চিঠিতে লেখা আছে, ‘আব্বু বিদেশে। মা কাছে থেকেও দূরে। ফলে একা একাই খাওয়া, স্কুলে যাওয়া আবার স্কুল থেকে এসে নিজেদের মতো করে সময় কাটানো। বাবা-মায়ের আদর-সোহাগ থেকে বঞ্চিত হয়ে সারাদিন একাকিত্ব জীবন কাটানো।’
এই একাকিত্বের ইতি টানতে অবশেষে পরপারে পাড়ি জমান দুই ভাইবোন। সুইসাইডাল নোটের প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা আছে ‘এমন দেশে যাচ্ছি, যেখান থেকে আর কখনো ফিরে আসা যাবে না’। ইংরেজিতে লেখা ছয় পৃষ্ঠার একটি খাতায় শুধু হতাশার কথাই লেখা।
জানা গেছে, মুনমুন ও আলিম মায়ের সঙ্গে থাকত। মুনমুন স্থানীয় একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ‘ও’ লেভেলে আর আলিম ৯ম শ্রেণিতে পড়ত। প্রায় ৭ বছর আগে তাদের বাবা আলিমুল হকের সঙ্গে মা জয়শ্রী জাহানের বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে তাদের বাবা দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে চীনে বসবাস করছেন। আর তারা উত্তরায় মায়ের সঙ্গে থাকতেন। মা জয়শ্রী বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে ওই বাসার ৫ম তলার পৃথক দুটি রুম থেকে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। উদ্ধারের সময় তাদের শরীরে কোনো আঘাতে চিহ্ন ছিল না বলে জানায় পুলিশ।
নিহতদের আত্মীয় ডা. ইলিয়াস জানান, সোমবার রাত ৯টা ২৩ মিনিটে মা জয়শ্রী জাহানের সঙ্গে মুনমুন ও আলিমের শেষ কথা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে মা বাসায় ফেরেন। এ সময় জয়শ্রী দরজা খুলতে বললে ভেতর থেকে কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে লোকজন নিয়ে পাশের রুমে গিয়ে বাইরে থেকে লাঠি দিয়ে দরজা খোলেন। পরে পৃথক দুই রুমে গিয়ে মুনমুন ও আলিমের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে, দুপুরে ঢামেক মর্গে নিহতের খালু এম জামান জানান, ময়নাতদন্ত শেষে লাশ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে। কিন্তু মুনমুন ও আলিম কী কারণে আত্মহত্যা করেছে, তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। হতাশার কারণে তারা আত্মহত্যা করতে পারে বলে ধারণা করছেন এম জামান।
উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন জানান, চিরকুটের লেখা অনুযায়ী, বাবা-মায়ের ডিভোর্সের পর বাবা তাদের খোঁজ-খবর না রাখায় এবং চাকুরে মা সময় দিতে না পারায় তারা দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভুগছিল। হয়তো এ কারণেই তারা আত্মহত্যা করেছে। তবু বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।