আপনিও সেদিন স্টেডিয়ামে নিজ স্ত্রীর অপমানের শোধ নিয়েছেন। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ‘ভারত-বাংলাদেশের খেলা চলার সময় ভিআইপি গ্যালারিতে শিশির তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। এসময় কয়েকজন যুবক তাদের উত্ত্যক্ত করলে বিসিবির কর্মীরা তাদের কয়েকজনকে ধরে ফেলেন এবং মারধর শুরু করেন। খবর পেয়ে সাকিবও এসে তাতে যোগ দেন’।
আপনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলেই শোধ নিতে পেরেছেন। আপনি উপস্থিত না থাকলে কি হতো? আপনিও কি আর দশটা অসহায় বাবা-বন্ধুদের মতো করে চোখ বন্ধ করে থাকতেন? এছাড়া, আর ভিন্ন কোন উপায়ও আছে কি?
সাকিব আল হাসান, আপনি সম্ভবত ভিন্ন কিছু করে দেখাতে পারতেন। শিশির আর সমাজের অন্য দশটা নারীর জীবন অভিজ্ঞতা একই। এরা শিশিরের মতন কিংবা এর চেয়েও ভায়াবহ টিজিংয়ের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। উত্যক্তকারীদের খপ্পরে পড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের লেখাপড়া, স্তব্ধ হয়ে গেছে জীবন। এই রকম হাজারও নারী থমকে গেলে, একদিন শিশিরও স্তব্ধ হয়ে যাবে।
শুধু ওই জনা সাতেক বখাটের গায়ে হাত তুলেই কর্তব্য শেষ বলে ভাবলেন? এর পরিণাম কি হল? আপাতত সমাধান হল, সংবাদ হল, সকলের দৃষ্টি চলে গেল আপনার দিকে। আড়ালে পড়ে গেল উত্যক্তকারীরা। দৃষ্টির বাইরে চলে গেল তারা, যারা দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আর ধবংস করে যাচ্ছে অসংখ্য নারীর জীবন। এই নিয়ে সারা জীবন কেঁদে গেলেও হয়ত কেউ শুনবে না সেই তরুণীর চিৎকার বা সেই সন্তান হারান বাবা-মার আহাজারি। কিন্তু আপনিত পারতেন। শিশিরের অপমানকে কেন্দ্র করে, আপনি হতে পারতেন এই সকল সাধারণ নারীদের নায়ক।
আপনি যদি শিশিরের মত করে নারীদের অবমাননার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেন, তবে কি এ নিয়ে কথা হত না? দেশের মানুষ বিষয়টি নিয়ে ভাবত না? কিছু না কিছু উপকারত পেত সাধারণ নারীরা। শিশিরের মত এমন সুযোগ নিশ্চই সবাই পায় না। তারা আশা করে কবে দেশ থেকেই এই ইভ টিজিং শব্দটা উঠে যাবে। আর এর জন্য কাজ করতে পারেন আপনাদের মত মানুষেরা। যাদের সবাই চেনে, যারা কিছু বললে বা করলে মানুষ দ্বিতীয়বার ভেবে দেখে।
যদি গায়ে হাত তোলার পরিবর্তে আপনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেন তাহলে হয়ত আপনি আরও একবার সত্যিকারের হিরো হিসেবেই চিহ্নিত হতেন। সবাই আরো একবার বুক ভরে গর্ব করত আমাদের সাকিবকে নিয়ে। একজন বড় মানুষকে সবাই যেমন ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে তেমনি তার কাছ থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশাও করে। আর আমি আপনার একজন ভক্ত হিসেবে সেই প্রত্যাশাই করব।
তাই শিশিরের অপমানকে কেন্দ্র করে একজন উত্তেজিত সাকিব আমাদের কাম্য নয়। আর দশজন অসহায় পুরুষের মত উত্তেজিত হয়ে নয়, সমস্যা সমাধানের পথে সচেতনতা সৃষ্টি করে আমাদেরকে আরও একধাপ এগিয়ে দিতে পারতেন আপনি।
চিঠিটি লিখেছেন: ইফফাত জাহান দিঠি