আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

জাতীয় শোক দিবসে নিন্দনীয় জন্মোৎসব এবং আমার কিছু অনুতাপ

সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০১৪, সকাল ০৯:৩১

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

একদা আমার মনে হলো- আজ আমি রাষ্ট্রপতি হলাম কী করে! লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেলই বা হওয়ার কী উপায় ছিল আমার! পূর্বসূরি জেনারেল জিয়াউর রহমানেরও কি তার সর্বোচ্চ পদে আসা সম্ভব ছিল? ওই যে লাল-সবুজ পতাকাটা উড়ছে- ওটাইবা কার দান? ওই পতাকা উড়ছে বলেই তো আজ আমি একটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি। আজ আমি যেখানে আছি- আমার আগে এখানে আরও একাধিকজন এসেছেন, আমার পরে আরও অগণিতজন এখানে আসবেন। এটা কার অবদান? যার অবদান তাকে আমরা সবাই চিনি ও জানি। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। কিন্তু তার স্বীকৃতি কোথায়? যিনি একটি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিলেন- একটি দেশের জন্ম দিলেন, সেই জন্মদাতাকে পিতা বলতে আমাদের কণ্ঠ স্তব্ধ কেন? তাই সেই ভাবনা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমি সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের জাতির পিতা বলে ঘোষণা দেব। কিন্তু আমি তা পারলাম না। কারণ আমি স্বৈরাচার হতে পারিনি। গণতান্ত্রিক নিয়ম মানতে চেয়েছি। সবার মতামত জানতে চেয়েছি।

যাদের সহযোগিতা নিয়ে আমি দেশ পরিচালনা করতাম- তাদের মতামতকে আমি গুরুত্ব দিয়ে চলেছি। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা ঘোষণা দিতে যাদের আপত্তি ছিল তারা এতটাই সোচ্চার হয়ে গেলেন, আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম। যাদের মৌন সম্মতি ছিল কিংবা সমর্থন ছিল, তারা বিরোধিতাকারীদের জান-বাজি আপত্তিতে কোণঠাসা হয়ে গেলেন। অগত্যা আমিও সেই সিদ্ধান্তকে গিলোটিনে পেঁৗছে দিলাম। আমি তথাকথিত 'স্বৈরাচার' হতে পারলাম না। তারপর যে কাজটা আমার হাতছাড়া হলো সেটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর প্রতিনিয়তই যন্ত্রণায় বিবেক বিধ্বস্ত হয়েছে। তারপরও সান্ত্বনা এই যে, দেরিতে হলেও সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ দেশ এবং এ জাতি তার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানটিকে যোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জনক। তাকে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাবে না। তার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করা স্বাধীনতাকেই অসম্মান করা, এ দেশের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। আমরা কে কোন দল করি, সেটা বড় কথা নয়। আমরা এক জাতি এবং এক দেশের নাগরিক। তেমনই আমাদের জাতির পিতাও এক। জাতির পিতা কোনো বিশেষ দলের সম্পত্তি নয়। তার মালিকানা গোটা জাতির। কিন্তু আমাদের বড় দুর্ভাগ্য, আমরা বিরূপ সমালোচনায় অত্যধিক পটু। আমাদের বোদ্ধা এবং বুদ্ধিজীবীরা এ বিষয়ে আরও বেশি অভিজ্ঞ। আজ যদি আমি বলি বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন আমার চেতনার পথ ও পাথেয়- তাহলে একটি মহল দ্বারা আমি অবধারিতভাবে অন্য একটি দলের দালাল বা তাঁবেদার বলে অভিহিত হব। যে কারণে আমি বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলে ঘোষণা দিতে পারিনি। কিন্তু আজ মনে হয় কত বড় ভুল আমি করেছি! কবরে শায়িত জাতির পিতা প্রথমবারের মতো যে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের কাছ থেকে স্যালুট পেয়েছিলেন- সেই সম্মান প্রদর্শনের বিরল সৌভাগ্য ছিল আমার। তখনো যে সমালোচনা হয়নি তাও নয়। তখনো যে টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার পথে বাধা আসেনি, তাও নয়। তবে তা সবাই উপেক্ষা করলেও ওই একটি ক্ষেত্রে তীব্র বিরোধিতাকে আমলে নিয়ে মহৎ কাজটি করতে পারিনি। তবে একটি প্রশ্ন আমাকে বারে বারে বিদ্ধ করে। ১৯৮৬ সালের পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগপ্রধান বিরোধী দলে ছিলেন। তাদের দাবি-দাওয়ার প্রতি আমার সরকার ছিল সব সময় নমনীয়। সেই সময় কেন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল এবং বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা ঘোষণার দাবি জানাল না- তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। তাহলে অন্তত ৩০-৩৫ বছর বয়সের প্রজন্ম অনেক আগেই বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে চিনে আসত। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি এবং মনে করি, বঙ্গবন্ধুকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে সর্বসম্মতভাবে জাতির পিতা হিসেবে মেনে নিতে না পারলে রাজনৈতিক হিংসা-হানাহানির অবসান ঘটবে না এবং জাতি কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না।

আজ একটি পক্ষ শোক দিবসে জন্মদিন পালন করে বিকৃত মানসিকতা নিয়ে উৎসব করে। যারা এটা পালন করেন তারা সমালোচনার মুখে যুক্তি দেখান যে, '১৫ আগস্ট যারা জন্মগ্রহণ করে তারা কি জন্মদিন পালন করবে না? ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করা কি নিষিদ্ধ করা হয়েছে?' এরকম যুক্তি দেখানো যেতে পারে। যে যা করে তার পক্ষে যুক্তির অভাব থাকে না। চোর যে চুরি করে তার জন্যও সে বিবেকের কাছে একটা যুক্তি দেখায়-'খাব কি- পেটের দায়ে চুরি করি'। কিন্তু কাজটা তো অন্যায়। কোনো অন্যায়কে আমরা প্রশ্রয় দিতে পারি না। বেগম জিয়া যে অবস্থানে আছেন- সেই অবস্থানে থেকে শোক দিবসে তার মনগড়া জন্মদিন পালন করা অনৈতিক। এটা তিনি করতে পারেন না। একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর অনুভূতিকে আঘাত করা অন্যায়। এটা করে তিনি রাজনৈতিক হানাহানিকে উসকে দিচ্ছেন। গোটা জাতিকে বিভক্ত করছেন। জাতীয় কোনো ইস্যুতেও গোটা জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথকে রুদ্ধ করে দিচ্ছেন। আমরা তার প্রমাণ হাতে হাতে দেখছি। আজকের বিএনপি রাজনৈতিকভাবে খাদে পড়ে সংলাপের দাবি তুলছে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী কী বলছেন? তিনি বলছেন- 'কীসের সংলাপ? কার সঙ্গে সংলাপে বসব? যারা আমাকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করতে চেয়েছে- তাদের সঙ্গে সংলাপে বসব? যারা শোক দিবসে জন্মদিনের নামে উৎসব করে, তাদের সঙ্গে সংলাপে বসব?' নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব কথার যুক্তি আছে। সেই যুক্তিতে তিনি বেগম খালেদা জিয়া কিংবা তার দলের সঙ্গে কোনো সংলাপ চাচ্ছেন না। তাহলে এই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ থাকলে তার মীমাংসা হবে কীভাবে?

আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হাসিনা-খালেদা তো একসঙ্গে বসেছিলেন। তখন বেগম খালেদার জন্মদিন ১৫ আগস্ট ছিল না এবং তখন পর্যন্ত খালেদার দল শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টাও চালায়নি। হয়তো তাই তারা একসঙ্গে বসতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেই সম্ভাবনা এখন আর দেখছি না। কারণ শেখ হাসিনা আর যা-ই কিছু করতে পারেন না কেন- তার পিতার রক্তের অবমাননা করতে পারবেন না। কারও পক্ষে তা পারা সম্ভবও নয়। বেগম জিয়ার এমন কি প্রয়োজন ছিল যে, শেষ বয়সে এসে শুধু বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের দিবসটিকে বিদ্রূপ করার জন্য তাকে একটি সাজানো জন্মদিন পালন করতে হবে! কোনো নথিপত্র, প্রমাণাদি বলছে না যে- ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন। তিনি প্রথম যেবার ক্ষমতায় এলেন তখনো তার জন্মদিন ১৫ আগস্ট ছিল না। আমি দীর্ঘদিন জেনারেল জিয়ার কাছাকাছি, পাশাপাশি এবং তার ঘনিষ্ঠ ছিলাম। আজও তাকে সম্মান করি। কোনো দিন জেনারেল জিয়াকে ১৫ আগস্ট তার স্ত্রীর জন্মদিন পালন করতে দেখিনি। তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নিই যে, বেগম জিয়ার ঘোষিত তারিখটিই তার সঠিক জন্মদিন- তাহলেও কি ওই সেনসেটিভ দিনে তার কেককাটা উৎসব পালন করা সঠিক হচ্ছে? বরং তিনি যদি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর দিনটিতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আগে-পরের কোনো দিনে ওই কেককাটার উৎসব করেন- তাহলে তার মহত্ত্বই প্রকাশ পেত। ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথও জনগণের সুবিধার্থে তার সঠিক জন্মদিনের উৎসব ডিসেম্বরে করেন না। কারণ তখন বড়দিন এবং শীতের তীব্রতার জন্য জুলাই মাসে ব্রিটেনের রানীর জন্মদিন পালন করা হয়। এতে কি তার জন্মদিনের মাহাত্দ্য ম্লান হয়ে যায়? ১৫ আগস্টকে একটি 'তৃপ্তিদায়ক দিন' হিসেবে উদযাপন করার জন্য জেনারেল জিয়ার শাসনামলে তারই পৃষ্ঠপোষকতায় আরেকটি স্বাধীনতাবিরোধী দল সবুর খানের মুসলিম লীগ ওই দিনটিকে 'নাজাত দিবস' নামে পালন করত। বেগম জিয়ার নতুন জন্মদিবস পালনের সঙ্গে ওই নাজাত দিবসের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাসের কি নির্মম পরিহাস! সেই নাজাত দিবসও আর নেই এবং মুসলিম লীগও বিলীন। একটি কথা আছে- 'অগ্রজ যেদিকে ধায়- অনুজও সে পথে যায়।'

খালেদার বিএনপি কোন পথে যাবে তা নিয়ে আমার মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই- কিন্তু যে বিষবৃক্ষটি রোপণ করে যাচ্ছেন, তার ফলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, হিংসা-হানাহানি এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ মহামারী আকার ধারণ করছে। একজন মুজিব-প্রেমিক যদি দেখেন- শোক দিবসে আরেকটি পক্ষ উৎসব করছে- তাহলে এই দুই পক্ষের মধ্যে সহাবস্থান কস্মিনকালেও কী আশা করা যায়? এটা চরম নিন্দার ও ঘৃণার। মাথাব্যথা সেখানেই যে, এসবের বিরূপ ফল ভোগ করতে হচ্ছে গোটা জাতিকে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

লেখক : সাবেক রাষ্ট্রপতি।

মন্তব্য করুন


 

Link copied