আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

১৬ বছর প্রণয় অতপর পরিণয়

শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪, বিকাল ০৬:০৬

প্রেম শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই সবার কাছে তাদের প্রেমের খবর পৌছে যায়। তবে তাদের পবিত্র ভালোবাসায় কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। না কোন সহপাঠী, না শিক্ষক আর না অভিভাবক।

প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া, এক সাথে মাঠে বসে দীর্ঘক্ষণ গল্প করা, ঘুরে বেড়ানো ভালোভাবেই তাদের দিন কেটে যায়। মাঝে মাঝে ঝড়গা আবার মিলন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে আসে কঠিন নির্দেশ। জুড়ে দেয়া হয় শর্ত। সম্পর্ক মেনে নেয়া হবে তবে উভয়কে ভালোভাবে লেখাপড়া সম্পন্ন করতে হবে। এরপর থেকে শুরু হয়ে তাদের নতুন অধ্যাবসায়। প্রেমের সাথে সাথে চলল লেখাপড়া।

রাসেল মাধ্যমিক পাশ করে ভজনপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, দিনাজপুর আইন কলেজ থেকে এল এল বি, ও রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। মর্জিনা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর রাসেলের সাথে একই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও অনার্স- মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। দুজনেই তাদের জীবনের লক্ষ্য ও প্রেমকে সার্থক করার লক্ষ্যে ছিলেন অটুট। তাই মাস্টার্স পাশের পর পরই অভিভাবকরাও তাদের প্রতিশ্র“তি পূরণ করেছেন। দিয়েছেন তাদের পারিবারিক স্বীকৃতি। মহা ধুমধামে এই প্রেমিক জুটির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

ভজনপুর এলাকার মইনুল ইসলাম সরকার বলেন, তারা ঘন্টার পর ঘন্টা মাঠে বসে গল্প করতো। কেউ তাদের বিরক্ত করতো না। পারলে কেউ কেউ তাদের জন্য বাদাম, চানাচুর ইত্যাদি কিনে দিয়ে আসতো।

ভজনপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন, ওরা দুজনে নিয়মিত কলেজে আসতো। তাই শিক্ষকদের জন্য যখন নাস্তার ব্যবস্থা করা হতো তখন তাদের জন্যও নাস্তার ব্যবস্থা করা হতো। কারণ ওরা ক্লাশ শেষে বিকেল পর্যন্ত মাঠে বসে গল্প করতো। ওদের বিয়ের খবর শুনে ভালো লাগলো।

রাসেলের পিতা খোকন প্রধান বলেন, আমরা কখনই তাদের বাঁধা দেইনি। ওরা দুজনে আমাদের শর্ত পূরণ করেছে। আমরা খুব খুশি হয়েছি।

মর্জিনা আক্তার বলেন, আমরা দুজনে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করতাম। ছোট থেকে কেউ আমাদের বাঁধা দেয়নি। সবাই আমাদের পবিত্র প্রেমকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা অনেক খুশি। সকলে দোয়া করবেন আমরা যেন সারা জীবন একসাথে থাকতে পারি।

মোনায়েম প্রধান রাসেল বলেন, আমরা এই দীর্ঘ সময়ে মানুষের নানা কথা শুনেছি। কিন্তু ও আমাকে সব সময় লেখাপড়ার জন্য উৎসাহিত করতো, সাহস জোগাতো। তাই আজ আমরা সফল হতে পেরেছি। রাসেলের দাবী মন থেকে দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে সব সম্ভব।

জানা যায়, তাদের সম্পর্ক গড়ার মূল কারণ ভজনপুর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন রত অবস্থায় ক্লাসে দু-জনের পড়া লেখা, প্রশ্ন-উত্তর প্রায় মিলে যেত তাই শিক্ষকরা মাঝে মধ্যে তাদেরকে নিয়ে মজা করতো। কারণ পরীক্ষার নাম্বার, হাতের লেখা, শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার সময় পড়া দেওয়া প্রায় দু-জনের একই ছিল। আর এ সব দেখে বিদ্যালয়ের ..... শিক্ষক আব্দুল বাসার বেশি ভাগে তাদেরকে নিয়ে মজা করতো। এ বিষয়ে মোনায়েম প্রধান রাসেল জানান, এ ঘটনার পরেই আমি নিজে নিজে ভাবলাম যে আসলেই মর্জিনার সাথে সম্পর্ক করা যায় কি না তাই এক দিন মর্জিনাকে বলে দিলাম যে, মর্জিনা আমি তোমার সাথে সম্পর্ক করতে চাচ্ছি। সে আমার কথায় রাজি হয়ে গেল শুরু হলো আমাদের প্রেমের সুভ যাত্রা।

শুক্রবার (২৬-০৯-২০১৪) সন্ধা ৭.৩০ মিনিটে শুভ বিবাহ আর বর যাত্রা সন্ধা ৬টায়। বর যাত্রার ঠিক আগ মুহূর্তে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বর যাত্রীরা অপেক্ষার পহর গুণতে থাকল, কখন বৃষ্টি থামবে। প্রায় ১ঘন্টা ভারী বৃষ্টি, এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ চলে গেছে। বর কনে দু-জনেই চিন্তিত, বর যাত্রার জন্য গাড়ীগুলো বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে আছে। ঘন্টা ব্যপি বৃষ্টি শেষে বর যাত্রা শুরু হলো, সামনে বন্ধুদের ৫০টির মত মোটরসাইকেল পিছে বরে গাড়ি সহ ২০ টির মত কার ও মাইক্রোবাস। বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়ি ৬ কিলোমিটারের পথ অতিক্রম করে অবশেষে কনের বাড়ি। মুহূর্তের মধ্যে গোটা এলাকা জেনে গেল বর যাত্রা এসে, সে মুহূর্তে পোটকার শব্দে কনের বাড়ির সামনে আর বন্ধুদের আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠল। বরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বরের আসনে বর ও কনের আসনে কনেকে বসিয়ে কাজি সাহেব ও মৌলবি বিয়ের কাজ সম্পর্ণ করলেন। বর যাত্রীরা খাওয়ার ইস্টেজে ১ম ব্যস খাওয়ার শেষে, ২য় ব্যস খেতে বসা মাত্রই আবারো শুরু হল বর্জসহ ভারী বৃষ্টি। প্রায় দেড় ঘন্টা ভারী বর্ষণের পর বিদায় যাত্রা। বরের বাড়িতে বধূ বরণের অপেক্ষায় কনে নিয়ে বরের বাড়ি। মর্জিনা আক্তার এখন মর্জিনা প্রধান।

ভালোবাসা মানে যে কেবল প্রতারণা বা ছলনা নয়। সত্য, সুন্দর ও পবিত্র ভালোবাসা উজ্জল দৃষ্টান্ত রাসেল ও মর্জিনা জুটি এটাই প্রমান করলেন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied