আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?      

 width=
 

রিক্তাকে কবুল করলেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল

শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৪, রাত ১১:৪৯

শুক্রবার সকাল থেকেই মীরাখোলা গ্রামে সানাই বাজতে থাকে। সানাইয়ের সুরে গ্রামমুখী হাজারো মানুষের ঢল নামে। মন্ত্রী বরের আগমনী বার্তায় সরগরম হয়ে ওঠে মীরাখোলা গ্রাম। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উৎসুক জনতার ঢল। বর দেখতে ছুটছে আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ। ৫ লাখ এক টাকা দেনমোহরে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক কবুল বলেছেন। বিয়েতে বরের পক্ষে সাক্ষী হন চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান, শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদার ও মন্ত্রীর একান্ত সচিব কিবরিয়া মজুমদার। এদিকে কনের পক্ষে ছিলেন কুমিল্লার জাতীয় পার্টির নেতা খালাতো ভাই লুৎফর রহমান ও ফজলুল করিম। তিনি যখন কবুল বলেন, তখন চারদিকে অট্টহাসির রোল পড়ে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই বলতে থাকেন, কুমিল্লার চিরকুমার সমিতির উপদেষ্টার পদটি তিনি হারালেন। বিয়ের অনুষ্ঠানেই মোহরানার পুরোটাই পরিশোধ করেন বর মুজিবুল হক। বিকাল ৪টায় তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর্ব শেষ করে তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।

মন্ত্রী মুজিবুল হক গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন থেকে বরবেশে ৬ মন্ত্রী ও শতাধিক এমপিসহ প্রায় ৭শ জনকে নিয়ে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মীরাখোলা গ্রামে রওনা হন। সেখানে আগে থেকেই চলছিল বিয়ের আয়োজন। তাকে বর হিসেবে বরণ করে নিতে প্রস্তুত ছিল মীরাখোলা গ্রামবাসী। এ বিয়ের আয়োজন নিয়ে বর, কনের স্বজন এবং কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেশ উৎফুল্ল। রেলমন্ত্রী ও বর মুজিবুল হক চান্দিনা উপজেলার মীরাখোলা গ্রামের শ্বশুরবাড়ি পৌঁছেন শুক্রবার বিকাল ৩টা ৫ মিনিটে। বরকে মহা ধুমধামে স্বাগত জানান শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

বিয়েবাড়িতে ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক কাজ করে ছয় স্তরের নিরাপত্তা বলয়। সেগুলোর মধ্যে বিশেষ ডিউটি পুলিশ, পুলিশের মোবাইল টিম, ডিএসবি, ট্রাফিক পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ জন সদস্য।

বিয়েবাড়ির সামনের রাস্তার আধা কিলোমিটারজুড়ে আলোকসজ্জা করা হয়, যা মীরাখোলা গ্রামে অন্য রকম এক আবহের সৃষ্টি করে। মীরাখোলা গ্রাম হয়ে ওঠে আলোকিত এক স্বপ্নের গ্রাম। অনুষ্ঠানে বর ও ভিআইপি অতিথিদের জন্য একটি প্যান্ডেল, আত্মীয়স্বজন ও অন্যান্য অতিথির জন্য একটি প্যান্ডেল এবং খাবারের আগে ও পরে অভ্যর্থনার জন্য আরো একটি প্যান্ডেলসহ মোট তিনটি প্যান্ডেল করা হয়। অভ্যর্থনা প্যান্ডেলে তিনটি আলাদা কক্ষও করা হয়। এর একটিতে কোমল পানীয়, একটিতে কফি ও অপরটিতে শাহী পানের ব্যবস্থা ছিল। ডেকোরেটরের সরবরাহ করা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসেই খাবার খান অতিথিরা।

কনের বাড়িতে মন্ত্রী ঢাকার বেইলি রোডের বাসা থেকে দুপুর ১২টার দিকে বর রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বিয়ে করতে রওনা হন। একটার দিকে দাউদকান্দির শহীদনগর জামে মসজিদে তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। ৫ লাখ এক টাকা দেনমোহরে মন্ত্রীর বিয়ে পড়ান মীরাখোলা গ্রামের কাজি মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান।

ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার চার ঘণ্টা পর কুমিল্লার চান্দিনায় হাজারো মানুষের ভিড় ঠেলে বিয়েবাড়িতে পৌঁছেন বর মন্ত্রী মুজিবুল হক। বর ও বরযাত্রীদের অভ্যর্থনা জানাতে আগেই প্রস্তুত ছিল সব। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে কনের সাজসজ্জাও শেষ হয়েছে জুমার নামাজের আগেই। হবু জামাইয়ের কয়েকজন শ্যালিকাও গেট ধরা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত ভিড়ের কারণে সেই সুযোগ আর মেলেনি। সাঙ্গ হয় শ্যালিকাদের চিন্তার প্রতিফলন।

মন্ত্রীর বিয়ে বলে কথা। এলাহীকা- না হলেও অতিথিদের জন্য বিশাল আয়োজন বললে কোনো অংশেই অত্যুক্তি হবে না। আয়োজন চলে কয়েক দিন ধরে। শুধু বরযাত্রীদের আপ্যায়নের জন্যই নিয়োগ করা হয়েছে ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক। সবাই কন্যার নিকটাত্মীয়। বরপক্ষের ৭০০ এবং কনেপক্ষের প্রায় ১৫শ অতিথিকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও সেই সংখ্যা ৫ হাজারের কম হবে না। দুপুরের খাবারের তালিকায় থাকে খাসির কাচ্চি, মুরগির রোস্ট, কোমল পানীয়, মিষ্টান্ন, জর্দা ও বোরহানি। জামাই মুজিবুল হকের জন্য করা হয় বিশেষ আয়োজন। ১৬ কেজি ওজনের আস্ত খাসির রোস্ট থাকে এ খাবারের তালিকায়। এলাকার নামকরা বাবুর্চি কুমিল্লা ক্লাবের মিল্টন রোজারিও সেই রান্না করেন। বিশাল আকারের ডিশে জামাইয়ের খাবার পরিবেশন করা হয় বেশ আয়োজন করে। চারপাশে ১০টি ইলিশ মাছ, ১০টি আস্ত মুরগির রোস্ট এবং মাঝে ১৬ কেজি ওজনের খাসির রোস্ট। আরো থাকে নানা পদের খাবার ও মিষ্টি।

এলাহীকা- এলাহীকা- না হলেও বিশাল আয়োজন। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বিয়ের আয়োজন বলে কথা! আয়োজন চলছে কয়েক দিন ধরে। কনের বাড়ি চান্দিনা উপজেলার মীরাখোলা গ্রামের দুই কিলোমিটার দূর থেকেই রাস্তার ওপর বানানো হয় বরের জন্য বিয়ের চারটি তোরণ। বসন্তপুর গ্রামের মুখেই সোনালি কাপড় দিয়ে সাজানো তোরণে দেখা গেল মন্ত্রীর ছবি। পাশে লেখা ‘বিবাহিত জীবন মধুর ও সফল হোক’। নতুন বরকে স্বাগত জানাতে গ্রামবাসীও প্রস্তুত। রাস্তার দুই পাশে সকাল থেকেই উৎসুক গ্রামবাসীর ভিড়। সবাই আসেন যার যার মতো করে। পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি বললেন, ‘মন্ত্রী জামাই পাইলাম, আমাদের গ্রামের জামাই।’

সিতাহার-কণ্ঠহারে সেজেছেন কনে সিতাহার ও কণ্ঠহারসহ প্রায় ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে সাজানো হয় রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের পাত্রী হনুফা আক্তার রিক্তাকে। রিক্তার বড় ভাই আলাউদ্দিন মুন্সি বলেন, সিতাহার, কণ্ঠহার, কানের দুল, আংটি, টিকলি, চুড়ি, নলক ও ব্রেসলেট আগেই পাঠান হবু জামাই রেলমন্ত্রী। সোনা সব মিলিয়ে ১৫ ভরির মতো হবে। এছাড়া সাজের অন্যান্য সামগ্রীও পাঠিয়ে দেন বলে জানান তিনি। আলাউদ্দিন মুন্সি বলেন, কনেপক্ষের জন্য পাঠান ৩৫টি শাড়ি, যা আত্মীয় স্বজনদের দেয়া হয়। কনের জন্য বেনারসি ও কাতানসহ মোট ৫টি শাড়িও পাঠানো হয়েছিল। কনের শাড়ি জামাই নিজেই ভারত থেকে কিনে আনেন। কনে হনুফা আক্তার রিক্তার ভাতিজা শোয়েব আক্তার বলেন, কনের রূপসজ্জার জন্য ঢাকার নামকরা একটি বিউটিপার্লার থেকে বিউটিশিয়ান নিয়ে আসা হয়। প্রায় সাতজন বিউটিশিয়ান সকাল থেকে বউকে সাজান। বেলা ২টার আগেই রূপসজ্জার কাজ শেষ হয়।

মন্ত্রীর বিয়ের কাবিন ৫ লাখ ১ টাকা ৫ লাখ এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। শুক্রবার সকালে দেনমোহরের টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় বলে জানান কনে হনুফা আক্তার রিক্তার ভাতিজা শোয়েব আক্তার।

পকেটমারের উপদ্রব রেলমন্ত্রীর বিয়ে উপলক্ষে বিয়েবাড়িসহ আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও ঢুকে পড়ে পকেটমার। একের পর এক ঘটে পকেটমারের ঘটনা। খোয়া যায় আমন্ত্রিত অতিথিদের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগসহ নগদ টাকা। এ থেকে বাদ পড়েননি মন্ত্রী-এমপিরাও। পকেটমারের উপদ্রবে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। এতে কিছুটা বিব্রত রেলমন্ত্রীও। অন্তত দুজনকে আটক করে পুলিশ। বরযাত্রীরা বিয়েবাড়িতে ঢোকার পর একসঙ্গে অনেক মানুষের ভিড় হওয়ার সুযোগটি নেয় পকেটমাররা। সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ খোয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ! একাধিক সংবাদকর্মী, রাজনৈতিক নেতাও হারিয়েছেন মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ। বাদ যাননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধি সৈয়দ পারভেজ জানান, পকেটমার তার ১৯০০ টাকা, দুটি পেনড্রাইভ ও চ্যানেলের পরিচয়পত্রসহ মানিব্যাগ নিয়ে গেছে। গেটে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জয়নাল আবেদিন বিয়েবাড়িতে পকেটমারের ঘটনার কথা নিশ্চিত করেন।

চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোর্শেদ সাবেক আইনমন্ত্রীর মানিব্যাগসহ মোবাইল ফোন চুরির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়ার পর দুজনকে আটক করা হয়। তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন এমপি তাজুল ইসলাম ও অধ্যাপক আলী আশরাফ, সাবেক এমপি নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল, প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি সফিকুল ইসলাম, ডিসি হাসানুজ্জামান কল্লে¬াল, এসপি টুটুল চক্রবর্তী প্রমুখ।

অতিথিদের খাবার টেবিলে বর নিজের বিয়ের দিনেও নেতাদের সার্বিক খোঁজখবর নিতে ভোলেননি রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। অতিথিদের ঠিকমতো আপ্যায়ন ও সমস্যা আছে কি না। এসব বিষয়ে খোঁজ নিতে বিয়ের স্টেজ থেকে হঠাৎ ছুটে যান খাবার প্যান্ডেলে। শুক্রবার বরবেশে চান্দিনার মীরাখোলা পৌঁছার পরও নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিতে ব্যস্ত দেখা গেছে তাকে।

এদিকে বিয়ের পর বউ নিয়ে বেইলি রোডের ১ নম্বর বাড়ির দোতলা ফ্ল্যাটে ওঠেন নববিবাহিত এই দম্পতি। এই দম্পতির বাসরও সাজানো হয় রাজকীয়ভাবে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied