আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

মাদক জীবন থেকে জীবন কেড়ে নেয়

রবিবার, ৬ জুলাই ২০১৪, সকাল ০৮:৫৮

এ এ এম হাফিজুর রহমান

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ২৬ জুন, ২০১৪। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মত বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। এ বছরে দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে  ‘A message of hope: Drug use disorders are treatable and preventable’.  সহজ বাংলায় যার অর্থ  ‘মাদকাসক্তি প্রতিরোধ ও নিরাময়যোগ্য। এর মাধ্যমে মাদকাসক্তিকে রোগ হিসেবে স্বীকৃত দেয়া হয়েছে।’

মাদকদ্রব্য হচ্ছে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে তৈরি রাসায়নিক বস্তু যা চিকিৎসা বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করলে ব্যক্তির চিন্তা ,চেতনা ও মানসিকতার পরিবর্তন করে। মাদক ব্যবহারের ফলে ব্যবহারকারীর শারীরিক ও মানসিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয় এবং নিয়মিত ব্যবহারে মাদক ব্যবহারের মাত্রা বা পরিমাণ বেড়ে যায়। সময়মত মাদক গ্রহণ না করলে মাদক প্রত্যাহারজনিত সমস্যা (Withdrawal Symptoms) দেখা দেয়। যেমন শরীর ব্যথা, মাংসপেশি ব্যথা, অস্থিরতা, বমি বমি ভাব, নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হওয়া, পাকস্থলীর খিঁচুনি, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, নিয়মিত পায়খানা না হওয়া, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। তাই এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়টির মাধ্যমে মাদকাসক্তিকে যথার্থই রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিকিৎসার মাধ্যমে মাদক নির্ভরশীল ব্যক্তি সুস্থ হতে পারেন।

সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে  মাদক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না কেন? উত্তরটা এক কথায় বলা যায়, মানুষের প্রয়োজনে মাদক নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়। বিষয়টি বিশ্লেষণের দাবি রাখে। মানুষ সেই সৃষ্টির আদিকাল হতে রোগমুক্তির বা রোগ নিরাময়ের জন্য মাদক ব্যবহার করে আসছে। মানুষ যখন বনে জঙ্গলে বসবাস  করত তখনও বিভিন্ন গাছ-গাছালিকে অজান্তেই রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করে আসছে।  বিজ্ঞানের আবিস্কারের মাধ্যমে জানা যায় যে ঐ গাছের মধ্যেই মাদকের উপাদান রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ব্যথা নিরাময়ের জন্য বা অপারেশনের সময় আমরা যে পেথিডিন বা মরফিন ব্যবহার করি তা পপি ফুল থেকেই উদ্ভুত। আবার  চরম ধ্বংসাত্মক নেশার উপাদান হেরোইনও পপি গাছ হতে উদ্ভুত। তাই বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে মানুষ কিরূপে বা কীভাবে এটি ব্যবহার করছে তার উপর।  একই বস্তু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করলে তা  ঔষধ আবার স্বেচ্ছাচারী হয়ে নিজের খেয়াল খুশি মত ব্যবহারে তা নেশার উপকরণ। তাই মাদক ব্যবহার বলতে আমরা সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শের বাইরে ক্ষতিকর ব্যবহারকে বুঝে থাকি। আর এই ক্ষতিকর ব্যবহার হতে দূরে থাকাই মাদকাসক্তি হতে দূরে থাকার একমাত্র উপায়। ক্ষতিকর মাদক বা মাদকের ক্ষতিকর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য। আমাদের সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদে জনগণের কল্যাণে  মাদক নিয়ন্ত্রণের একথাই বলা হয়েছে। বিশ্বের প্রধান মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হল  (INCB - International Narcotics Control Board) আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড। আইএনসিবি এর কনভেশন অনুযায়ী সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন -১৯৯০ অনুযায়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নোডাল এজেন্সি হিসেবে অবৈধ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি, আরএবি, কোস্ট গার্ড, আনসারও এই আইনের আওতায় মাদকদ্রব্য নিয়ত্রণ করে থাকে। রাষ্ট্রে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যাবহারের জন্য কিছু কিছু মাদকদ্রব্য আইনের আওতায় ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। নিয়ন্ত্রিত মাদকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং আইনের আওতায় চিহ্নিত অবৈধ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণই মাদক সমস্যা নিয়ন্ত্রণের মূল ভিত্তি।

বর্তমান সভ্যতা সর্বোচ্চ উৎকর্ষতায় উন্নীত। এরূপ অবস্থায় বিশ্ব যে কয়েকটি ভয়ানক বিপর্যয়ের সম্মুখীন- এদের মধ্যে মাদকাসক্তি অন্যতম। উন্নত-ধনি-গরীব নির্বিশেষে প্রায় সকল রাষ্ট্রই এ সমস্যা মোকাবেলা করছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান মাদক ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে মাদক উৎপাদনকারী সর্ববৃহৎ বলয়। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল-থাইল্যান্ড,  মিয়ানমার ও লাওস এর অন্তর্ভুক্ত।  উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে গোল্ডেন ক্রিসেন্ট-পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান। বাংলাদেশের উত্তরে রয়েছে গোল্ডেন ওয়েজ-নেপাল, ভুটান ও তিব্বত। এ সব এলাকায় অনেকটা বাধাহীন-স্বাধীনভাবে পপি চাষ হয়ে থাকে। এই পপি থেকেই তৈরি হচ্ছে মাদক তৈরির সকল উপাদান। আর বাংলাদেশকে চোরাকারবারিরা ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। তাই মাদক উৎপাদনকারী না হয়েও এর ফল ভোগ করছে বাংলাদেশ।

বালাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে মাদকের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। এদেশে প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ বসবাস করে আসছে। যাদের মধ্যে ধর্মীয়ভাবে মাদক ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া ব্রিটিশ শাসনের সময়- তারা এ দেশের কৃষককে অনেকটা বাধ্য করেই পপি চাষ করাতো। এরই ফলশ্রুতিতে এতদঞ্চলের একটি গোষ্ঠী আড়ালে এখনো পপি চাষ করে থাকে বা চাষের চেষ্টা করে। ভারতে এখনও বৈধভাবে পপি চাষের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি বলা হয় যে ব্রিটিশ শাসনের সময়ে এদেশের মানুষের রক্তে মাদক মিশে গেছে তা হলে হয়তো খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হবে বলে মনে হয় না। কেননা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৎকালীন সময়ে এদেশের কৃষকের দ্বারা আফিম চাষ করাতো এবং তা থেকে রাজস্ব আদায় করত।

বিশ্বব্যাপী মাদক-অস্ত্র-সোনা একটি ভিসিয়াস সাইকেল- চোরাচালান বলয়। এই চক্রের মাধ্যমে এসব অবৈধ ব্যবসার অর্থ নিয়ন্ত্রিত বা পাচার হয়ে থাকে। বিশ্বের যে সব অঞ্চলে উগ্রপন্থীরা বাস করে- তারা তাদের অস্ত্রের চালানের অর্থ মাদক চাষ বা মাদক বেচাকেনার মাধ্যমে পাচার করে বলে জানা যায়। আবার মাদকের অর্থ সোনা বা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়। লোকচক্ষুর আড়ালে এটি হয়ে থাকে।

মাদকের প্রচলন মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই। ইসলাম ধর্মীয় মতে বেহেশতে গন্দম ফল ভক্ষণের সময় থেকেই মাদকের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বলে বলা হয়ে থাকে। আদম নেশা করেই যেন বেহশত থেকে বিতাড়িত হয়েছে, আর আমরা তার বংশধর হয়ে সেই নেশা দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছি! যা হোক, যেখান থেকে হোক, যে ভাবেই হোক,  যে সময় থেকেই প্রচলন হোক না কেন- একথা আজ সর্বজন স্বীকৃত যে মাদক মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। ভয়ানক ক্ষতিকর। যে মাদক চাষ করে সেও স্বীকার করে, যে মাদক তৈরি করে সেও স্বীকার করে, যে খায় সেও স্বীকার করে , যে নিয়ন্ত্রণ করে সেও স্বীকার করে, যে নিয়ন্ত্রকদের নিয়ন্ত্রণ করে সেও স্বীকার করে, যে সব নীরবে  দেখে সেও স্বীকার করে - যে মাদক মানুষের জন্য ক্ষতিকর, একে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার! তা হলে এটি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না কেন? আসলে কোথাও না কোথাও, ফাঁক রয়ে গেছে। সেই ফাঁক চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা যদি যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাই তা হলে এটি দুঃসাধ্য হলেও অসম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। প্রতিনিয়ত আমাদের একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, তা হল আপনারা কি করেন? আসলেই তো! যে সমস্যার মধ্যে নানান গোষ্ঠীর মানুষ জড়িত- সেটির সমাধানে সকলের সহযোগিতা অবশ্যই দরকার।

প্রিয় পাঠক, অত্যন্ত বিনয়ের সাথে এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনাদের সাহায্য চাচ্ছি। তার আগে মাদক সমস্যার বাস্তবতা একটু বিশ্লেষণ করা দরকার বলে মনে করি।

মাদক সমস্যা একটি জটিল সমস্যা। এ সমস্যার এসটেকহোলডার (stakeholders) বা সংশ্লিষ্টরা কারা? এক কথায় উত্তর সকল মানুষ। একটু বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি পরিস্কার হবে। যে মাদক খায় সে ভোগে। যে পরিবারে মাদকাসক্ত থাকে সে পরিবারের সদস্যরা ভোগে। মাদকাসক্ত পরিবার যে এলাকার সেখানকার মানুষ ভোগে। মদকাসক্তরা মাদকের অর্থ যোগান পেতে চুরি, ছিনতাই, ইত্যাদি নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। এতে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। আইনশৃঙ্খলা কাজে নিয়োজিত সদস্যদের বাড়তি কাজ তৈরি হয়। ফলে রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যঘাত ঘটে। সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাদক কেনার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশে পাচার হয়। জনশক্তির অপচয় হয়। মাদকাসক্ত জনশক্তি দেশের উন্নয়নে কাজে না লেগে বরং দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং মাদকাসক্তির ছোঁবল থেকে কেউই মুক্ত নয়। নানান কারণে মানুষ নেশার ফাঁদে পড়ে। সব বয়সের মানুষ নেশাগ্রস্ত হতে পারে। তবে যৌবনে বা তারুণ্যে নেশাগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। এই বয়সে বাস্তবতা ও যুক্তির চেয়ে আবেগের প্রাধান্য বেশি থাকে। নেশার প্রতি কৌতুহল, নেশা গ্রহণকারী বন্ধুদের প্রভাব, মাদকের কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা, প্রতিকূল পারিবারিক পরিবেশে মানুষ হওয়া, মাদকের সহজলভ্যতা, মানসিক চাপ সহ্য করতে না পারা, হতাশা, ব্যর্থতা, হীনমন্যতা এমনকি ফ্যাশন ইত্যাদি কারণে মানুষ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। কেউ যখন নেশাগ্রস্ত হয়ে পরে তার মধ্যে নানান লক্ষণ প্রকাশিত হয়। শারীরিক ও মানসিক নানান পরিবর্তন দেখা দেয়। হঠাৎ আচার আচরণের পরিবর্তন দেখা দেয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তি অল্পতেই রেগে যায়। অল্পতেই মেজাজ গরম হয়ে যায়। অভিভাবকের উপর কিংবা ছোট ভাই- বোনদের উপর হাত তুলতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। কথাবার্তা জড়িয়ে যায়। বন্ধুর পরিবর্তন হয়। নতুন বন্ধুদের আগমন ঘটে। খাওয়াতে অরুচি হয়। পড়াশোনা ও খেলাধুলায় আগ্রহ নষ্ট হয়। ছেঁড়া ও নোংরা পোশাক পরিধান করা, গোসল না করা, দাঁত না মাজা, নোংরা থাকা ইত্যাদি অভ্যাস হয়। মাদকের ব্যবহার প্রকারভেদে শরীরে বিভিন্ন রকমের দাগ হয়। যেমন হেরোইন ব্যবহার করলে হাতে পোড়া দাগ হয়। টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস হয়। অনেক সময় নাকে মুখে পানি পড়ে। রাত জেগে থাকার অভ্যাস হয়। অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে। থাকার ঘর অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। একাকী থাকার প্রবণতা বেড়ে যায়।

মাদকাসক্ত ব্যক্তির নানান ধরণের শারীরিক সমস্যা হয়। ফুসফুসের ক্যান্সার, যক্ষ্মা কিংবা এইডস এর মত ভয়ানক রোগ হয়। সূচের মাধ্যমে নেশা করার কারণে আঙুল, পায়ের গোড়ালি ইত্যাদিতে পচন ধরে। দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়। অপুষ্টিতে শরীর শুকিয়ে যায়। মদ্যপানের কারণে লিভারে পচন ধরে। হৃদরোগ হয়। মাদক গ্রহণের কারণে মৃত্যুও হয়। মাদকাসক্তদের নানান ধরণের মানসিক বৈকল্য দেখা যায়। অস্থিরতা, খিটমিটে মেজাজ, হতাশা, অবসাদ, সাময়িক স্মৃতিলোপ, অপরাধ প্রবণতা, উদ্বেগ, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি মানসিক সমস্যা হয়। মাদকের কারণে পারিবারিক শান্তি- সম্প্রীতি নষ্ট হয়। পড়াশোনা মাঝপথে থেমে যায়। মাদকাসক্ত ব্যক্তি সামাজিক নিন্দা ও ঘৃণার শিকার হয়। ছেলে-মেয়েদের বিয়ের সমস্যা হয়। পরিবার দরিদ্র হয়ে পড়ে।

এ সমস্যা সমাধানে আমাদের করণীয় কি? কিছু করণীয় ক্ষেত্রের দিকে আমি সবিনয়ে নিজের একান্ত কিছু ভাবনা পাঠকের সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছুক। আমি নিজের উদাহরণ দিয়ে বলছি। আপনাদের দোয়ায় আমার মা এখনও বেঁচে আছেন। তিনি আমার ফোনে কথা শুনলেই বলতে পারেন আমি ভাল আছি কি না। কণ্ঠস্বর শুনেই বলেন তোর কি হয়েছে? অর্থাৎ তিনি বুঝতে পারেন। আমি ভাল নেই। যে কোনো মা-’ই বুঝতে পারেন তার সন্তানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না বা সন্তান ভাল আছে কি না! সন্তানের গায়ের গন্ধ শুকেই মা বুঝতে পারেন তার সন্তানের পরিবরতন! তিনি যদি প্রথমেই সতর্ক হয়ে যান তা হলে বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু জেনেও যদি সমস্যাকে আড়াল করেন তা হলে বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন বৈ কি! আমি চাকরি জীবনে দেখেছি শুধু ঢেকে রাখার কারণে অনেক সন্তানের জীবন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।

বাবা মায়েরা! যান্ত্রিক যুগের ব্যস্ততা একটু ঝেরে সকালের নাস্তা ও রাতের খাবার সন্তানদের সাথে মিলে এক সাথে খেতে পারেন। এতে সন্তানদের দিনে কার কি কাজ গল্পছলে জানতে পারেন। আবার রাতে খাবার সময় জেনে নিতে পারেন, সন্তানরা সারাদিন কে কি করেছে। একটু খেয়াল করলেই জানতে পারবেন সন্তানের কার কি অবস্থা! এতে নিশ্চিতভাবে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন। বয়ঃসন্ধির সময় ছেলে মেয়েদের মতামতের দিকে বিশেষ নজর দিন। এ সময় সন্তানের সাথে হঠাৎ করে দূরত্ব সৃষ্টি না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন। বিনা প্রয়োজনে উঠতি বয়সের সন্তানদের হাতে হিসাবের বাইরে টাকা দিবেন না। সন্তানদের অকারণে সন্দেহ করবেন না। মাদকাসক্ত সন্তানদের প্রতি সহমর্মী হন। রাগ্ না করে তাকে বুঝিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এ অবস্থায় কোনোভাবেই সন্তানকে ঘৃণা করবেন না। সন্তানদের ভাল কাজের প্রশংসা করুন। সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিন। সন্তানের বন্ধুদের জানুন। প্রয়োজনে বাসায় দাওয়াত দিন। সঙ্গ ভাল হলে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সন্তানদের সামনে দয়া করে সিগারেট খাবেন না। এতে সন্তান সিগারেটের প্রতি আগ্রহী হবে। একই অনুরোধ সম্মানিত শিক্ষকদের প্রতি। বিশেষ করে স্কুল শিক্ষকদের প্রতি তাঁরা যেন ছাত্রদের সামনে সিগারেট না খান। ছেলে-মেয়েরা যদি সিগারেট থেকে দূরে থাকে তাহলে তারা অন্য যে কোনো নেশা থেকে দূরে থাকবে। এটা মোটেই দুরাশা নয়! সিগারেটকে গেটওয়ে ড্রাগ বলা হয়। অর্থাৎ সিগারেট থেকেই অন্যান্য নেশার শুরু হয়।

প্রিয় তরুণ বন্ধুরা- আমার যুবক বন্ধুরা! আপনাদের উদ্দেশে মূলত আমার এই কলম ধরা। আপনারা এখন যে বয়সে আছেন সেটিই জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। জীবনকে যদি উপভোগ করতে চান তাহলে তারুণ্যকে-যৌবনকে উপভোগ করতে শিখুন। আর তারুণ্যকে উপভোগ করতে হলে অবশ্যই নেশা থেকে দূরে থাকতে হবে। আপনার ভালোবাসার মানুষের শত্রুকে যেভাবে আপনি এড়িয়ে চলেন মাদককেও সেভাবে এড়িয়ে চলুন। আর তরুণী বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ, সৌন্দর্য চর্চার নামে- স্লিম থাকার নামে কোনো কিছু না জেনে ব্যবহার করবেন না। কেননা মাদক ব্যবসায়ীরা কৌশলে আপনাকে ফাঁদে ফেলতে চাবে। বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এই কৌশল অবলম্বন করে। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা প্রচার করে যে ইয়াবা খেলে সেক্স বাড়ে এটা একবারে ডাহা মিথ্যা কথা। একটা কথা মনে রাখবেন। কোন মাদক ব্যবসায়ীই তার নিজের সন্তানকে মাদক খাওয়ায় না। কিন্তু আরেকজনের সন্তানকে দিব্যি ধ্বংস করে দিচ্ছে মাদক দিয়ে। আপনারা নিজে মাদক না খেলে কার সাধ্য আছে আপনাকে মাদক খাওয়ায়- আপনাকে নেশাগ্রস্ত করায়? মায়ের কথা চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন! কত যন্ত্রণা সহ্য করে তিনি আপনাকে পেটে ধরেছেন! বাবার কথা ভাবুন কত কষ্ট করে তিনি আপনাকে মানুষ করছেন। শুধু খেয়ালের বশে, আবেগের স্রোতে ভেসে-বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে- তাঁদের স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দেয়ার কোনো অধিকার কি আপনার আছে? নিঃসন্দেহে নেই। স্বপ্ন দেখুন। নিত্য নতুন স্বপ্ন দেখুন। আপনার সব স্বপ্ন হয়ত পূরণ নাও হতে পারে। চেষ্টা করে যান। আপনি একদিন সফল হবেনই। কোনো কারণে জীবনে বিপর্যয় আসতে পারে। ঘাবড়ে যাবেন না। ঐ সময় প্রিয় মানুষগুলোকে আঁকড়ে ধরুন। তাদের সাথে শেয়ার করুণ আপনার কষ্ট। দেখবেন তারা কত মমতায় আপনাকে আগলে রাখেন! মাদক কেন- কোনো খারাপ কিছুই আপনাকে স্পর্শ করতে তারা দিবেন না, আমি হলফ করে বলতে পারি। আমরা যারা অভিভাবক বা পিতা-মাতা, আমাদের কষ্টটা কোথায়? জানেন! তা হল আমাদের সন্তানরা যখন সুস্থ না থাকেন। ভাল না থাকেন। সুতরাং একটু সচেতন হোন। মাদক আপনার নিকট থেকে  যোজন যোজন দূরে থাকবে।

প্রিয় পাঠক, সীমিত সুযোগ সুবিধা নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আমরা পালনের চেষ্টা করছি। আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, ময়মনসিংহ জেলায় মাত্র আঠার জন জনবল নিয়ে আমরা মাদক অপরাধ দমন করছি। একটি মাত্র গাড়ি। ১৯৯০ সালে কেনা। তাই দিয়ে গত এক বছরে শুধু ময়মনসিংহ জেলায় ৫৬৫ জনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে। আমাদের গাড়ি, অস্ত্র, পোশাক, ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক, মোবাইল ট্রাকারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দরকার। আমাদের স্বয়ংক্রিয় সাবলম্বি করা হলে, আমরা এই সীমিত জনবল দিয়েই মাদক নিয়ন্ত্রণে যে কোনো চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। যে অনুপাতে মাদক ব্যবসায়ীদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে সে অনুপাতে মাদকের ব্যবহার কমছে না। তাই শুধু শাস্তি দিয়েই মাদক বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমরা স্বীকার করি আর নাই করি, ইতোমধ্যে একটা ব্যাপক গোষ্ঠী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। এদের কারণে মাদকের চাহিদা থেকেই যাচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীরা মদক ব্যবসার কাজে এসব মাদকাসক্তদের ব্যবহার করছে। আমরা চাই না আর কেউ নতুনভাবে নেশাগ্রস্ত হোক। সে লক্ষেই আমরা মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এই আন্দলনে আপনাদের অংশগ্রহণের জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করছি।

আসলে মাদক নিয়ন্ত্রণের মূল কলকাঠি আপনাদের হাতেই। আপনারা আমাদের সাহায্যে করলে কাজটা সহজ হয়। আপনারা যদি কেউই মাদক না গ্রহণ করেন তাহলে তো আমাদের কাজই থাকবে না! আমরা সাধারণত সোর্স নির্ভর কাজ করি। সোর্সরা হয় মাদকাসক্ত না হয় মাদক ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট। আপনারা যদি গোপনে আমাদের তথ্য দেন তাহলে তা খুবই কার্যকরী হয়। আর আমাদের নিজেদের মধ্যেও কোনো ত্রুটি থাকলে তা আমাদের জানান। নিজের সন্তানের স্বার্থে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে- প্রতিবাদ জানান। এতে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন- মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে। মাদক ব্যবসায়ীরা কোনো না কোনো মায়ের সন্তান, কারো ভাই-বোন  বা পুত্রকন্যা বা অন্য  কোনো স্বজন - কোনো আপনজন। তাদের  এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন! আর একটা কথা, আমার সন্তানের খারাপ কাজের দায়ভার-অভিভাবক হিসেবে আমি কী এড়াতে পারি? কখনই না! আসুন না জাতির স্বার্থে সকলে একে অপরকে সাহায্য করি! তাহলে দেখবেন অনেক সহজ হয়ে যাবে মাদক নিয়ন্ত্রণ।

পরিশেষে কষ্ট করে আমার লেখা পরার জন্য ধন্যবাদ। এ লেখা পড়ে একজনেরও যদি একটু উপকার হয় তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করব! আপনি ভাল থাকেন। সুস্থ

লেখক : এ এ এম হাফিজুর রহমান, উপ-পরিচালক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ।

মন্তব্য করুন


 

Link copied