আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

নিজামীর রায় ফের অপেক্ষমাণ: প্রশ্ন, সন্দেহ, ক্ষোভ ও হতাশা

বুধবার, ২৫ জুন ২০১৪, দুপুর ১১:১৪

কারা কর্তৃপক্ষ ট্রাইব্যুনালকে নিজামীর অসুস্থতার বিষয়টি জানানোর পর রায় আবারও অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে সাত মাস ১১ দিন অপেক্ষমাণ থাকার পর আবারও বহু প্রত্যাশিত এ রায় ঝুলে যাওয়ায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে দেশজুড়ে। চলছে সভা, সমাবেশ, নিন্দা, বিক্ষোভ, বিবৃতি ও স্লোগান। ওদিকে রায় পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা নানা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও। কিন্তু দূর হচ্ছে না সন্দেহ-সংশয়, ক্ষোভ-হতাশা। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছে, পূর্বনির্ধারিত এই মামলার রায় পেছানো ষড়যন্ত্রমূলক ও অপ্রত্যাশিত। এ ঘটনাকে ‘রহস্যজনক’ হিসেবে অভিহিত করে তা উদ্ঘাটনের দাবি জানায় তারা।
প্রশ্ন উঠেছে, জেলর কেন রায়ের নির্ধারিত দিন নিজামী অসুস্থ এ তথ্য জানালেন, ২৪ ঘণ্টা আগে কেন জানালেন না। এর মধ্য দিয়ে জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাতের গুজব আবারও ডালপালা ছড়াতে শুরু করেছে। কেউ বলছে আঁতাতের কথা, কেউ বলছে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশে আসবেন; তাঁর প্রথম সফর জামায়াতের হরতালে বাধাগ্রস্ত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে ইত্যাদি। আবার আরো সময় নিতে চায় সরকার- এ ধরনের কথাও ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। ওদিকে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি আবার অভিযোগ করেছে, দিল্লির পরামর্শে সরকার এ রায় পিছিয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অনেক আসামিকে স্ট্রেচারে করে এনে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁকে (নিজামীকে) আদালতে কেন আনা হলো না? রায় না হওয়ার পেছনে রহস্য আছে। এ রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছেন যে নিজামী অসুস্থ। যদি তিনি সত্যিই অসুস্থ হয়ে থাকেন, যদি তাঁকে আদালতে হাজির করা না যায়, তবে অসুস্থতার যথাযথ প্রমাণ সংশ্লিষ্ট কোনো গ্রহণযোগ্য চিকিৎসকের কাছ থেকে গণমাধ্যমের মাধ্যমে তুলে ধরা উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি।’
হতাশা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা গণজাগরণ মঞ্চ। গতকাল সকাল ১০টায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে জাতীয় জাদুঘরের সামনে নিজামীর মামলার রায় ঘোষণার দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের চারটি অংশ পৃথকভাবে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। জাদুঘরের সামনের রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচির শুরুতে ডা. ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা কেন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে।
জাতীয় জাদুঘরের প্রধান ফটকের সামনে ‘নিজামীসহ সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করেছে ছাত্রমৈত্রী। ‘শাহবাগ আন্দোলন’ ব্যানারে নেতৃত্ব দিচ্ছে সংগঠনটির সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু। তিনি জানান, শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে জাসদ ছাত্রলীগ, বাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র সমিতি, যুদ্ধাপরাধ বিচার মঞ্চসহ আরো কয়েকটি ছাত্র সংগঠন রয়েছে। রায় ঘোষণা না হওয়ার প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় আবার বিক্ষোভ মিছিল ও নিজামীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে সংগঠনটি।
বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, নিজামীর রায় নিয়ে সরকার টালবাহানা শুরু করেছে। আপসের রাজনীতির কারণে রায় ঘোষণা করা হলো না। অসুস্থ নয়, নিজামী মারা গেলেও ট্রাইব্যুনালে তাঁর লাশ নিয়ে রায় ঘোষণা করতে হবে।’
জাতীয় জাদুঘরের উত্তর পাশে মিডিয়া সেলের সামনে ‘ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি চাই, কুখ্যাত রাজাকার নিজামীর ফাঁসি চাই’- এ স্লোগান তুলে অবস্থান করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত গণজাগরণ মঞ্চের কামাল পাশা চৌধুরীর অংশ। তিনি বলেন, বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে নানা টালবাহানা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের কারণে রায় ঘোষণা করা হয়নি। আদালতে আসামি উপস্থিত না থেকেও রায় ঘোষণা করা যায়, রমনা বটমূলের মামলায় যা করা হয়েছে। পলাতক থাকা সত্ত্বেও রায় ঘোষিত হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের মেহেদী হাসানসহ, প্রজন্ম ৭১, স্লোগান ৭১, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
জাদুঘরের প্রধান ফটকের সামনে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক (বোয়ান) অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন ব্লগার অনিমেষ রহমান, সাগর লোহানীসহ অনেকে। সাগর লোহানী বলেন, ‘আমরা কারো পক্ষেও না, কারো বিপক্ষেও না। নিজামীর ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করছি।’
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক বলেন, ট্রাইব্যুনাল অসুস্থতা বিবেচনায় নিজামীর রায় ঘোষণায় অপারগতা প্রকাশ করেছে। আগের ইতিহাস টেনে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের আগের দিন জামায়াত-শিবির নানা ধরনের নাশকতা ও হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। নিজামীর রায়ের আগে কোনো কর্মসূচি না থাকায় আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, আসলে রায় হবে কি না? হয়তো জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা রায় হবে না বিষয়টি আগেই জেনেছিল। কাজেই তারা কোনো কর্মসূচি দেয়নি। যদি এমন হয়ে থাকে তবে বিষয়টি সত্যিই আশঙ্কার। এটি সবাইকেই খতিয়ে দেখতে হবে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইদুজ্জামান সাকন বলেন, ‘নিজামীর রায় সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত। কাজেই এ রায় ঘোষণা দিয়ে সরকার নানা বিষয় ভাবছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সবারই চাওয়া নিজামীসহ সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি। সরকার নিজের স্বার্থ দেখেই চলছে। টিকে থাকার নানা টালবাহানা করছে। সার্বিক বিষয় দেখে মনে হচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে ভেতর ভেতর আঁতাত করা হয়েছে।’
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি প্রবীর সাহা বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার করা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী এজেন্ডাতেও রয়েছে। সরকার ভাবছে নিজামীর রায় দিলে ক্ষমতায় থাকা নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। নিজেরা টিকে থাকতেই ও বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রতার জন্য রায় ঘোষণা করা হয়নি।’
ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গণজাগরণ মঞ্চের স্লোগান কন্যাখ্যাত লাকী আক্তার বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাতের কারণে নিজামীর রায় নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। রায়ের আগের দিন তিনি সুস্থ ছিলেন আর রায়ের দিন সকালে অসুস্থ হলেন, এটা খুবই রহস্যজনক।
তবে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা এসব অভিযোগের কোনোটিই আমলে নিচ্ছেন না। বরং তাঁরা বলছেন, জামায়াতের সময়ক্ষেপণের কৌশলের অংশ হিসেবেই এ রায় পিছিয়ে গেছে। রায় পেছনোর একমাত্র কারণ জামায়াতের কূট-কৌশল। তবে এর মানে এই নয় যে রায় হবে না।
সরকারের প্রভাবশালী এক মন্ত্রী বলেন, জামায়াত ও নিজামীর পক্ষের আইনজীবীরা এ রায় নিয়ে শুরু থেকেই সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করছেন। যত দিন টেনে নিয়ে যাওয়া যায়, সে চেষ্টা ও কৌশলে হাঁটছে জামায়াত।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফর এ ক্ষেত্রে কোনো বাধার সৃষ্টি করেনি। কারণ এর আগে হরতাল কর্মসূচির ভেতরে বাংলাদেশে অনেক ভিভিআইপি অতিথি এসেছেন। সরকার তাঁদের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হয়েছে। আরেক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, বাংলাদেশে হরতাল-নৈরাজ্যের ভেতর দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এসেছেন।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘এখানে সন্দেহ-সংশয় বা অন্য যোগসূত্র খোঁজার কোনো সুযোগ নেই। এই নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল সচিবালয়ের তাঁর দপ্তরে বলেন, সব ঠিকঠাক থাকলেও নিজামীর অসুস্থতার কারণে রায় পিছিয়ে যায়। এখানে অন্য কোনো কারণ নেই। এর মানে এই নয় যে এ রায় হবে না।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমি আশা করছি, আগামী তারিখে আসামি উপস্থিত না হলেও জাজমেন্ট হয়ে যাবে। দিল্লির পরামর্শে রায় পিছিয়ে গেছে বিএনপির এক নেতার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেন সুরঞ্জিত। রায় হবেই, রায় নিয়ে সরকারের কৌশলী কোনো মনোভাব নেই। কারণ যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করেছে এ সরকারই।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য বলেন, রায় পেছানোর ক্ষেত্রে সরকারের অন্য কোনো ‘পলিসি’ থাকতেও পারে। আমরা মনে করি সেটা দোষের কিছু নয়। সবার সঙ্গে যুদ্ধ করে তো পারব না। ধীরগতির কাজই সুফল বয়ে আনে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। দেশের ও জনগণের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথাও ভাবতে হবে। তাঁরা বলেন, ধীরে হলেও রায় ঘোষণা হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

মন্তব্য করুন


 

Link copied