ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে গতকাল পানি বিপদ সীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও তিস্তার পানি উল্লেখযোগ্য পরিমানে হ্রাস পাওয়ায় তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চলগুলোর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এদিকে, ভারত থেকে নেমে আসা পাহড়ী ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমোর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব নদী অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। নতুন নতুন চরে পানি উঠায় মানুষজন হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল নিয়ে উচু এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছে। এ অবস্থা বিরাজ করছে জেলার ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার নদী বেষ্টিত বিভিন্ন চরে। এরই মধ্যে চরাঞ্চলের প্রায় ৭০/৮০ হাজার মানুষ সরাসরি বন্যায় আক্রান্ত হয়ে নিদারুন কষ্টে রয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে খবর পাওয়া গেছে। এ কারনে অনেকে খোলা আকাশের নীচে নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এসব এলাকার ২৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ও শাক সবজি তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট । বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বৃদ্ধ ও শিশুদের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যা কবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি তেমন কোন সাহায্য-সহযোগীতা প্রদানের তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।
অন্যদিকে, জেলার ভিতর বিশাল উঁচু অঞ্চলজুড়ে এখনো তীব্র ক্ষরা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ভরা বর্ষা মৌসুমেও অনাবৃষ্টির কারনে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত বুড়ি তিস্তাসহ এসব এলাকার খাল, বিল ও নালা পানিশুন্য রয়েছে। ফলে কৃষকদের উৎপাদিত পাট পঁচানোসহ আমন চারা রোপন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় শুষ্ক মৌসুমের মত সেচ দিয়ে আমন চারা লাগানোর পাশাপাশি খাল বিলে পানি তুলে পাট পঁচাতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত খরচের বোঝা যেন কৃষকদের মাথায় বজ্রপাত হয়েছে।
এ অবস্থা দেখা গেছে, জেলার সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী, বেলগাছা, রাজারহাটের ওমরমজিদ, নাজিমখাঁ, চাকিরপশার, উলিপুর উপজেলার পান্ডুল, ধামশ্রেণী, ধরনীবাড়ী, তবকপুর, উলিপুর পৌর এলাকাসহ উঁচু অঞ্চলগুলোতে। গতকালও যখন ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বৃদ্ধি পাচ্ছিল তখন চিলমারী থেকে বাঁধের ভিতর উলিপুরের উপর দিয়ে প্রবাহিত বুড়ি তিস্তাসহ অধিকাংশ খাল-বিল শুকনা ছিল। এসব খালবিলে এখনো গরু-ছাগল চড়ানো হচ্ছে। অথচ বর্ষা মৌসুমে এসব খালবিল ও বুড়ি তিস্তা পানিতে টই-টুম্বর ছিল। এসব পানিতেই চাষিরা তাদের সোনালী আঁশ পাট পঁচাতো। সেসব খালবিল এখন শুধুই খাঁ খাঁ করছে।
জেলা প্রশাসক এ বি এম আজাদ জানান, বানভাসীদের জন্য ইতিমধ্যে ১০৮ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দু এক দিনের মধ্যেই তা বিতরণ শুরু হবে। পানি উন্ননয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নুন খাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে,ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি হ্রাস পেয়েছে।