স্টাফ রিপোর্টার: রংপুরে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) বাফার গোডাউনে ধারণক্ষমতা কম হওয়ায় প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের বস্তা খোলা আকাশের নিচে রেখেছে গোডাউন কর্তৃপক্ষ। এদিকে চাহিদার চেয়ে সারের মজুদ বেশি হওয়ায় এবং কৃষক পর্যায়ে সারের ব্যাপক চাহিদা না থাকায় চুক্তিভিক্তিক ডিলাররা নির্দিষ্ট সময়ে সার উত্তোলন না করার অভিযোগ ওঠেছে।
ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘদিন থাকা সারের গুণাগুণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন সার বিশেষজ্ঞরা।
নগরীর আলমনগরে অবস্থিত (বিসিআইসি) বাফার গুদামে রক্ষিত ইউরিয়া সার জেলার আট উপজেলার কৃষকদের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি আপদকালীন মজুদের জন্য রাখা হয়।
বাফার গুদাম সূত্রে জানা গেছে, গুদামের ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৫ হাজার মেট্রিক টন। কৃষকদের প্রয়োজনে প্রায় সময়ে ১২ হাজার টনের ঊর্ধ্বে সার মজুদ রাখতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে প্রায় সময়ে কয়েক হাজার টন সার রাখতে হচ্ছে।
অভিযোগ ওঠেছে ইউরিয়া সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া সার সংগ্রহে তেমন তাড়াহুড়ো নেই। তাই জেলার নির্দিষ্ট ১০২ জন ডিলারের অনেকে তাদের টাকা আটকে থাকবে বলে সার তুলতে গড়িমসি শুরু করছেন। আবার যখন ইউরিয়া সারের সরবরাহ কম থাকে তখন অধিক লাভের আশায় ডিলাররা দ্রুত বরাদ্দকৃত সার উত্তোলন করেন বলে গুদাম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
সরেজমিনে নগরীর আলমনগরে বাফার গুদামে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণের মধ্যে হাজার হাজার ইউরিয়া সারের বস্তা খোলা আকাশের নিচে হালকা পলিথিন দিয়ে কোনো রকমে ঢেকে রাখা হয়েছে।
রংপুর বাফার গুদামের ইনচার্জ মুকুল মিয়া বলেন, বর্তমানে ১৪ হাজার ৮৪১ মেট্রিক টন (২ লাখ ৯৬ হাজার ৮২০ বস্তা) ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে। গুদামে ৫ হাজার মেট্রিক টন সার রাখা সম্ভব হলেও ঠাসাঠাসি করে প্রায় ১১ হাজার মেট্রিক টন সার রাখা হয়েছে। খোলা আকাশের নিচে ৩ হাজার ৮৪১ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার রাখা হয়েছে।
সারের মজুদ আরও বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, গুদামের বাইরে থাকলেও বৃষ্টিতে যাতে সারের গুণাগুণ নষ্ট না হয় এ জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এমনকি নিচ দিয়ে গড়িয়ে আসা বৃষ্টির পানি যাতে সারের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য ইট বিছিয়ে এর ওপর সারের বস্তা রাখা হয়েছে। তবে তিনি কতিপয় ডিলারদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সার উত্তোলন না করার বিষয়টি এড়িয়ে যান।
একাধিক সার ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গুদাম থেকে প্রতি ইউরিয়া সারের বস্তার জন্য ৭০০ টাকা করে দিতে হয়। খুচরা মূল্য হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা। পরিবহন খরচ তাদের বহন করতে হয়। কিন্তু সারের চাহিদা কম থাকায় বিক্রি হতে সময় লাগে। ফলে টাকা আটকে থাকে দীর্ঘদিন।
ইউরিয়া সার দীর্ঘ সময় ধরে খোলা আকাশের নিচে থাকলে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সার বিশেষজ্ঞরা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক আব্দুল লতিফ বলেন, মুক্ত বাতাস এবং পানির সংস্পর্শে ইউরিয়া সারের মূল উপাদানের শতকরা পরিমাণ নিশ্চিতভাবে পরিবর্তন হবে।
ইউরিয়া সারের মূল উপাদান হচ্ছে নাইট্রোজেন। এর পরিমাণ শতকরা ৭০ ভাগ, যা বাতাস এবং পানিতে অবশ্যই পরিবর্তন হবে। ফলে ইউরিয়া সারের গুণাগুণ নষ্ট হবে।
তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কৃষকরা জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগের পর এর কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য জমিতে সেচের ব্যবস্থা করেন। তেমনি জমিতে প্রয়োগের আগে ইউরিয়া সার পানির সংস্পর্শে আসলে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।