আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: কিশোরী গৃহকর্মীকে খুন্তির ছ্যাকা; রংপুর মেডিকেলে মৃত্যু যন্ত্রণায় পাঞ্জা লড়ছে নাজিরা       সারাদেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি       হিট অ্যালার্টে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি       শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল       নীলফামারীতে গোপন বৈঠক থেকে জামায়াতের ৩ নেতা গ্রেপ্তার      

 width=
 

ভাষার মাসে ভাসা ভাসা ,আশা-নিরাশা

বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, দুপুর ০২:৩২

 সজিব তৌহিদ, সাব এডিটর, উত্তরবাংলা ডটকম: আবার আমরা ভাসতে ভাসতে ভাষার মাসে ভাসা-ভাসা জ্ঞান নিয়ে , ভষার যুক্তি মুখে নিয়ে আশার কথা বলতে এসেছি । মানুষ বলে কথা , ভাসতে পারি তাই বলে তো কিনারায় চাপার আশা তো ছাড়তে পারি না। তাই শত উৎকট ভাষার নির্যাতনেও ভাষাকে নিয়ে হাসাহাসি আর ভালোবাসাবাসি এখনো বন্ধ করে দেই নি। নিত্যদিন কত রংয়ের ,কত ঢংয়ের ভাষার সাথে আমাদের মিশতে হয় , মেশাতে হয় ,শুনতে হয় ,শোনাতে হয় । তাই বলে কী সর্বক্ষেত্রে প্রমিত উচ্চারণ , শুদ্ধ বয়ান সম্ভব হয় ? না ! তা সম্ভব নয় । কিন্তু জগা খিচুরি তো নিশ্চয়ই নয় ? ৪৯ টি সাংকেতিক চিহেৃর সমন্বয়ে আমার অহংকারের বর্ণমালা । আজ যেটিকে বলাহয় দু:খিনী বর্ণমালা । বর্ণের সমন্বয়ে তৈরি হয় অক্ষর । অক্ষরের সমন্বয়ে ধ¦নি ।আর অর্থবোধক ধ্বনির সমষ্টি ভাষা । আর সেটি হচেছ আমার মাটির ,মায়ের,ভাইয়ের প্রাণের ভাষা , বাংলা ভাষা। এই ভাষাকে নিয়ে যত ভাব ভালোবাসা ,আশা-প্রত্যাশা ,হতাশা-দুর্দশা । আমার দেশের নতুন প্রজন্মের উদাসিনতার কারণে পৃথিবীর শেষ্ঠ-সমৃদ্ধ বাংলা ভাষার আজ এই দশা ।পৃথিবীর প্রায় ছয় হজার ভাষার মধ্যে শব্দভারের দিক থেকে বাংলা ভাষার অবস্থান প্রথম । ভাষাভাষির মানুষের সংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ । যেখানে  পৃথিবীতে ইংরেজি শব্দের সংখ্যা ৮০ হাজার। সেখানে বাংলা ভাষার শব্দের  সংখ্যা ১ লক্ষ ২০ হাজার  । সম্প্রতি অক্মফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি-তে লাঠি চার্জ, ধর্মঘট , হরতাল , ব্যারিকেড ,আগ্রাসন ইত্যাদি শব্দ স্থান পেয়েছে । যা আমাদের মাতৃভষার জন্য ইতিবাচক । আমার দেশের নবীন প্রজন্ম নিজেদের অভার স্মার্ট হিসেবে প্রকাশ করার জন্য বারো মিশালি ভাষা ব্যবহার করে । যা তাদের দক্ষতা , ভদ্রতা, সভ্যতা নয় বরং সংকীনর্ণতাই প্রকাশ পায় । অমরা এক উদ্ভট-উদভ্রান্ত পরিবেশে মধ্যেদিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি । কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় , ‘ এক উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ ।’ যেখানে আমরা যুব সমাজ মাটি, মাতৃভূমি, দেশীয় শিল্প-সাহিত্য , সংস্কৃতির মূল ছেড়ে বিদেশি সংস্কৃতির চুল ধরে টানাটানি করছি । তাই বলে আমি বিদেশি সংস্কৃতি বিদ্বেষী হওয়ার কথা বলছি না । আমরা যদি বিদেশি শিক্ষা, চিকিৎসা ,প্রযুক্তি, বিজ্ঞান গ্রহণ করতে পারি। সংস্কৃতি কেন  গ্রহণ করব না ? অবশ্যই করব এবং সেটি হবে পরিমত মাত্রায় । অশ্লীল ও বিরক্তির কারণ যেন তা না হয় । আমরা বাঙলিরা একটা  বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ও ফ্যাশনেবল । বিশেষ কোন দিন , ক্ষণ বা মাস আসলে অমরা অনেক বেশি আবেগ প্রবণ, দেশপ্রেমী, ও ষোলআনা বাঙালি হয়ে যাই । যেমন-ফেব্রুয়ারি এলেই “ অ ,আ ,ই ,ঈ ” খচিত পোশক পরিধান করি । মোবাইলে ভাষা বিষয়ক গান ও রিং টোন ডউনলোড করি । কম্পিউটার কিংবা মোবাইল স্ক্রিনের থিম পরিবর্তন করি । কেউ ইংরেজি বললে ধমক দিয়ে বলি,“ এই ব্যাটা..! ভাষার মাসে ইংরেজি বলিস ব্যাটা। ভাষার ইজ্জত খাবি তুই ।” বাংলা ভাষার প্রতি তখন এক্রটা দরদ জন্ম নেয় । শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় যেন মাথা নুয়ে পড়ে । একুশে ফেব্রূয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে গর্বিত অনুভব করি ।‘ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ....’ গানটা গেয়ে বুক ফুলিয়ে তুলি । ভাষা নিয়ে বড়াই করি, বাংলা ভাষাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষা হিসেবে দাবি করে বক্তৃতা ,সেমিনার করে ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করি । আর দশক-দশক  ধরে বাংলা বানান ,উচ্চারণ , শব্দ চয়ন ও প্রক্ষেপণ ভুল করি । প্রমিত, চলিত, এলাকাতো ,আরজে-ভিজে-ডিজে’র  শব্দমিশ্রণে ভাষাকে দূষিত , কুলষিত ও বিকৃত করি । আর সেটাকেই বন্ধুমহল ও সমাজে  প্রচলিত ও স্বীকৃত  করার চেষ্টা করি । হলিউড বলিউডের চলচ্চিত্র দেখি । কথায় কথায় বাংলার সাথে হিন্দি-ইংরেজি মিশ্রণ করে বাংহিলিশ  [বাংলা-হিন্দি-ইংলিশ] ভাষা ব্যবহার করে  নিজেদেরকে অনেক বেশি চটপটে, জ্ঞানী ও আত্যধিুনিক মনে করি। আমরা বিশ্বাস করি আজ থেকে ১০০ বছর আগে আমেদের এই ভাষা এ রকম ছিল না । নিশ্চয়ই ১০০ বছর পরে  এ রকম থাকবে না । ভাষার ধর্মই পরিবর্তন  হওয়া । প্রতি সাড়ে ১৬ কি.মি অন্তর অন্তর ভাষার পরিবতর্ন পরিলক্ষিত হয় । স্থান ,কাল পাত্র ভেদে ভাষা পরিবর্তিত, পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত হয় যা স্বভাবিক । তাই বলে তো ডিজুস প্রজন্মের  বিদেশি ভাষার অত্যাচার নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না রবি ঠাকুরের কথায় , “আগে চাই মাতৃভাষার গাঁথুনি , তারপর বিদেশি ভাষার পত্তন ।” ঠিক সেভাবেই ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ , ড. সুনীতি কুমার চট্রপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষার ভীত মজবুত করে বহু ভাষা শিখে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন । আমরা সেটা ভুলে গিয়ে শুধু ইংরেজি ভাষাকে  বর্তমান সময়ে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করি । এর পিছনে যুক্তি হচ্ছে , আজকাল অনেক চাকরির পরীক্ষায় বাংলাকে ঝেটিয়ে বিদায় করা হয়েছে । এ নিয়ে সরকার তথা নীতি নির্ধারক মহলেও কোন মাথা ব্যথা নেই । তাই মায়াবী বর্ণমালাগুলো বেঁচে আছে  বাঙালির ছলা কলায় ,হেলায় অবহেলায় । যাহোক , সময়ের প্রভাবে , মিডিয়ার প্রচারণায়, বয়সের তাড়নায় ইয়াং জেনারেশন ইস্টার্ন-ওয়েস্টার্ন সংস্কৃতির প্রতি ঝুঁেক পড়লেও একদিন আমাদের ফিরে আসতে হয় লোকগীতি , লালন গীতি , রবীন্দ্র -নজরুলে । তবে যেদিন আমরা ফিরে আসি তখন দেশ , ভাষা ও সংস্কৃতিকে দেবার মতো  কিছু অবশিষ্ট থাকে না । তেমনিভাবে আমরা যতই অন্য ভাষা নিয়ে লম্প -ঝম্প করি না কেন প্রকৃতির টানে, হৃদয়ের টানে , ভাবের টানে , রক্তের টানে মাতৃভাষা বাংলার কাছে এসেই জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজতে হয়।

মন্তব্য করুন


 

Link copied