উত্তরবাংলা ডেস্ক: কলকাতার দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি নারায়ণগঞ্জের নূর হোসেন। সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চলছে আলোচনা। তাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য ভারতের সঙ্গে চলছে আলোচনা। ভারতও তাকে ফিরিয়ে দিতে রাজি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী।
সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, নূর হোসেনকে ফিরিয়ে দিয়ে ভারত চাইলে বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ফিরিয়ে নিতে। নূর হোসেনকে পেতে অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি চিন্তাভাবনার মধ্যেই রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা বলেন, অনুপকে হস্তান্তরে আইনগত বাধা দূর করতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দী বিনিময়-সংক্রান্ত চুক্তি হয়। সব শেষ গত বছর অক্টোবরে দুই দেশের এ চুক্তি অনুসমর্থন দলিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে উদ্যোগটি আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া হয়।
নূর হোসেনকে ফিরিয়ে দেয়ার আলোচনার পরই দীর্ঘদিন চাপা পড়ে থাকা অনুপ চেটিয়া প্রসঙ্গ উঠে আসে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন কারণে অনুপ চেটিয়ার বিষয়টি চাপা পড়ে ছিল। তবে নূর হোসেন আটক হওয়ার পর আবারও ফাইলটি জায়গা বদল করতে শুরু করেছে। ওই কর্মকর্তা জানান, তবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহিঃসমর্পণ চুক্তি কার্যকর হলেও আসামের বিদ্রোহী নেতা অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) সাধারণ সম্পাদক গোলাপ বড়ুয়া ওরফে অনুপ চেটিয়া ১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার আদাবর থেকে গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাক্ষাৎকালে সাত খুন মামলার আসামি নূর হোসেনের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় নূর হোসেনকে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর পরই নূরকে ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়ায় গতি পেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সে ক্ষেত্রে ২০১৩ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির পর নূর হোসেনই হবেন প্রথম ব্যক্তি, যাকে এ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
নূর হোসেনকে কবে ফেরত দেওয়া হবে তা অবশ্য চূড়ান্ত হয়নি এখনও। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ (গোয়েন্দা বিভাগ) ও অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াডের প্রধান অনীশ সরকার এ বিষয়ে মুঠোফোনে বলেন, 'নূর হোসেনকে ফেরত দিতে বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও তৈরির কাজ চলছে। সে ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব নূর হোসেনকে তুলে দেওয়া হবে বাংলাদেশের হাতে।'
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমরা এক ঘণ্টাও সময় নষ্ট করছি না। খুব শিগগিরই নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার খন্দকার মুহিদ উদ্দন বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সকল কাগজপত্র ভারত সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। এখন বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যখন আনার অনুমতি পাবো তখনই নিয়ে আসবো।’
নূর হোসেনকে ফেরত পেতে ২২ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা আদালতে আবেদন করে বাংলাদেশ সরকার। সেই আবেদন গ্রহণ করেন আদালত। আগামী ৭ জুলাই নূর হোসেনকে কলকাতার বারাসাতের উত্তর চব্বিশ জেলা আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।
২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালকসহ সাতজনকে অপহরণ ও খুনের মামলার প্রধান আসামি এই নূর হোসেন। ঘটনার পর থেকে নূর হোসেন পলাতক ছিলেন। ১৪ জুন কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-সংলগ্ন এলাকা কৈখালির একটি বহুতল আবাসন থেকে নূর হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে বিধান নগর কমিশনারেট ও অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড (এটিএস) এবং বাগুইহাটি থানার পুলিশ।
তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় দ-বিধির ১৪ বিদেশি নাগরিক আইন (ফরেনারস অ্যাক্ট) লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। এরপর প্রথম দফায় আট দিনের পুলিশ রিমান্ডের পর দ্বিতীয় দফায় ১৪ দিনের জন্য কারাগারে প্রেরণ করা হয় নূর হোসেনকে। আপাতত কলকাতা লাগোয়া দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন নূর হোসেন। ৭ জুলাই তাকে বারাসাতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। নূর হোসেন ছাড়াও তার দুই সহযোগী সালিম ও খান সুমনকে ওই দিন আদালতে তোলা হবে।