আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

“দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ”

বৃহস্পতিবার, ১ জানুয়ারী ২০১৫, দুপুর ০৪:৫৭

(একষট্টিতম জন্মদিনের প্রাক্কালে স্মৃতির সাতকাহন)

আনওয়ারুল ইসলাম রাজু

“টিক্ টিক্ টিক ঠিক চলেছে ঠিক সময়ের খেলা, তাও বুঝিনি মেঘে মেঘে কাটলো কত বেলা ।”- মেঘে মেঘে অনেকটা সময় গড়িয়েছে জীবনের । দিন পঞ্জিকার হিসেব জানিয়ে দিচ্ছে ইতোমধ্যে জীবনের একষট্টি বসন্ত পেরিয়ে গেছে। আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ আমার বয়স ৬১ বছর পূর্ণ হলো।২০১৫ সালের প্রথম দিনটি (১জানুয়ারি) আমার একষট্টিতম জন্মদিন। গত বছর আমার এই দিনগুলো কেটেছে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পিছলে পড়ে হাড় ভাঙ্গা ডান পায়ে অপারেশন করে রড লাগানো অবস্থায়। মহান আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া যে গত এক বছরে অনেকটাই সুস্থতা দান করে এই দীর্ঘ সময় বেঁচে রেখেছেন। কবিগুরু লিখেছেন-“দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ।”যথার্থই জন্মের এই প্রথম শুভক্ষণটি বার বার ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা মানুষের চিরন্তন। কিন্তু এও সত্য-“জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা ভবে?” তাই এক একটি জন্মদিন আমাদের জীবনের জন্য বরাদ্দকৃত সীমিত সময় ফুরিয়ে আসার ওয়ার্নিং বেল বাজিয়ে যায়। ষাটোর্ধ বয়সের বোনাস জীবনে জন্মদিনের এই শুভক্ষণে তাই স্বাভাবিক ভাবে জীবনখাতার হিসেব-নিকেশ কষতে বসে স্মৃতির জানালা বেয়ে উঁকি দিচ্ছে অতীতের কতইনা আনন্দ-বেদনার ছবি। আমার প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৯ জুলাই, ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ, কিন্তু স্কুলের রেজিস্ট্রেশন ফরমে ভুলক্রমে জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি, ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ লেখায় কাগজে কলমে সেটাই পাক্কা হয়ে যায় । জন্ম সাবেক রংপুর ( বর্তমান গাইবান্ধা) জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাধীন ধর্মপুর গ্রামে নানার বাড়িতে। পৈত্রিক নিবাস একই জেলার পলাশবাড়ি উপজেলার হরিনাথপুর গ্রামে। মা-মরহুমা আনোয়ারা বেগম শেফালি, বাবা- মো: আব্দুর রহমান সরকার। বর্তমান আবাস-‘হীরাঝিল’, বাড়ি # ২২৮/৩, সড়ক # ০৩, দক্ষিণ ঠিকাদারপাড়া, আলমনগর, রংপুর। প্রাথমিক শিক্ষা বাড়ির পার্শ্ববর্তী মরাদাতেয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে। তালুক জামিরা জুনিয়র হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর নাকাইহাট হাইস্কুল থেকে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাশ । গাইবান্ধা কলেজ থেকে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে (পরীক্ষা-১৯৭৩ খ্রি.) বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাশ করে রংপুর কারমাইকেল কলেজে বি.এসসি পাস কোর্স ভর্তি হই। কিন্তু সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি বিশেষ অনুরাগ বশত এই কোর্স শেষ না করে পরে একই কলেজে বাংলা সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের পরীক্ষায় (১৯৭৯ খ্রি. অনুষ্ঠিত) উচ্চতর দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪র্থ স্থান অর্জনসহ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মান ডিগ্রি লাভ করি। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করি (১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের পরীক্ষা ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত)। দীর্ঘ সেশনজটের কারণে চাকরির বয়সসীমার প্রান্তিক লগ্নে এম.এ ফাইনাল পরীক্ষার ৫ মাস আগেই সোনালী ব্যাংকে চাকরিতে যোগ দিতে হয়। পরবর্তীতে কয়েকটি বেসরকারি কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেলেও সেগুলোতে যোগ দেয়া হয়নি। সোনালী ব্যাংকেই চাকরির মেয়াদ পূর্ণ করে সিনিয়র অফিসার হিসেবে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করি। ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত হওয়ার সুযোগ ঘটে। এর হাতেখড়ি মূলত: পারিবারিক ঐতিহ্য সূত্রে শৈশবেই। সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি বিশেষ অনুরাগী দাদা আমির উদ্দিন সরকার (মরহুম) ও দাদী আমিরন নেসা(মরহুমা)-এর কাছ থেকে ছোটবেলায় মুখে মুখে শোনা গল্প-ছড়া-কবিতা ও ইতিহাস-ঐতিহ্য-ভিত্তিক নানা কাহিনী-কিংবদন্তী শিশু মনে কল্পনা ও সৃজনশীলতার যে বীজ বুনে দিয়েছিল, তার অঙ্কুরোদ্গমে ভীষণভাবে সহায়ক হয়েছিল বাড়ির দুটি কাঠের আলমারিতে স্তূপীকৃত বাবা-মার নিজস্ব সংগ্রহ এবং কিছুকাল আগে লুপ্ত আমাদের গ্রামের (হরিনাথ পুর) ইয়ং স্টারস ক্লাব এন্ড লাইব্রেরির নানা ধরণের বই-পত্রের এক বিশাল ভাণ্ডার। এছাড়া, পরিচিত বন্ধু-স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে এবং প্রাইমারি, হাইস্কুল ও কলেজ লাইব্রেরি থেকে নিয়মিতভাবে বই সংগ্রহ করে পড়াও ছিল অন্যতম নেশা। প্রাইমারি ও হাইস্কুলে পড়ার সময়েই ছড়া, কবিতা ও নাটক রচনার পাশাপাশি আবৃত্তি, অভিনয়, বিতর্ক, বক্তৃতা ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রশংসা ও পুরস্কার অর্জন করেছি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এর ধারাবাহিকতা আরও পরিণতি ও বিস্তৃতি লাভ করে। লেখালেখির বিষয় ছড়া, কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ এবং লোকসংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ক গবেষণা । কলেজ বার্ষিকী ও সাময়িকীসহ দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন ও গবেষণা জার্নালে অনেক লেখা প্রকাশিত এবং বেতারে প্রচারিত হয়েছে। এককভাবে কোন গ্রন্থ প্রকাশের সুযোগ এখনও হয়নি, তবে যৌথভাবে প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি গ্রন্থ। এগুলো হচ্ছে- “ছড়ায় স্বদেশ ছড়ায় জীবন” (২০০২), প্রকাশক- ঈক্ষণ, রংপুর; গবেষণা গ্রন্থ- “ভাওয়াইয়া ”(২০০৩), প্রকাশক-সিধুভাই কল্যাণ ট্রাস্ট,রংপুর; “লোকভূমি”(২০১২), সম্পাদনা-ফাতেমা জোহরা, কালিহাতি, টাঙ্গাইল; “বাংলার ভাওয়াইয়া” (২০১৪), সম্পাদনা- ড. রতন বিশ্বাস, কলকাতা। রংপুরের লোকসংস্কৃতি এবং আদিবাসী লোকজীবন, সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক দুটি গবেষণামূলক গ্রন্থ এবং বিতর্ক-চর্চা ও আবৃত্তি কলার কলাকৌশল বিষয় দুটি গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ পরিচালিত “বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রকল্প”-এর গবেষণা সহকারী এবং বাংলা একাডেমী পরিচালিত ‘লোকজ সংস্কৃতির বিকাশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের ‘ফোকলোর সংগ্রাহক’ হিসেবে কাজ করেছি। ‘কারমাইকেল কলেজ বার্ষিকী ’ (১৯৭৫-৭৬) ও এই কলেজের পত্রিকা বিভাগের একুশে সাময়িকী ‘সংশপ্ত’(১৯৭৭), বাংলা বিভাগের একুশে সংকলন ‘শোণিতে সূর্যোদয়’(১৯৭৫) সম্পাদনাসহ অনেকগুলো সাহিত্য পত্রিকা ও সংকলন, স্মারকগ্রন্থ ও স্মরণিকা সম্পাদনা ও প্রকাশনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক অনেক সেমিনার ও কর্মশালায় আলোচনা ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছি। এছাড়া সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ে অবদানের জন্য পদক ও সম্মাননা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করেছি। ছাত্র জীবন থেকেই বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম ও এখন তা অব্যাহত রয়েছে। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে কারমাইকেল কলেজে প্রতিষ্ঠিত “শাব্দিক সাংস্কৃতিক সংসদ”এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং এই কলেজের বাংলা সমিতি ও বাংলা সেমিনারের সম্পাদক ছিলাম। এছাড়া, কতিপয় কবিতা কর্মী, রংপুরের সদস্য, ছড়া সাহিত্য পরিষদ, রংপুরের কোষাধ্যক্ষ, অভিযাত্রিক সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ, রংপুরের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত রংপুর সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের সূচনালগ্ন থেকেই জড়িত । পর্যায়ক্রমে এই সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক, সাহিত্য সম্পাদক, যুগ্ম-সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি এবং সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে আজীবন সদস্য ও উপদেষ্টা পদে অধিষ্ঠিত রয়েছি। সোনালী ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, রংপুর এর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ব্যাংকার্স ক্লাব, রংপুরের দপ্তর ও মিলনায়তন সম্পাদক ছিলাম। বাংলাদেশ বেতার, রংপুর কেন্দ্রের সঙ্গেও সংশ্লিষ্টতা প্রায় চার দশকের। শুরু ১৯৭৪ সালে কারমাইকেল কলেজে পড়ার সময় ‘ক্ষেতে-খামারে’অনুষ্ঠানে “দেওয়ানির বৈঠকখানায়”‘সমাজ গঠনে যুব সমাজে যুব-সমাজের ভূমিকা’-শীর্ষক আলোচনায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। এরপর তরুণকন্ঠ, সাহিত্য বিচিত্রা, সম্ভার, সুখিজীবন, অহংকারের বাংলাদেশসহ সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠানে কথিকা পাঠ, আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ পাঠ এবং বিভিন্ন জাতীয় দদিবস ও বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা, চলতি ঘটনার পর্যালোচনা, গ্রন্থ আলোচনা, সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় আলোচনা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করেছি। এছাড়া, ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠান ঘোষক ও ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে সংবাদ পাঠক হিসেবে কণ্ঠস্বর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ বেতারের গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। ছাত্রজীবন থেকে বিতর্ক চর্চার সাথে জড়িত থাকার সুবাদে ১৯৭৬ ও ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে বিটিভি আয়োজিত প্রথম ও দ্বিতীয় ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায়’ রংপুর কারমাইকেল কলেজ দলের সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেছি। এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমরা দু’বারই দলীয়ভাবে বিজয়ী হই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ পড়াকালীন ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দেও টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমার আবাসিক হল নবাব আব্দুল লতিফ হল দলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। কিন্তু ঠিক সে সময়েই সোনালী ব্যাংকের চাকরিতে যোগ দিতে আসার কারণে ঐ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।পরবর্তীতে অনেক বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দান করেছি । বিতর্ক শিল্পের কলাকৌশল বিষয়ে আমার অনেক লেখা কারমাইকেল কলেজ বিতর্ক পরিষদ-এর প্রকাশনা ‘মনীষা’সহ বিভিন্ন বিতর্ক বিষয়ক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৮ সালে ব্র্যাক-এর-উদ্যোগে অতি-দারিদ্র নিরসন কর্মসূচির আওতায় সর্বপ্রথম ও দ্বিতীয় বারে রংপুর জেলা ও কুড়িগ্রাম জেলা পর্যায়ে আয়োজিত আন্ত-কলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছি। আবৃত্তি চর্চা ও প্রশিক্ষণের সঙ্গেও জড়িত দীর্ঘদিন ধরে। ২০০২ সাল থেকে স্বরশৈলী আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, রংপুর ও ২০১৩ সাল থেকে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে আবৃত্তি প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত । এর আগে শাব্দিক সাংস্কৃতিক একাডেমী, রংপুর এবং অভিযাত্রিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদ, রংপুর পরিচালিত আবৃত্তি প্রশিক্ষণ কোর্সেও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সাংবাদিকতার অঙ্গনেও বিচরণ চার দশক পেরিয়ে গেছে। আমার সংবাদের প্রতি প্রথম আগ্রহ জন্মে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে বাড়িতে (এলাকার মধ্যে প্রথম) রেডিও আসার সুবাদে। রেডিওর সংবাদ বুলেটিনগুলো খুব আগ্রহ সহকারে শুনে মনে রাখতাম এবং পরে জরুরি সংবাদগুলো অন্যান্যদের জানাতাম। বিশেষ করে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় আমার আব্বা রেডিওর সংবাদ নিয়মিতভাবে মনিটর করে একটি ডাইরিতে লিখে রাখতেন। পাশের গ্রামের দাদার এক বন্ধু মরহুম মোজাম্মেল হক সরকার (নাদু সরকার) প্রতিদিন বিকেলে এসে আমার কাছে জানতে চাইতেন “কিরে রয়টার আজকের খবর কি বল ?” ‘রয়টার’ মানে কি তখন সেটা জানা না থাকলেও আব্বার ডাইরি থেকে মনিটরকৃত খবরগুলো তাঁকে পড়ে শোনাতাম। এতে সংবাদ সম্পর্কে একটা ধারণা হওয়ার পাশাপাশি রেডিওর সংবাদ পাঠকদের অনুকরণে সংবাদপাঠের একটা অভ্যাসও গড়ে ওঠে। আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকতার শুরু বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ফেরদৌস আহমেদ কোরায়েশী সম্পাদিত তৎকালীন অর্ধসাপ্তাহিক “দেশবাংলা” পত্রিকার মাধ্যমে- প্রথমে গাইবান্ধা ও পরে রংপুর জেলা সংবাদদাতা হিসেবে । পরবর্তীতে তিনি জাতীয় বাংলা দৈনিক “দৈনিক ইনকিলাব”, “দৈনিক লাল সবুজ”, “দৈনিক নতুন দিন”, “সাপ্তাহিক একুশের কণ্ঠ”, ইংরেজি দৈনিক “দি টেলিগ্রাফ” ও “দি নিউজ টুডে” পত্রিকার রংপুর জেলা সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছি দীর্ঘ সময়। এছাড়া, জাতীয় অনলাইন নিউজ মিডিয়া “মাইবাংলা নিউজ ডট কম”এর রংপুর বিভাগীয় প্রধান ও “ই-কণ্ঠ ডট কম”এর রংপুর প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছি। রংপুর থেকে প্রকাশিত অধিকাংশ সংবাদপত্রে বিভিন্নভাবে জড়িত ছিলাম। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ মে খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল সম্পাদিত “দৈনিক দাবানল”এর প্রথম সংখ্যায় “আমরা চাই সংবাদপত্র আমাদের কথা বলুক” শিরোনামে বিশেষ সম্পাদকীয়টি আমিই লিখেছিলাম। দীর্ঘদিন এ পত্রিকায় ‘সাত-সতেরো’ এবং ‘বেরসিকের বখাটে কলম’ শিরোনামে কলাম লেখা এবং সেই সাথে অনুবাদক হিসেবেও কাজ করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে রংপুর থেকে প্রকাশিত “সাপ্তাহিক প্রতিফলন”এর বার্তা সম্পাদক, “দৈনিক পরিবেশ” এর প্রথম বার্তা সম্পাদক, “দৈনিক বিজলীর” সাহিত্য সম্পাদক, “সাপ্তাহিক রংপুর বার্তা”র সম্পাদক, “দৈনিক রংপুর” ও “দৈনিক আখিরা” এর বার্তা সম্পাদক, “দৈনিক যুগের আলো”এর সম্পাদকীয় লেখক ও সাহিত্য সম্পাদক, “দৈনিক রংপুর চিত্র” এবং “দৈনিক বাহের সংবাদ” পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে রংপুর থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যম “উত্তরবাংলা ডট কম”এর উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত। সাংবাদিকতা বিষয়ক অনেক প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ এবং প্রশিক্ষণ দান করেছি। রংপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্য। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে আঞ্চলিক বার্তা সংস্থা, বাংলাদেশ বেতার, রংপুর-এর চুক্তিভিত্তিক ‘সংবাদ অনুবাদক’ (এ-গ্রেডভূক্ত) হিসেবে নিয়োজিত আছি। পারিবারিক জীবনে ১৯৮৩ সালের ১৯ জানুয়ারি বিশিষ্ট কবি ও লেখক মনোয়ারা বেগম হীরার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। আমার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ- কলেজে প্রভাষক পদে কর্মরত অবস্থায় ১৯৮৬ সালে পিত্তথলির পাথর অপসারণের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন করিয়ে বড় ধরনের জটিলতার শিকার হন। পরে ঢাকায় তৎকালীন পিজি হাসপাতালে দু’দফা অপারেশন করিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ একমাত্র শিশুকন্যা ফারিণ আনোয়ার বিতস্তাকে রেখে অকালে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। পরবর্তীতে তাঁরই সহোদরা মেরাশেদা বেগম মীরার সঙ্গে পুনঃ পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হই এবং মেরাশেদা বেগম মাতৃহারা শিশুকন্যা বিতস্তার মায়ের অভাব পূর্ণ করার গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। একারণে তাঁর মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আমার সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা ও কন্যা বিতস্তার লেখা পড়া ও সেই সাথে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর নিবিড় পরিচর্যা ও আদর-স্নেহে একমাত্র সন্তান ফারিণ আনোয়ার বিতস্তা রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি পাশের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূ-তত্ব ও খণিবিদ্যা বিষয়ে বি.এসসি অনার্স ও এম.এসসি (প্রথম শ্রেণি) ডিগ্রি অর্জন করে। কন্যা বিতস্তা বিয়ের পর বর্তমানে তার স্বামী আব্দুল্লাহ আল মামুন তুহিন (স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস এর এইচআরডি এক্সিকিউটিভ)-এর সঙ্গে ঢাকায় অবস্থান করে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। বিতস্তা ছোটবেলা থেকেই আবৃত্তি, সঙ্গীত, চিত্রাঙ্কন, বিতর্ক, অভিনয় ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত এবং বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছে। বিতস্তা বাংলাদেশ বেতার, রংপুর কেন্দ্রের সবুজমেলা ও তরুণকন্ঠ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছে। পরে বাংলাদেশ বেতার, রাজশাহী ও ঢাকা কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ও চ্যানেলআই-এ আবৃত্তি পরিবেশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেছে। সে বাংলাদেশ বেতার, রংপুর কেন্দ্রের একজন তালিকাভুক্ত ‘সংবাদ পাঠক’ হিসেবে এখনও সংবাদ পাঠ করে থাকে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ জন্মদাত্রী জননীকে হারিয়েছি, আব্বা অশীতিপর বয়সে গ্রামের বাড়িতে অপর তিন পুত্র ও নাতি-নাতনিদের সাথে বাস করছেন। আর আমাদের একমাত্র সন্তান (কন্যা) বিতস্তাকে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে আমরা রংপুরে “হীরাঝিলে” টোনা-টুনির সংসার যাপন করছি।ব্যাংকের চাকরি থেকে অবসর লাভের পর সাংবাদিকতা, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় নিবিড় ভাবে আত্মনিয়োগ করি। তবে এতে কিছুটা বিরতি পড়ে গত বছর (২৪ ডিসেম্বর,২০১৩ ) সন্ধ্যায় স্বরশৈলী আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রে রেডিওর একটি অনুষ্ঠানের জন্য শিক্ষার্থীদের মহড়া শেষে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে পিছলে পড়ে ডান পায়ের দুটি হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে। আল্লাহর অশেষ রহমতে ও সবার দোয়ায় এখন অনেকটাই সুস্থ হলেও পায়ের ভিতরে লাগানো রড রয়ে গেছে। বাইরে চলাফেরা করতে ক্র্যাচের সাহায্য নিতে হয়। তবু ক্র্যাচে ভর দিয়েই প্রিয় প্রতিষ্ঠান রংপুর সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ, স্বরশৈলী আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, বাংলাদেশ বেতার, রংপুর, জেলা শিল্পকলা একাডেমী এবং উত্তরবাংলা ডটকমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে হাজির হওয়ার চেষ্টা করি। পাশাপাশি প্রায় সর্বক্ষণ নানা বইপত্র পড়াশুনা এবং কম্পিউটারে বসে চলে লেখালেখি ও ইন্টারনেটের সহযোগিতায় দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তা পাঠানোর কাজ। শিক্ষা ও চাকরি জীবন এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা ও সাংবাদিকতাসহ দীর্ঘ জীবনের সকল ক্ষেত্রে নিজে পরিবার, সমাজ ও জাতিকে কতটুকু দিতে পেরেছি জানিনা। তবে চেষ্টা করেছি সকল ক্ষেত্রে নিজেকে উজাড় করে দেবার। এ ক্ষেত্রে আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু অধ্যাপক মুহম্মদ আলীম উদ্দিন স্যারের একটি উক্তি “ জীবনকে দৈর্ঘ্যে বাড়ানো না গেলেও প্রস্তে বাড়ানো যায়” সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। জীবনের চলার পথে দাদা-দাদি, নানা-নানি, মা-বাবা, ভাইবোন ও অসংখ্য আত্মীয় স্বজন এবং শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকগণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের স্নেহ-আশীর্বাদ, শুভেচ্ছা-ভালবাসা এবং সার্বিক সহযোগিতা ও শুভকামনা লাভের পরম সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এজন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। আজ জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় ৬১তম জন্মদিনের প্রাক্কালে সকলের প্রতি জানাই গভীর কৃতজ্ঞতা, সালাম ও শুভেচ্ছা এবং সকলের শুভ কামনা করি। অতীতের মত সকলের এই আন্তরিক শুভেচ্ছা-ভালবাসায় স্নাত হয়ে সবাইকে সাথে নিয়ে জীবনের বাকী কটা দিন পথ চলতে চাই। এজন্য মহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত এবং সবার দোয়া কামনা করি। সেইসাথে এই দীর্ঘ জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাসের অক্সিজেন সরবরাহসহ অন্য সব নিয়ামত দিয়ে বেঁচে রাখার জন্য মহান প্রতিপালকের দরবারে জানাই লাখো-কোটি শুকরিয়া। লেখক : সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক। উপদেষ্টা সম্পাদক, উত্তরবাংলা ডটকম।

মন্তব্য করুন


 

Link copied