আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: নীলফামারীতে গোপন বৈঠক থেকে জামায়াতের ৩ নেতা গ্রেপ্তার       পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ       

 width=
 

উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র বিরুদ্ধে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

রবিবার, ৬ জুলাই ২০১৪, দুপুর ০২:৪৮

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা পরিষদের অনুকুলে ঐ অর্থ বছরের শেষ মুহুর্তে রাজস্ব খাতের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেট থেকে বিশেষ অনুদান খাতের ৫৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিধিমালা অনুযায়ী, প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ প্রাপ্তির সাথে সাথে ঐ আর্থিক বছর উপজেলা পরিষদের বকেয়া পৌরকর ৯ লাখ ৩০ হাজার, ইউপি সচিবদের বেতন-ভাতা বাবদ ডিসি অফিসে প্রেরণ ৪ লাখ, উপজেলা পরিষদ কর্মচারিদের বেতন ১ লাখ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান দ্বয়ের সম্মানী, বাড়ি ভাড়া ও ভ্রমন ভাতা বাবদ ৪ লাখ ও উপজেলা পরিষদের প্রবেশ মূখে গেট নির্মাণে ৩ লাখ টাকাসহ মোট ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। গেট নির্মানে ঐ ৩ লাখ টাকা পৌর কমিশনার কায়ছার আলীর নামে উত্তোলন করা হলেও কোন পদ্ধতিতে ঐ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তা তিনি সঠিকভাবে জানাতে পারেননি। তবে ঐ কমিশনার তার নামে ভবিষ্যতে এভাবে টাকা উত্তোলন না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেন বলে সাংবাদিকদের জানান। গেট দু’টির নির্মান কাজ এখনও অসমাপ্ত রয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা ২০১২-১৩ অর্থ বছরের জুনে বিভাগীয় ট্রেনিং এ থাকাকালীন সময়ে বিশেষ ঐ বরাদ্দের অর্থ বিধি বহির্ভূতভাবে উত্তোলনের সময় উপজেলা চেয়ারম্যান কাল্পনিক কাগজ-পত্রে স্বাক্ষর গ্রহনের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। তিনি তার চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি বলে এ প্রতিবেদককে জানান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আলম বদলি হয়ে কর্মস্থল ত্যাগের পূর্ব মুহুর্তে ঐ প্রকৌশলীকে বিশেষ বরাদ্দের ব্যয়িত অর্থের ফাইল (কাগজ-পত্র) ঠিকঠাক করে নেয়ার পরামর্শ দেন বলেও তিনি জানান।

এদিকে, ঐ সময় তড়িঘড়ি করে ১৭ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্প সমুহের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে জানা যায়, আত্মসাতের উদ্দেশ্যে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম.কফিল উদ্দিন ও নির্বাহী অফিসার শাহিনুর আলম ২০১৩ সালের ৩০ জুনের পূর্ব মুহুর্তে তাড়াহুড়ো করে ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় স্টেডিয়ামে ১৩ লাখ টাকার পৃথক পৃথক বৃক্ষরোপন প্রকল্প দেখিয়ে সংশ্লিষ্টরা মিলে টাকা ভাগাভাগি করে নেন। এ ব্যাপারে তথ্য চেয়ে আবেদন করলে ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই সাংবাদিকদের বৃক্ষ রোপনের কথা লিখিতভাবে জানান। অনুসন্ধানে কোথাও বৃক্ষ রোপনের অস্তিত্ব না পাওয়ায় আবারও তথ্য অধিকার আইনে সাংবাদিকরা তথ্য চাইলে গত ১৭ সেপ্টেম্বর/১৩ইং এ দেয়া তথ্যে বৃক্ষরোপনের প্রকল্পগুলো আশ্চর্য যাদুর কাঠির জোড়ে তা বিভিন্ন ইউনিয়নে নলকুপ সরবরাহ, রাস্তা সংস্কার, সিন্থেটিক ব্যাগ ডাম্পিং এর মত কাল্পনিক প্রকল্পে রুপান্তরিত হয়।

অভিযোগ রয়েছে, অফিস সুপারিন্টেন্ডেন্ট জাহিদুল ইসলাম সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও তৎকালীন নির্বাহী অফিসারকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে রাজস্ব খাতের বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে কাগজ-কলমে ভুতুড়ে প্রকল্প দাখিল করে এসব টাকা আত্মসাতে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি’র একাধিক মহিলা ও পুরুষ সদস্য জানান, তাদের ইউনিয়ন পরিষদের অনুকুলে রাজস্ব খাত থেকে পাওয়া টাকার কোন বরাদ্দ কিংবা প্রকল্প গ্রহনের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। প্রকল্প বাস্তবায়ন তো দুরের কথা ! অভিযোগ রয়েছে, ভুতুড়ে প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৪০ শতাংশ টাকা নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের বেয়ারার চেক হাতে দেয়ায় অবশিষ্ট টাকা চেয়ারম্যানরা ইউপি সদস্যদের না জানিয়ে অত্যন্ত গোপনে তুলে কাজ না করে আত্মসাত করেন। এ বরাদ্দের কথা জানাজানি হলে চেয়ারম্যান ও পরিষদের সদস্যদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়।

এ ছাড়াও ল্যাপটপ ও কম্পিউটার মেরামতের নামে ১ লাখ ৩ হাজার এবং উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুকূলে ৩ লাখ টাকার খেলার সামগ্রী ক্রয় দেখানো হলেও উপজেলার কোথাও কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ক্লাবে খেলার সামগ্রী বিতরণের নজির পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সাথে যোগসাজশ করে ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে ঐ টাকা আত্মসাত করা হয়। অফিসের একটি সূত্র নিশ্চিত করে, ঐ সময় কোন কম্পিউটার ক্রয় কিংবা ল্যাপটপ মেরামত করা হয়নি। রাজস্ব খাতের অর্থ ব্যয়ে যে পরিমান সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজন ছিল, তা না করে যেনতেন ভাবে এ বিপুল পরিমান টাকা লুটপাট করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আলম বদলী হলে ঐ খাতের ২১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা অব্যয়িত থাকে। বিধি অনুযায়ী রাজস্ব খাতে বরাদ্দের টাকা ঐ অর্থ বছরে ব্যয় সম্ভব না হলে ৩০ জুনের পরে উদ্বৃত্ত্ব টাকা পরবর্তি অর্থ বছরে উন্নয়ন বরাদ্দের সাথে সমন্বয় হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান যোগদান করার পর গত ২৯ ডিসেম্বর/১৩ ইং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানের সর্বশেষ সভায় অব্যয়িত টাকার মধ্যে ১৯ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৯ টাকা এডিবি’র আদলে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সমুদয় টাকার দরপত্র আহবান না করে মাত্র ১১ লাখ ৬৩ হাজার টাকার দরপত্র আহবান করে। অবশিষ্ট ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৫৫৯ টাকার বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।

কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়,ঐ প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে আর.ই.কিউ পদ্ধতিতে অতি গোপনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার সামগ্রী সরবরাহের নামে ২ লাখ, বিভিন্ন ইউনিয়নে স্প্রে মেশিন সরবরাহের নামে ৪ লাখ, রিং স্লাব বিতরনের জন্য ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৫৯ টাকা উপজেলা প্রকৌশলী, স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা মিলে ভাগাভাগি করে নেন। এরপরও অব্যয়িত অর্থের ২ লাখ ১৭ হাজার ৪৪১ টাকার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। অফিস সুপারেন্টন্ডেন্ট এ টাকার বৈধ কোন হিসাব এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দেখাতে পারেনি । একাধিক সূত্র জানায়, এসব সরকারি অর্থ ব্যয়ে নাজুক অডিট ব্যবস্থাপনার কারনে প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকা কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও একশ্রেণির দূর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধিরা পকেটস্থ করছে। ফলে কোটি কোটি টাকা উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরকার বরাদ্দ দিলেও তা মাঠ পর্যায়ে দৃশ্যমান হচ্ছে না। তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনুর আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

উলিপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম.কফিল উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এমপিরা কোটি কোটি মারি খাচ্ছে,আমার এই কয়টা টাকার উপর তোমাদের নজর কেন ?

মন্তব্য করুন


 

Link copied