আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর      

 width=
 

গাইবান্ধায় ৩১ কোটি টাকার কাজের দরপত্রে অনিয়ম; সাড়ে ৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

শনিবার, ১৪ জুন ২০১৪, রাত ০৮:৫৯

কাজের প্রাক্কলন, তিন দফা দরপত্র খোলার তালিকা (টেন্ডার ওপেনিং সিট), প্রথম ও দ্বিতীয় দফা দরপত্র বাতিলের আদেশ, দরপত্র মুল্যায়ন কমিটির সুপারিশ, কার্যাদেশের অনুলিপি থেকে পরিকল্পিতভাবে নিম্ন দরদাতাদের উর্দ্ধদরে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। অপরদিকে সিসি ব্লক নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগসহ বাঁধ নির্মাণে বেশ কিছু পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করায় তাদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে শম্বুক গতির কারণে যমুনার পাড়ের মানুষ গুলোর নদী ভাঙনে আশংকায় নির্ঘুম রাত কাটছে।

জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক যমুনা নদীর ভাঙন থেকে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকা রক্ষা প্রকল্পের আওতায় ১৩৪ কোটি টাকার মধ্যে ২০১০-১১ অর্থ বছরে দরপত্র আহবান করে ৪০ কোটি টাকার ব্যয় দেখানো হয়। দ্বিতীয় দফায় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ৫১ কোটি ১ লাখ ৯৩ টাকা টাকার দরপত্র আহবান করা হয়। এরমধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ১৪২ মিটার এলাকায় বালি ভর্তি জিও ব্যাগ স্থাপন কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়। অথচ প্রায় ৩১ কোটি ১ লাখ ৯৩ টাকা ব্যয়ে সিসি ব¬ক দ্বারা নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের দরপত্র আহবানের শুরুতেই ঠিকাদার-প্রকৌশলী সিন্ডিকেট উর্দ্ধদরে কাজটি বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। প্রাক্কলন অনুযায়ি ৪টি প্যাকেজে পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাজুল ইসলাম, মশিউর রহমান চৌধুরী, এল.এ, এ.এইচ.এম এন্ড আর.সি, আবুল হোসেন ও আতাউর রহমান প্রায় শতকরা ১৩-১৮ ভাগ নিম্নদরে দরপত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে আতাউর রহমান ৪টি প্যাকেজে প্রায় ১২.৯৩ ভাগ নিম্নদরে ২৭ কোটি ৭৩ হাজার টাকার দরপত্র দাখিল করেন। তিনি দরপত্র মুল্যায়ন কমিটির কাছে গ্রহনযোগ্য (রেসপনসিভ) নিম্নদরদাতা নির্বাচিত হন এবং তার দরপত্র অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। পরে দরপত্র মুল্যায়ন কমিটির আহবায়ক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পশ্চিমাঞ্চল) গত ১৫ মে ২০১২ তারিখে এক পত্রে দরপত্র মুল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুমোদনের জন্য মহাপরিচালকের কাছে পাঠায়। কিন্তু পাউবোর কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারদের সাথে যোগসাজস করে ২৭ জুন তারিখে এক পত্রে এই দরপত্র বাতিল করার জন্য ঠিকাদার আতাউর রহমানকে ৩০ জুন ২০১৪ পর্যন্ত পাউবোর সকল কাজের দরপত্রে অংশ গ্রহনে অযোগ্য (ডিবার) ঘোষনা করে। এই পত্র জারির ২০ দিন পর ১৬ জুলাই পুনঃ দরপত্রের সিদ্ধান্ত নেয় পাউবোর মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা।

পরবর্তীতে ২০১২ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয় দফায় এবং অক্টোবর মাসে তৃতীয় দফা পুন:দরপত্র আহবান করা হয়। এতে পূর্বে নিম্নদর দেয়া ঠিকা প্রতিষ্ঠান তাজুল ইসলাম, মশিউর রহমান চৌধুরী ও এল.এ, এ.এইচ.এম এন্ড আর.সি শতকরা ১৪-১৮ ভাগ উর্দ্ধদরে সাড়ে ৩৫ কোটি টাকার দরপত্র দাখিল করে। এতে দেখা যায় ৮ নম্বর প্যাকেজের প্রাক্কলন ৭ কোটি ৫৭ লাখ ৩২ হাজার ৭৫৫ টাকা। প্রথম দফা দরপত্রে আতাউর রহমানের দর ছিল ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৭৩ টাকা এবং মশিউর রহমান চৌধুরীর দর ছিল ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৭৪ হাজার ৪০৩ টাকা। পুন:দরপত্রে মশিউর রহমান চৌধুরীকে কার্যাদেশ দেয়া হয় ৮ কোটি ৬৭ লাখ ৭৬ হাজার ৬১৮ টাকায়। যা প্রাক্কলনের চেয়ে শতকরা ১৪.৫৮ ভাগ বেশী।

৯ নম্বর প্যাকেজের প্রাক্কলন ৯ কোটি ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৪৪ টাকা। প্রথম দফা দরপত্রে আতাউর রহমানের দর ছিল ৭ কোটি ৯৩ লাখ ২ হাজার ৯১১ টাকা কিন্তু পুন:দরপত্রে তাজুল ইসলামকে কার্যাদেশ দেয়া হয় ১০ কোটি ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫৩ টাকায়। যা প্রাক্কলনের চেয়ে শতকরা ১৪.০৬ ভাগ বেশী।

১৩ নম্বর প্যাকেজের প্রাক্কলন ৭ কোটি ৫৬ লাখ ৮ হাজার ৫২৬ টাকা। প্রথম দফা দরপত্রে আতাউর রহমানের দর ছিল ৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৬৭৪ টাকা এবং এল.এ, এ.এইচ.এম এন্ড আর.সি’র দর ছিল ৬ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৭৩৬ টাকা। পুন:দরপত্রের মাধ্যমে এল.এ, এ.এইচ.এম এন্ড আর.সিকে কার্যাদেশ দেয়া হয় ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৮৬ টাকায়। যা প্রাক্কলনের চেয়ে শতকরা ১৪.২২ ভাগ বেশী।

১৪ নম্বর প্যাকেজের প্রাক্কলন ৬ কোটি ৮৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৯২ টাকা। প্রথম দফা দরপত্রে আতাউর রহমানের দর ছিল ৫ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার ৮১৩ টাকা এবং এল.এ, এ.এইচ.এম এন্ড আর.সি’র দর ছিল ৬ কোটি ০৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯৯ টাকা। পুন:দরপত্রের মাধ্যমে এল.এ, এ.এইচ.এম এন্ড আর.সিকে কার্যাদেশ দেয়া হয় ৭ কোটি ৮৫ লাখ ০৬ হাজার ৬৪০ টাকায়। যা প্রাক্কলনের চেয়ে শতকরা ১৪.২২ ভাগ বেশী। পাউবো কর্তপক্ষ চারটি প্যাকেজেই উর্দ্ধদরে গ্রহন ও অনুমোদন করে।

গত ৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে পাউবোর উপ-সচিব (পশ্চিমাঞ্চল) ফজলুল করিম পৃথক দুটি পত্রে নির্বাহী প্রকৌশলী গাইবান্ধা পওর বিভাগকে কার্যাদেশ প্রদানের নিদেশ দেন। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী ২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসে উর্দ্ধদরেই কার্যাদেশ দেন। গাইবান্ধা পৌরসভার প্যানেল মেয়র জি.এম চৌধুরী মিঠু বলেন, শতকরা ১২.৯৩ ভাগ নিম্নদরে কার্যাদেশ না দেয়ায় এবং শতকরা ১৪ ভাগ উর্দ্ধদরে কার্যাদেশ দেয়ায় সরকারের প্রায় ৮ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ৮৩৫ টাকা গচ্ছা দিতে হয়েছে।

গাইবান্ধার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল মোস্তফা আশাফুদ্দৌলা বলেন, আপেক্ষিকভাবে এই দরপত্র মুল্যায়ন উচ্চ মুল্য মনে হলেও আসলে এই দরপত্রের প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২০১১-১২ অর্থ বছরে স্ট্যান্ডার্স সিডিউল রেডস্ অনুযায়ী। কিন্তু এই দরপত্রটা যখন মুল্যায়ন করা হয় এটা পিছিয়েছে প্রায় নয় মাসের মতো এবং সে ক্ষেত্রে তখন দেখা গেছে ওই সমস্ত আইটেমের স্ট্যান্ডার্স সিডিউল রেডস্ বেড়ে গেছে প্রায় শতকরা ৩৩ ভাগ। সেক্ষেত্রে যদিও এটা উচ্চমুল্য ২০১১-১২ অর্থ বছরের স্ট্যান্ডার্স সিডিউল রেডস্ অনুযায়ী বা প্রাক্কলন অনুযায়ী কিন্তু বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এটা ৮ সদস্য বিশিষ্ট দরপত্র মুল্যায়ন কমিটি মনে করেছে আপাত প্রাক্কলন অনুযায়ী এটা উচ্চ মুল্য কিন্তু বর্তমান বাজারদর অনুয়ায়ী এটা যথেষ্ট নিম্নমুল্য। তিনি বলেন, কার্যাদেশ উচ্চমুল্য মনে হলেও এটা স্বাভাবিক বাজার দর অনুযায়ী হয়েছে।

সম্প্রতি যোগদান করা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল মিয়া বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি তদারকী দল সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে ব্লকের মান খারাপ হওয়ায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ ব্লক বাতিল করেছেন। তিনি বলেন, ব¬ক নির্মাণ কাজের গুনগত মান ঠিক রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কাজের প্রায় ৫৫ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। কাজের শম্বুক গতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ঠিকাদারের গাফলতির কারণে কাজের গতি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তার পরও চেষ্টা করা হচ্ছে যথা সময়ে কাজ সম্পন্ন করার।

মন্তব্য করুন


 

Link copied