ষাটোর্ধ মুক্তিযোদ্ধা জাফর ফরাজী বাই সাইকেলে দেশের ৪৮ জেলা পরিভ্রমণ শেষে এখন ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থান করছেন। তার উদ্দেশ্য দেশের ৬৪ জেলার প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশের মানুষ ও সরকারকে তার দাবির সম্পর্কে জনমত সৃষ্টি করা।
আজ শনিবার ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের সময় তিনি আরও বলেন, নিজের ভিটে-মাটি সব বিক্রি করে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। সংসারে মন বসছিল না, তাই ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সাইকেল যোগে দেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হই। এ নিয়ে মোট ৪ বার বাই-সাইকেলে বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন তিনি। একবার ভারতের আজমীর শরীফ সাইকেলে চরে ঘুরে এসেছেন। নিজের দেশ দেখার পর তার শেষ ইচ্ছা তিনি বাই সাইকেলযোগে সৌদি আরবে হজ পালন করবেন। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন তিনি। তাই তিনি সরকারের কাছে ভিসা পাবার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
জাফর ফরাজী জানান, তার বর্তমান উদ্দেশ্য ও ইচ্ছা বাই সাইকেল চালিয়ে হজ্ব করতে যাওয়া এবং এ উদ্দেশ্যে তিনি ভারত, পাকিস্তান, ইরান ও আফগানিস্তানের ভিসার জন্য আবেদন করেন। সব দেশের ভিসা পেলেও ভিসা দেয়নি পাকিস্তান দূতাবাস।
জাফর আলী ক্ষোভের সাথে বলেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপুমনির ডিও লেটার এ লেখাছিল ফ্রিডম ফাইটার শব্দটি। আর এ কারণেই পাকিস্তান দূতাবাস আমাকে ভিসা দেয়নি। তিনি বলেন, দেশের সকল সাংবাদিকদের মাধ্যমে পুরো দেশের মানুষকে আমি জানাতে চাই একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেই আমি পাকিস্তানের ভিসা পেতে চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাকিস্তান দূতাবাস নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে তাকে ভিসা দেয়া যাবেনা বলে তাকে জানিয়েছে। এদিকে তার বাড়িতে তার ছোট ছেলে দ্বীন ইসলাম মুঠোফোনে জানান, তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা এটা আমাদের জন্য বিরাট অহংকার। বাবাকে সংসারে ধরে রাখতে পারিনি আমরা। এলাকার উন্নয়নের জন্য নিজের সর্বস্ব খুইয়েছেন তিনি। এখন হজ্বে যেতে চাইছেন তিনি, তাও আবার বাই সাইকেল চালিয়ে। যদি আপনাদের মাধ্যমে সরকার সাহায্য সহযোগিতা করে, তবে হয়তো তার শেষ ইচ্ছে পুরণ হবে। দ্বীন ইসলাম আরও জানান, রানাপ্লাজা ধসের সময় আমার বাবা সেচ্ছা সেবকের কাজ করেছেন। তাকে ধরে রাখা যায়নি বলেই আমরা সব মেনে নিয়েছি।
কে এই জাফর ফরাজি: মাদারীপুর জেলার কালাকিনী উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মৃত আলম ফরাজীর ছেলে জাফর ফরাজী। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন একজন রিক্রা চালক। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসরা যখন এ দেশের নিরীহ মানুষের হত্যা মা-বোনের ইজ্জ্বত লুষ্ঠন করতে শুরু কওে তখন মাতৃকার টানে কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মাদ সেলিমের নেতৃত্বে ৪নং সেক্টরে যোগ দেন। ফরাজী। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি বাই সাইকেলে বিশ্বভ্রমন শুরু করেন। তিনি ঘুরতে ঘুরতে যদি পথে কোথাও মারা যান সে জন্য কাফনের কাপড় তার সাথে রেখেছেন। তার ক্ষোভ পাকিস্তানি দূতাবাসের উপর। মুক্তিযোদ্বা পরিচয়ের তার ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়।