আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

রসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভোট ৪ ভাগে বিভক্ত : কে হবেন নগর পিতা?

সোমবার, ১৯ নভেম্বর ২০১২, রাত ১২:৫০

তাজিদুল ইসলাম লাল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক,দৈনিক প্রথম খবর: 

কার ভোট কে দখলে নিতে পারবে, কাকে হাতে রাখলে ভোট ব্যাংক নিজের দখলে আসবে এ নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিচার-বিশ্লেষণ। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ এবং জাপার মধ্যে বেশ কয়েকজন হ্যাভিওয়েট প্রার্থী অপর প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে জোড় তদবির শুরু করছেন বলে নগর জুড়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে। কে কাকে ডিগবাজি দিয়ে নগর পিতা হবেন এ নিয়েও শুরু হয়েছে কাঁদা ছুড়াছুড়ি। জানা গেছে, জাতীয় পার্টির দুর্গখ্যাত রংপুরে রসিক নির্বাচন নিয়ে কলহের আগুনে পড়–ছে। এখনো কোনো সমাধান না হওয়ায় এরই মধ্যে ভোটাররা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। জাপার এ ভোট আওয়ামী লীগ তাদের পক্ষে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সে কারণে কাকে দলীয় সমর্থন দিলে এসব ভোট দখলে আনা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হবে তা নিয়ে চলছে গোপন বৈঠক। একটি সূত্র জানিয়েছে, এরশাদের এ ভোট ব্যাংক ভাঙতে নীরব কৌশল অবলম্বন করছে আওয়ামী লীগ। এরশাদের জাপা আর তৃণমুল জাপার প্রকাশ্য কোন্দল তার ওপরে রংপুর সিটি নির্বাচনে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশার হঠাৎ উত্থান বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে। রংপুরের প্রভাবশালী জাপার তিন নেতা যে কেউ আশ্রয় দিলেই তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন বলে বিভিন্ন মিডিয়াতে ফলাও করে প্রকাশ করা হচ্ছে। রংপুরের রাজনীতিতে বিদিশার পেছনে কে নাড়াচাড়া করছে তাই খুঁজছে জাতীয় পার্টি। বিদিশার এ হঠাৎ উত্থানে দারুণ বিচলিত এরশাদ প্রিয় রংপুরের সাধারণ ভোটাররা। এদিকে ভোটাররাই সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না কাকে ভোটে নির্বাচিত করে নগর পিতার আসনে বসাবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় এ নির্বাচনে দলের চেয়ে ব্যক্তি ইমেজে ভোট পাবেন প্রার্থীরা। তবে এ নির্বাচনকে ঘিরে আগামী জাতীয় নির্বাচন টার্গেট করা হচ্ছে। কোনোভাবেই এরশাদের দুর্গে তার প্রার্থীকে হারাতে পারলে রংপুরের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হবে। নির্বাচন অফিস সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ১৪ জন মেয়র এবং ৫ শতাধিক কাউন্সিলর মনোনয়ন পত্র কিনেছেন। তারা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক ৫ জন, জাতীয় পার্টির ৩ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১ জন (চরমোনাই পীর সমর্থিত) রয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রংপুরের রাজনীতিতে এরশাদের একটা ব্যক্তি ইমেজ আছে। সে ইমেজ আগের চেয়ে অনেক ভাটা পড়ে গেছে। তবে এ ইমেজ তো শুধুই তার ক্ষেত্রে। এরশাদের পরিবর্তে তার নির্বাচিত কোনো প্রতিনিধির জন্য এ ইমেজটা কাজে লাগছে না। ৯০ সালে তিনি যখন কারাবরণ করেন, তখন রংপুরের আপামর জনতা তাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে ভোট পেলেও সর্বশেষ নবম জাতীয় নির্বাচনে তিনি রংপুর সদর আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। ভোট পেয়েছেন ২ লাখ ৪২ হাজার। ওই আসন থেকে উপনির্বাচনে তারা পত্মী রওশন এরশাদ পেয়েছেন মাত্র ৮৭ হাজার ভোট। এখন এ ৮৭ হাজার ভোট জাতীয় পার্টির মুল ভোট বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ ভোট রয়েছে। জাতীয় পার্টির তিন প্রার্থী কেউ নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে এ ভোট মুলত চারভাগে বিভক্ত হবে। সূত্র বলছে, দলীয় মনোনয়ন না পেলেও জাপার এ ভোটের ভাগ পাবে সদ্য পদত্যাগকারী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাবেক রংপুর পৌরসভার মেয়র একেএম আব্দুর রউফ মানিক, সাবেক জাপা নেতা এবং বর্তমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরিফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু এবং এরশাদের মনোনীত প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গা। সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সদরের ওয়ার্ডগুলোতে ভালো একটা অবস্থান রয়েছে। তৃণমূল ভোটারদের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। এদিকে, সাবেক মেয়র আব্দুর রউফ মানিক মেয়র থাকাকালীন শহরের রাস্তাঘাট ড্রেন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এ কারণে তারও একটা (আগের পৌর এলাকায়) ভালো পরিচিতি আছে। অপরদিকে, জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গা এরশাদের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচিত হতে চান। সাবেক সংসদ সদস্য শরিফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টুও মেয়র ও উপজেলার চেয়ারম্যান এবং এমপি থাকাকালীন অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এ কারণে তিনিও আশাবাদী। পূর্বের ভোট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিএনপি এবং জামায়াতেরও ভোট ব্যাংক রয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের কোনো প্রার্থী না থাকায় তাদের ভোট ৩ ভাগ হবে। এ ভোটগুলোকে নিজের করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মেয়র প্রার্থীরা। এ চার প্রার্থীর মধ্যেই নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এরশাদ কাউকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে জিতবেন এমন শতভাগ নিশ্চিয়তা নেই রংপুরে। তবে এ অবস্থা উত্তরনে এরশাদের শক্ত অবস্থানে আসা দরকার বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। জাপার একটি সূত্র জানিয়েছে, মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ স্বয়ং তার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী না দিয়ে বরং তার প্রার্থীকেই মহাজোটের প্রার্থী বলে সমর্থন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সে কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কাউকেই সমর্থন দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ শরিফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর পক্ষে কাজ করবে বলে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগও চাচ্ছেন না এরশাদের মনোনীত প্রার্থী সিটির মেয়র হোক। সে কারণে তারা জাতীয় পার্টির ভোট নিজ দলের আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। রংপুর সিটি করপোরেশনের এ নির্বাচনে এখনো কে বেরিয়ে আসবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী থাকলে তাকে ডিঙ্গিয়ে অন্য প্রার্থীর মেয়র হওয়া দুস্কর। আর দলের একাধিক প্রার্থী থাকলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নতুন এ নগরের পিতা হওয়ার সুযোগ হারাতে পারেন বলেও সমালোচকরা ধারণা করছেন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied