আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখতে বসেছে

কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখতে বসেছে

 width=
 
শিরোনাম: রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর       কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি      

 width=
 

তালা নিয়ে উড়ে যাক সহিংসতার শকুন!

বৃহস্পতিবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৫, দুপুর ১২:৪৪

আহসান কবির

তালা ভেঙে চুরি ডাকাতির কথা শুনেছি আমরা। রোমান্টিক ঢঙে চাবি ভাঙার কথা শুধু রবীন্দ্রনাথ শুনিয়েছেন! এই গানটি ছাড়া চাবি ভাঙার আর কোনও বিখ্যাত নজির আমরা দেখিনি!কিন্তু বাংলাদেশে যে তালাটি তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে সেটি আদৌ রোমান্টিক নয়। সন্দেহ, অবিশ্বাস আর বিতর্কে ঘেরা এমন তালা হাজার বছরেও একবার পাওয়া যায় না!

এই তালা প্রথম কবে কে কোন দোকান থেকে কিনেছিলেন সেটা এখন আর না জানলেও চলবে। তবে এই তালা এখন বাংলাদেশের মূর্ত প্রতীক। অবরোধ আর সহিংসতার আগুনে পুড়ছে দেশ, তালাবদ্ধ হয়ে আছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুও দুই নেত্রীর দূরত্ব কমাতে পারেনি। আমরা এই নির্মম তালার দিকেই নজর দেই।

তালা-

২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের চার তারিখ সর্বপ্রথম তালাটি আলোচনায় আসে। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের গেটে এই তালা মারা হলে দ্রুত রাজনৈতিক চরিত্রের আদল পেয়ে যায় ওটা! তালার সঙ্গে দুই দফায় বালু,সিমেন্ট আর মাটি ভর্তি ট্রাক (প্রথমবার এগারটি, দ্বিতীয় দফায় সাতটি) এনে পুলিশ ঘিরে রাখে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়। রাস্তায় ট্রাক, দরজায় তালা, গণতন্ত্রের দারুন জ্বালা! খালেদার সঙ্গে অনেকেই ভুগতে শুরু করেন অজানা আশঙ্কায়! আশঙ্কা এখনও পিছু ছাড়েনি!

তালা-

বুমেরাং বলে একটা জিনিস আছে (অস্ত্র না খেলনা?)। বুমেরাং হয়ে এই তালা শেখ হাসিনার দিকেই ফিরে এসেছে। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক মৃত্যু হলে শেখ হাসিনা ছুটে যান খালেদা জিয়ার গুলশান অফিসে। এরপরের ঘটনা সবার জানা। খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে- রাজনৈতিক এই বক্তব্যের সামনে আসলে ঝুলছিল সেই তালা, যেটা সরকারের পুলিশ বাহিনী আগেই খালেদার গুলশান অফিসে ঝুলিয়ে রেখেছিল!

এই তালা নিয়ে সীমাহীন বিদ্রুপও করা হয়েছে! বলা হয়েছে খালেদা নিরাপত্তা চেয়েছিলেন বলে এই ব্যবস্থা! আরেক মন্ত্রী বলেছিলেন অফিস সংস্কারের জন্য খালেদা জিয়া নিজেই এসব ট্রাক এনেছিলেন। স্বয়ং শেখ হাসিনা বলেছেন -উনিতো বাসার বাইরে থাকতেই পছন্দ করেন! তবে চাইলে উনি অফিস ছেড়ে বাসাতে যেতে পারেন। উনাকে কেউ আটকে রাখেনি!

তবে তালাটা ঠিকই ছিল এবং এখন পর্যন্ত আছে! এই তালা খুলে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি। পৃথিবীটা সম্ভবত এমনই। তালা যার, তার কাছে সব সময়ে খোলার চাবি থাকে না!

তালা-

রাজনৈতিক চরিত্র পেলেও তালা আগে থেকেই ছিল এই দুই দলের রাজনীতিতে। এই তালা ভেঙে ফেলার বা অকার্যকর করার একান্ত কামনা এ দেশবাসীর ছিল। স্বৈরাচার এরশাদের তখনই পতন হয়েছিল যখন দুই নেত্রী শেষমেষ এক হয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নামতে পেরেছিলেন। আর তাই তখন একটা ছড়া দুর্দান্ত জনপ্রিয় হয়েছিল- কেউ বলে খালেদা, কেউ বলে হাসিনা/দুই ভাগে ভাগ হওয়া মোটে ভালোবাসি না!

এই দুইভাগে ভাগ হওয়ার জন্যই তালার দরকার! যার উৎসাহেই তালা দেওয়া হোক না কেন, এই তালা সবসময়ে বাংলাদেশের বিপরীতে গেছে, ভবিষ্যতেও যাবে!!

কারও পক্ষেই এই শোক মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে যখন শেখ হাসিনা সমবেদনা জানাতে ছুটে যান তারই সরকারের অবরুদ্ধ করে রাখা খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে, হয়তো তখন রাজনৈতিক ইনজেকশনের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, খালেদা জিয়া রাজনৈতিক ঘুম তখন আর ভাঙে না!

তালা-

রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আছে- আমাদের গেছে যেদিন, তা কি চিরতরেই গেছে? শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিয়েতে খালেদা জিয়া গিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা শত ব্যস্ততার মাঝে বলেছিলেন- খেয়ে যাবেন কিন্তু! . ওয়াজেদ আলী মিঞা মারা যাবার পরে খালেদা জিয়া সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনার কাছে। কিন্তু আমাদের গেছে যেদিন তা হয়তো চিরতরেই গেছে!

শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা হবার পর সারা দেশ, এমন কী পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ আঁতকে উঠেছিলেন। অনেকে ভাবতে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশ কি পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক কিংবা নাইজেরিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করছে? রাষ্ট্রীয়ভাবে এমন সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে? সেদিন খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে দেখতে গিয়েছিলেন, কিন্তু শেখ হাসিনা তাকে দেখা দেননি। রাষ্ট্রীয় এমন সন্ত্রাসের অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিএনপির পতন, আসে এক এগার, আসে মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিনের সরকার। দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্য আসে আরেক তালা মারা পদ্ধতি, দুই বছর এদেশের রাজনীতিতে নামে চরম অস্থিরতা আর আশঙ্কা। এরপর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকারের নিরঙ্কুশ বিজয় এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তন।

এরপর খালেদা জিয়ার বাসস্থান থেকে তাকে উচ্ছেদ এবং খালেদা জিয়ার মন্তব্য- আমি এখন থেকে উদ্বাস্তু। জনসভা করতে না দেওয়া, রাজনৈতিক গুম খুনের দৌরাত্ম, সেই সঙ্গে তারেক রহমান আর আরাফাত রহমানের দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য হওয়াটাকে স্বাভাবিকভাবে নেননি খালেদা জিয়া। পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি দুঃখ হচ্ছে বাবা-মায়ের কাঁধে সন্তানের লাশ। কারও পক্ষেই এই শোক মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে যখন শেখ হাসিনা সমবেদনা জানাতে ছুটে যান তারই সরকারের অবরুদ্ধ করে রাখা খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে, হয়তো তখন রাজনৈতিক ইনজেকশনের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, খালেদা জিয়া রাজনৈতিক ঘুম তখন আর ভাঙে না!

যদিও মৃত কোনও মানুষের ঘর সবার জন্য খোলা থাকার কথা! কিন্তু সেটাতো বাসা না, খালেদা জিয়া তথা বিএনপির গুলশান অফিস! খালেদা জিয়ার তো সেখানে থাকার কথা ছিল না।

কোকো, হোক সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, সাত বছর যে দেশে ফিরতে পারেনি, তার মাথা ছুঁয়ে খালেদা জিয়ার কান্নায় ভেঙে পড়ার দৃশ্য আবেগী করে তুলেছে অনেক মানুষকে। হরতালে, অবরোধে, রাস্তায় আর মিছিলে বিএনপি কর্মীদের দেখা না গেলেও কোকোর জানাজায় ছিল নজরকাড়া মানুষের ভিড়! যদিও আসল সত্য কোকোর সাজা হয়েছিল এবং তিনি বিএনপির কেউ ছিলেন না। কোকোর মৃত্যুও দুই নেত্রীর দূরত্ব ঘোচাতে পারেনি, সেই তালাটা ব্যবধান হয়ে দাঁড়িয়েছিল, দাঁড়িয়েই আছে!

১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখন পুরনো ঢাকার একটি আসনের এমপি ছিলেন হাজী মো. সেলিম। তার কথা কেউ না শুনলে সেই বাসায় তালা মেরে দিতেন তিনি। এরপর তার বিচারের আয়োজন করা হতো এলাকার লোকজনদের নিয়ে। হাজী সেলিম তখন বলেছিলেন সন্ত্রাস দমনে তালা পদ্ধতির বিকল্প নেই! সফলতা শতকরা শতভাগ!

তালা-

সহিংসতার শকুন তাই উড়ে বেড়াচ্ছে দেশে। সরকার আগেও যেমন ছিল দমনপীড়নে, মামলা আর গ্রেফতারে, ক্রসফায়ার কিংবা গুমে, এখনও কোনও না কোনও ফর্মে সেভাবেই আছে। ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখন পুরনো ঢাকার একটি আসনের এমপি ছিলেন হাজী মো. সেলিম। তার কথা কেউ না শুনলে সেই বাসায় তালা মেরে দিতেন তিনি। এরপর তার বিচারের আয়োজন করা হতো এলাকার লোকজনদের নিয়ে। হাজী সেলিম তখন বলেছিলেন সন্ত্রাস দমনে তালা পদ্ধতির বিকল্প নেই! সফলতা শতকরা শতভাগ!

তালা পদ্ধতির শতকরা শতভাগ সফলতার অহঙ্কারে ভুগছে আওয়ামী লীগ। আর সীমাহীন অন্ধ আক্রোশে রাস্তায় চোরাগোপ্তা ভাবে নামছে কেউ কেউ (কারা তারা?। সরকার বলছে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মী। আর বিএনপি ও জামায়াত বলছে সরকার তার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার কর এসব করছে)। এরা পুড়িয়ে দিচ্ছে বাস, পেট্রোল বোমায় পুড়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। পুড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। দুই নেত্রীর এই অন্ধ গোয়ার্তুমির শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ! সহিংসতার শকুন ক্রমশঃ মোটাতাজা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাংলার আকাশে।

বাংলা ছবির একটা জনপ্রিয় গান আছে এমন- ঝড় বৃষ্টি মাথায় লইয়া গেলাম রাইতের বেলা/গিয়া দেখি কাঠের দরজায় লোহার একখান তালা/চাবি লইয়া নিঠুর কালা তুইতো আইলি না/বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না।

জনগণ এখনও যাচ্ছে দুই নেত্রীর কাছে। তালা দেখে ফিরে আসছে তারা। তাদের সামনে গর্ত পেছনে শেয়াল। উপরে শকুন চারিদিকে দেয়াল! পিঠ ঠেকে গেলে ঘুরে দাঁড়ায় মানুষ।

মানুষ জাগবে ফের। মানুষই আমাদের নিয়ে যাবে দুঃসময় থেকে সুসময়ে! তালা মুখে নিয়ে পালাতে বাধ্য হবে সহিংসতার শকুন। প্রার্থনাই হয়তো সম্বল এখন!

লেখক: সাহিত্যিক ও রম্য লেখক।

ইমেইল: theahsankabir@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied