখানা, বেডিং স্টোরের শ্রমিক, ইট ভাঙা, ইট ভাটা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, ট্যানারি এবং রঙ মিস্ত্রিসহ আরো বিভিন্ন ধরনের কাজ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর(বিবিএস) ২০০৮ সালের হিসেবে অনুযায়ী দেশে শূন্য থেকে ১৭ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যা ৬ কোটি ৭৭ লাখের বেশী। এদের মধ্যে প্রায় ৩৫ লাখ শিশু নানা ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত। মোট শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ১৩ লাখ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। ২০০৮ সালের হিসেবে থেকে ২০১২ সালের হিসেবে যে পার্থক্য তৈরি হয়েছে তাতে ¯পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সরকারি প্রকল্পগুলো তেমন একটা কাজে আসেনি। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ১০ লাখ। শুধু তাই নয় আগের চেয়ে নির্যাতনের মাত্রা কমেনি, বরং বেড়েছে। শিশু শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক কোন আইনের তোয়াক্কা করছে না কেউ। এমনকি মজুরি কম দিয়ে প্রতিনিয়তই তাদের ঠকাচ্ছে। সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদ উপেক্ষা করে শিশুদের দিয়ে জোর করে কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত শিশু শ্রমের দায়ে বাংলাদেশে একজনকে শাস্তি পেতে হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না।

শিশুর বয়স নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। কত বছর বয়স পর্যন্ত শিশু হিসেবে ধরা হবে তা সুনির্দিষ্ট একটি আইনে বলা নেই। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা(আইএলও) শিশু আইনের বিভিন্ন ধারায় কাজের ধরনের ক্ষেত্রে শিশুর বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ১৬ থেকে ১৮ বছরের শিশুরা এই কাজ করতে পারবে। ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশুরা হালকা পরিশ্রমের কাজ করতে পারবে।অন্য দিকে বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের শিশু আইনে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত একজনকে শিশু হিসেবে ধরা হয়েছে। আবার জাতীয় শিশু নীতিতে ১৪ বছর বয়সের কাউকে শিশু হিসেবে চিত্রিত করার বিধান দেওয়া আছে। ভিন্ন ভিন্ন বয়সের সুযোগ নিয়ে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। আইনে শূন্য থেকে ১২ বছর বয়স পর্যন্তশিশুদের সবধরনের শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ৫ বছর বয়সের শিশুকেও জোর করে নানা ধরনের কাজে নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে।

জানা গেছে, সরকার ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে আইএলওর ১৮২ সনদে স্বাক্ষর করেছে। আইন অনুযায়ী শিশু বিক্রি, পাচার, ভুমি দাসত্ব, বেশ্যাবৃত্তি, অশ¬ীল দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য শিশুর ব্যবহার, মাদক দ্রব্য উৎপাদন, মাদক পাচারে শিশুর ব্যবহার করাকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এই সনদ অনুযায়ী ১৬ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সের কোন শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পারবে না।

বাংলাদেশে শিশু শ্রমের অন্যতম বা একমাত্র কারণ হলো দরির্দ্য। দেশের ৩১ দশমিক ৬ ভাগ মানুষ দরির্দ্য সীমার নিচে বসবাস করে। এ সব পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু আয় দৈনিক ৮০ টাকারও কম। এদের অনেকের নূন্যতম কোন জমিও নেই। ফলে এসব পরিবারের শিশুরা তাদের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য শিশু শ্রমে নিপতিত হয়। নিজেদের জন্য, পরিবারের জন্য তারা জীবন বাজি রেখে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতেও দ্বিধা বোধ করে না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অর্থাৎ শিশু শ্রম নিবরণ করতে হলে প্রয়োজন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ। পরিবারগুলোর আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধি ও পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কারণ অধিকাংশ দরির্দ্য পরিবারের বেশি সন্তান থাকে। শিক্ষা ব্যবস্থায় বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিতে হবে। প্রয়োজনে এ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে কারিগরি স্কুলের ব্যবস্থা করে উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। যাতে তারা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা হতে পারে।

শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আমরা কি তাদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে পারছি? এ বিষয়ে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে মানুষকে আগে সচেতন হতে হবে, তবেই দেশ শিশু শ্রমমুক্ত হবে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied