আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

অভাব ওদের ছাড়েনি,ওরাও ছাড়েনি সাফল্যকে

সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০১৪, সকাল ০৯:২৮

সিদ্দিকুর রহমান,ফুলবাড়ী,(কুড়িগ্রাম): কারো শেষ সম্বল সেলাই মেশিনটাও বিক্রি করে ফরম ফিলাপ করা হলো,কেউ ঔষুধের দোকানে কাজ করত ,কেউবা টিউশনি করিয়ে চালাত পড়ার খরচ। কেউবা বাবার সঙ্গে কাজে করে বাবাকে সাহায্য করত টাকার জন্য,কেউ কষ্ট করা মায়ের ঝিয়ের টাকায় পড়াশুনা চালাত, বাবার সাথে দোকান চালাত কেউ,কেউ অন্যের সাহায্যে নিয়ে পড়াশুনা চালাত পড়ালেখা। আবার অন্যের জমিতে কাজ করে বাবাকে সহযোগিতা করত বীর,খেয়ে না খেয়ে পড়তে হত কাউকে। কারোবা দিনে পড়ার সুযোগ হত না। এরা সবাই এবার এইচএসসি পরীক্ষায় বিজয় ছিনিয়ে এনছে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার এসব এইচএসসি’র বীরদের নিয়ে গল্প গাথাঁ গল্প নিয়ে আজকের প্রতিবেদনঃ-

মৌরীর বাবা শৈলেন্দ্র রিক্স্রা চালক। মা বাসস্তী রাণী। উপজেলার নওদাবশ গ্রামে তাদের বাড়ী। সারাদিন রিক্স্রা চালিয়ে যে উপার্জন হয় তা নিয়ে পাচঁ ছেলে মেয়ের ভরণ পোষণ চালানো দায়। তারপরও লেখাপড়াসহ সবকিছুর চালাতে হয় শৈলেন্দ্রকে। বাসন্তী রাণীর একমাত্র সম্বল সেলাই মেশিনে যা সামান্য আয় হয় তাও চলে যায় সংসারের ঘানি টানতে। ধণাঢ্য পরিবারের সন্তান বাসন্তী রাণী লজ্জায় স্বামীর অভাবের কথা কাউকে বলতেও পারেন না, কারো বাড়ীতে কাজও করতে পারেন না। দিন কাটে তাদের খেয়ে না খেয়ে অথবা আধ পেটা খেয়ে। কোনো কোনো দিন দারিদ্রের দাপটে উপোষে কাটে দিনরাত্রী। বাসন্তী রাণীর একমাত্র উপার্জনের একটি সেলাই মেশিন সেটাও অভাবের চোটে বিক্রি করে পরীক্ষার মৌরীর পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে হয়েছে। ২ শতক জমির উপর তাদের ভাঙ্গাচোড়া দু’টি ঘর। সামান্য বৃষ্টিতে পানি পড়ে। বৃষ্টির সময় দিন রাত বসে বসে ভিজতে হয় সবাইকে। রাবাইতারী আর্দশ বালিকা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে বাণিজ্য বিভাগে পড়ে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে মায়ের সম্বল বিক্রির ফল দিয়েছে মৌরী। স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছে ব্যংকার হওয়ার। আশায় বুক বাধঁছে মৌরী আর মৌরীর পরিবার। কিন্তু...থেকে যায় অজানা আশংকা পারবে তো খরচ যোগাতে।

GPA2 Rafiqulঔষুধের দোকানে কাজ করত রফিকুলঃ- পেটে ক্ষুধা নিয়ে ধার করা বই দিয়ে পড়াশোনা করেছিল রফিকুল ইসলাম । পড়াশোনার টিকিয়ে রাখতে টিউশনি আর অন্যের ঔষদের দোকানে মজুরির কাজ করিয়ে করেছিল সে। নইলে পড়াই হত না। রফিকুল ফুলবাড়ী ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি.-তে জিপিএ-৫ পেয়েছে। পড়াশুনা করেছে মানবিক বিভাগে। মা মারা গেছেন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে রফিকুল তৃতীয়। বাবা শাহেব আলী ৬ শতাংশ জমিতে বাড়ী করেছেন উপজেলার চন্দ্রখানার কলেজটারী গ্রামে। নিজে ঠেলা গাড়ী চালান। তাতে সংসারে চলে না। অভাব অনটন আষ্টেপিষ্টে থাকত নিত্য সঙ্গী হয়ে। তারপরও ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি রফিকুলের পড়াশুনায়। রফিকুল ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অনুষদে লেখাপড়া করে মানুষকে আইনীসেবা দিতে চায়। তবে তার লেখাপড়া ও সংসারের খরচ কি ভাবে চলবে তা নিয়ে চিন্তিত সে ও তার পরিবার।

GPA3 Sujonটিউশনি করিয়ে চলত সুজনের পড়ার খরচ:- অতিকষ্টে টিউশনি চালিয়ে শাহিন আলম সুজন পড়া শুনা করত। অন্যের জমিতে দিনে দিনমজুরি করে রাত জেগে পড়াশুনা চালাত সুজন। কোনো কোন দিন না খেয়েই চলে যেত। কাশিপুর ডিগ্রী মহাবিদ্যালয় থেকে বানিজ্য বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে জিপি- ৫পেয়েছে সে। বাবা সঙ্গে গুড় বিক্রির পাশাপাশি ৫ ঘন্টা লেখাপড়া করে । বাবা মমিনুল ইসলাম গ্রামের বাড়ীতে বাড়ীতে ফেরি করে গুড় বিক্রি করেন। মা শাহিদা বেগম একজন গৃহিনী। বাবার ৮ শতক জমির উপর সুজনদের বসবাস । ভবিষ্যত ব্যাংকার হতে চায় সুজন কিন্তু আর্থিক সংকট জাকে বসেছে তাকে।

GPA4 Sumonবাবার সঙ্গে কাজে যেত সুমন সরকারঃ- ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুরের ধর্মপুর গ্রামে হিন্দু পাড়ায় সুমনদের বাড়ী । বাবা দিনেশ চন্দ্র সরকার দিনমজুরী করেন। সংসারের অভাব ঘুচাতে বাবার সঙ্গে কাজে যেত সুমন । মা রাণী বালা সরকার ঝিয়ের কাজের পাশাপাশি অন্যের জমিতে কাজ করতেন। তারপরও বন্ধ করেননি দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগানো। ৬ শতক জমির উপর তাদের বমতবাড়ী। মানবিক শাখায় কাশিপুুুর ডিগ্রী মহাবিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫পেয়েছে সুমন। ভবিষ্যত সে বিসিএস ক্যাডার অফিসার হয়ে বাবা-মায়ের কষ্ট দুর করতে চায় সে। কিন্তু বাধঁ সাধতে দেখে অভাব নামের দানবকে। তার স্বপ্ন কি পুরণে আরও কষ্ট করবে সুমন। তবুও শংকিত সুমনের পরিবার।

GPA5 Morshedমায়ের ঝিয়ের টাকায় মোর্শেদের জয়ঃ- বাবা আব্দুস ছামাদ বার বছর আগে মারা গেছেন। মা মর্জিনা অন্যের বাড়ীতে ঝিগিরি করে কোন রকমে জীবন জীবিকা করেন। তারপরও বাবাহীন রায়হানের লেখাপড়ার খরচ জোগান মা। উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে তাদের বাড়ী। কাশিপুর ডিগ্রী মহাবিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে মোর্শেদ রায়হান। স্মামীর রেখে যাওয়া ৫ শতক জমিতে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কোণাঠাসা হয়ে পড়ে আছেন মর্জিনা। অন্যের সাহায্য আর নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যের ছেলে মেয়েদের টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাত র্মোশৈদ রায়হান।

GPA6 Shahinurবাবার সাথে দোকান চালাত শাহিনুরঃ- ফুলবাড়ী সীমান্তের আব্দুল্যাহ্ বাজারের পাশেই শাহিনুরদের বাড়ী। অভাবের তাড়নায় জীবন যেখানে বির্পযস্ত সেখানে স্বপ্ন তাকে তাড়িত করে লেখা পড়া শিখে বড় হওয়ার। আর এই স্বপ্ন পুরণে শাহিনুরকে এস এস সি- পরীক্ষা দিয়েছে গোন্ডেন- জিপিএ-৫। এবারের এইচএসসি পরীক্ষাও দিয়েছে জিপিএ ৫। কাশিপুর ডিগ্রী মহাবিদ্যালয় থেকে শাহিনুর সাফল্য এনছে বিজ্ঞান থেকে। মা শামছুন্নাহার গৃহীনি বাবা আব্দুল হামিদ পানের দোকানদার। ছয় ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ শাহিনুর। বাবা আব্দুল হামিদ দোকানের কাজ একজনে সামাল দিতে পারেন না। অন্য লোককে নেওয়ার সামর্থ্যও নেই। অগত্যা শাহিনুরের উপর চাপ। বাবার সাথে দোকান চালানো আর লেখাপড়া। দিনে সন্ধ্যেয় দোকান চালানোয় রাত জেগে পড়তে হত শাহিনুরকে। প্রাইভেট পড়ার মত কোন সার্মথ্য ছিল না শাহিনুদের। বাড়ীতে নিজের চেষ্টায় পড়াশুনা করে কাশিপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫পেয়েছে শাহিনুর। পৈর্তৃক ৫ শতক জমির উপর কুড়ে ঘর তুলে বাস করেন তারা । শাহিনুরের ইচ্ছা ডাক্তার হয়ে অসুস্থ্য মানুষের সেবা করা।

GPA7 Boshirulঅন্যের সাহায্যে চলত বশিরুলের পড়ালেখাঃ- বশিরুলের বাবা জয়নাল আবেদীন মারা গেছেন দীর্ঘদিন হলো। মা রোকসানারা বিথীসহ উপজেলার ধর্মপুর গ্রামে মামার বাড়ীতে তাদের বসবাস। বাবা হারা একমাত্র সন্তান বশিরুল হাসান মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশের সেবায় মশগুল থাকবে এটাই মা রোকসানারা বিথীর স্বপ্ন। মানুষ হওয়ার আগে পড়াশুনার দরকার কিন্তু বশিরুলের লেখাপড়ার খরচ যোগাবে তা নিয়ে চিন্তিত রোকসানারা। বশিরুল নিজের পড়াশুনার পাশাপাশি অন্যকে পড়িয়ে ও অন্যের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে বশিরুলের এগিয়ে চলা। কিন্তু এরপর? বশিরুলের স্বপ্ন মায়ের আশা পুরণ করে বিসিএস ক্যাডার যে কোনো বিভাগের অফিসার হবে সে। বশিরুল হাসান কাশিপুর ডিগ্রী মহাবিদ্যালয় থেকে মানবিক শাখায় জিপিএ ৫ পেয়েছে।

GPA8 Rotonঅন্যের জমিতে কাজ করে বাবাকে সহযোগিতা করত রতন:- এস এস সি পরীক্ষায় জিপিএ ৫পেয়েছে রতন। এবারের এইচ এস সি পরীক্ষায় ফুলবাড়ী ডিগ্রী কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ ৫পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সবাইকে। বাবা মোকসেন আলী। বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতে বাবার সাথে কাজে যেত রতন। মা রোকেয়া বেগম। সবার মুখ উজ্জল করেছে। রতন হতে চায় ডাক্তার। ৮শতক জমির উপর তাদের বাড়ী। তিন ভাইয়ের মধ্যে রতন সবার বড়। বাবা বড়লই বাজারের আশে পাশে প্রতিদিন অন্যের জমিতে দিন মজুরী করে সংসার চালান। কোনো রকমে সংসারের দিন কেটে যায়। পরীক্ষার ফলাফলে যেমন আনন্দিত তারা তেমনি শংকিত উচ্চত্র শিক্ষা নিয়ে। রতন ডাক্তার হতে পারবে তো? পড়াশুনার অনেক খরচ, যোগাতে পারবে তো তার পরিবার? হিমশিম খাওয়া রতনদের সিদ্ধান্ত নিতেও হিমশিম খেতে হয়। তারপরও হাল ছাড়তে নারাজ রতন ও রতনের পরিবার।

GPA9 Laizuখেয়ে না খেয়ে পড়তে হত লাইজুকে:- উপজেলার সীমান্ত ঘেষা গোড়কমন্ডপ গ্রামে তার বাড়ী। প্রতিদিন ৭ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে আসতে হত নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজে। কষ্ট করে লেখাপড়ার প্রতিদানে পেয়েছে জিপিএ-৫ পেয়ে। বাবা রজব আলীর ৬ শতাংশ জমির উপর বাড়ী। ৪ বোন ২ ভাইয়ের সব ছোট লাইজু। সবার লেখাপড়ার খরচ যোগাতে না পাড়ায় বাবা দিনমজুরী ও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে সংসার চালান। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মত অতিকষ্টে খেয়ে না খেয়ে পড়তে হয়েছে লাইজুকে। মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন রজব আলী। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায় লাইজু। পড়াশুনা চালোনো নিয়ে সংশয়ে লাইজুর মত লাইজুর বাবা রজব আলীও। তার পরেও তার আশা আর স্বপ্নের শেষ নেই। ভবিষ্যত প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে স্বপ্ন পুরণের স্বপ্ন দেখে লাইজু।

দিনে পড়ার সুযোগ হত না নাজমুলেরঃ- ফুলবাড়ীর কুঠিচন্দ্রখানা গ্রামের মোহরটারীতে নাজমুলদের বাড়ী। অভাবের তাড়নায় বিষন্ন জীবনের স্বপ্নGPA10 Nazmul আলোড়িত করে নাজমুলের এবারের এইচ এস সি পরীক্ষার ফলাফল। লেখাপড়া শিখে বড় হবে। স্বপ্ন পুরণে এসএসসি-তেও আলোড়িত করেছিল জিপিএ ৫ পাওয়া। নাজমুলও কাশিপুর ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে। মা নাজমা বেগম গৃহীণি। বাবা এনামুল হক দিন মজুরীর পাশাপাশী গ্রামের বাজারে মুদির দোকান করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নাজমুল বড়। বাবার একার উপার্জনে সংসার চলে না। তাই মাঝে মাঝে বাবার সঙ্গে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালাত নাজমুল। রাত ছাড়া দিনে পড়ার সুযোগ হত না নাজমুলের। কলেজও কামাই হত মাঝে মধ্যে। প্রাইভেট পড়ার মত সামর্থ্য নেই। বাড়ীতে নিজের চেষ্টায় পড়াশুনা করে বিজ্ঞান বিভাগে পাশ করেছে নাজমুল। পৈত্রিক ৪ শতাংশ জমিতে বাস। নাজমুলের ইচ্ছা ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার।

মন্তব্য করুন


 

Link copied