আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

হ্যাপি ওয়াচিং ‘পিঁপড়াবিদ্যা’

সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৪, রাত ০৩:৪২

অভাগা যেদিকে তাকায়, সাগর শুকিয়ে যায়’— গল্পের প্রধান চরিত্র মিঠুর ক্ষেত্রে এই কথাটা যায়। লেখাপড়া করা বেকার ছেলে, চাকরি নামক সোনার হরিণটা কিছুতেই তার কাছে ধরা দিচ্ছে না, সবকিছুই অসহ্য লাগে এই সময়টাতে। শিক্ষিত ছেলে বলে তিনি ‘যেনতেন’ কিছু করবেন, এটাও ঠিক না। অবশেষে ভাগ্য দেবী কিছুটা মুখ তুললেন।

লাকি সেভেন নামের এক এমএলএম কোম্পানিতে কাজ পেল মিঠু। কোম্পানিতে যোগদানের পরে বসের দেওয়া অল্প কিছু টাকা দিয়ে সে একটি মোবাইল ফোন কিনতে যায়। দোকান থেকে মোবাইল কেনার বদলে চুরি হওয়া একটি মোবাইল চোরের কাছ থেকে কম দামে কিনে নেয় সে। মোবাইলটা আসলে ছিল অভিনেত্রী রিমার। মোবাইলে ছিল রিমা আর তার বয়ফ্রেন্ড অয়নের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের একটি ভিডিও। এই ভিডিও দিয়ে মিঠু রিমাকে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে। গোবেচারা টাইপ যেই ছেলে প্রায় কথাই বলে না, সে ছেলেটিই একসময় অন্যদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের জন্য ফাঁদ তৈরি করে, সাধারণ পিঁপড়ার পাখা মেলতে থাকে আস্তে আস্তে। এই ফাঁদ কী সফল হবে নাকি নিজের তৈরি ফাঁদে মিঠু নিজেই জড়িয়ে যাবে সেটা জানতে হলে দেখতে হবে পিঁপড়াবিদ্যা।

একেবারেই ডিফারেন্ট স্টোরি (আমাদের দেশের সিনেমার কনটেক্সটে) কিন্তু তার পরেও খুব চেনা, একদম আমাদের আশপাশের। এই কাহিনীর এত সুন্দর প্রেজেন্টেশন ছবিকে উপভোগ্য বানিয়ে দিয়েছে।

চিত্রনাট্য ও পরিচালনা এক কথায় অসাধারণ। ফারুকীর কাজের মান তার প্রত্যেক সিনেমার সাথে সাথে একটু একটু করে ভাল হচ্ছে। অভিনয়ে সবাই দারুণ। রিমা চরিত্রে শিনা চৌহান বেশ ভাল। পশ্চিমবঙ্গের একজন অভিনেত্রীকে নিজের প্রথম বাংলাদেশী সিনেমাতে এত সাবলীল বাংলা বলতে দেখে বেশ ভালো লেগেছে। শিনা চৌহানকে কেন নেওয়া হল এ সিনেমাতে বলে যেই বিতর্কের পাহাড় গড়ে উঠেছিল, সেই পাহাড় শিনা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন নিজের অভিনয় দিয়ে। তার অভিনয়ে বেশ পরিমিতিবোধ আছে। মূল চরিত্রে নূর ইমরান মিঠু দারুণ! বোঝার উপায় নেই, এটি তার প্রথম সিনেমা। এক অভিনেতার জন্য তিনি ছিলেন পারফেক্ট! তার কমেডি টাইমিং মুগ্ধ করার মতো। মিঠুর মায়ের চরিত্রে অভিনয়কারী বেশ ভাল, রিমার প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয়কারী আরজে ও ডেন্টিস্ট সাব্বির উতরে গেছেন।

সিনেমার সংলাপ অসাধারণ, হাস্যরসে ভরপুর, একদম মেদহীন ঝরঝরে। ভাঁড়ামি ছাড়াও শুধু সংলাপ দিয়ে যে দর্শককে হাসানো যেতে পারে— এই সিনেমার সংলাপ তার উদাহরণ। মিঠুর সাথে তার প্রাক্তন প্রেমিকার স্বামী রিদওয়ানের মোবাইলে কথোপকথনের দৃশ্যগুলো অনেক বেশি আনন্দ দেয়। স্বামী চরিত্রে এই লোকের অভিনয় বেশ ভাল।

‘লেজে রাখা পা’ গানটির লিরিক ও গায়কীর জন্য চিরকুটকে বিশেষ ধন্যবাদ না দিলেই নয়। দারুণ ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের জন্য ধন্যবাদ হৃদয় খান, আরমান হক আর চিরকুটকে। চিত্রগ্রহণ দারুণ, এই ক্ষেত্রে গোলাম মাওলা নবীর কাজের প্রশংসা আলাদা করে না করলেই নয়।

প্রথম অংশ যত দুর্দান্তভাবে আগায়, দ্বিতীয় অংশের শুরুর দিকে সিনেমা একটু ঝুলে যায়, যদিও পরে ট্র্যাকে চলে আসে। মোবাইল চুরি যাওয়ার পরে এত তাড়াতাড়ি কীভাবে রিমা মিঠুর নাম্বার পেয়ে তাকে ফোন দিয়ে ফেলে বা দ্বিতীয় অংশে যখন মিঠুকে একটি দোকানে থাকতে হয়, সেই দোকানের মালিকের সাথে মিঠুর সম্পর্ক কি, কবে সে এখানে আসল, কি বলে সে উঠেছে— এগুলো আরও ডিটেল দেখালে মনের মধ্যে খচখচ করত না। কালার গ্রেডিংয়ে কিছু সমস্যা আছে বলে মনে হয়েছে। এগুলো ছাড়া এই সিনেমার আর কোন নেতিবাচক দিক খুঁজে পাইনি।

সিনেমার এন্ডিং নিয়ে অনেকে অভিযোগ করেছেন, অনেকের কাছেই পছন্দ হয়নি, ফারুকী যেন হঠাৎ করে শেষ করে দিলেন সিনেমা। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে এই ফিনিশিংই কেন জানি অনেক বেশি ভাল লেগেছে। নিজে ঠিক না করে দিয়ে, দর্শকের হাতে সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেওয়া, নিজে শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ না হওয়ার কারণে ফারুকীকে ধন্যবাদ। বিবাহপূর্ব শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে ফারুকীর কোনো ধরনের লেকচার দেওয়ার চেষ্টা ছিল না— এটা বেশ ভাল লেগেছে।

পিঁপড়াবিদ্যা কেমন? অবশ্যই ভাল, বেশ ভাল। অনেক উপভোগ্য সিনেমা। প্রাণখুলে হাসার সিনেমা। একই সাথে বেদনার সিনেমা, চিন্তার উদ্রেককারী সিনেমা, বাস্তবতার দিকে আঙ্গুল তাক করা সিনেমা। আমাদের দেশের শিক্ষাজীবন শেষ করে বেকার ছেলেগুলোর জীবনের হতাশা, দুঃখ, কামনা, ঠাট্টা, স্বপ্ন— সবই পাবেন পিঁপড়াবিদ্যাতে। এমএলএম ব্যবসা এবং পরে এই ব্যবসার উপরে সরকারের নিষেধাজ্ঞা— কত তরুণের জন্য, কত মানুষের জন্য যে কি পরিমাণ অভিশাপ বয়ে এনেছে তা এই সিনেমাতে পাওয়া যায়। তাদের কষ্টটা বোঝা যায়। সবার জন্য মাস্ট ওয়াচ, বেকার ভাইদের জন্য অবশ্যই।

তবে সিনেমা দেখার মতো ‘বিলাসিতা’ বেকার ভাইরা করেন কিনা বা করবেন কিনা সেটাও একটি প্রশ্ন। তবে করলে মনে হয়না ভুল করবেন, অন্তত এই সিনেমার ক্ষেত্রে। পুরো সিনেমাতে কোন কাজ না করে একদম শেষের দৃশ্যে মিঠুর বোন চরিত্রে অভিনয়কারী মেয়েটি যখন বলে ‘ভাইয়া, তুই কি আসলেই নাকি...?’— তখন বাস্তবতার নির্মম চিত্র আমাদের চোখের সামনে ধরা দেয়।

দেখে আসুন পিঁপড়াবিদ্যা- দলে-বলে-হলে। হ্যাপি ওয়াচিং।

মন্তব্য করুন


 

Link copied