মালিকদের দাবি, দ্রুত এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে শুধু শ্রমিকরাই নয়, মিল ও চালালের মালিকরাও সর্বস্বান্ত হবে। ক্রমাগত লোকসান ও ব্যাংক ঋণের কারণে দেউলিয়া হয়ে পড়বে গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটি।
জয়পুরহাট জেলায় ১৩টি অটো রাইস মিলসহ ৫০১টি মিল ও চাতাল রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, জেলার কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারের মেসার্স ফিরোজা অটো রাইস মিলটি প্রায় ১৫ দিন ধরে বন্ধ। মিলে কর্মরত ৪৩ জন শ্রমিক বেকার বসে আছেন। অার রোজগার না থাকায় মিল মালিকের কাছ থেকে ধার করে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছেন তারা।
মিলের মালিক অব্দুল বারী বলেন, 'অবরোধের কারণে মিল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। অার এভাবে চলতে থাকলে আমরা ঋণগ্রস্ত হবো তো বটেই, দেউলিয়া হওয়া ছাড়াও উপায় থাকবে না।'
অন্যদিকে, জেলার পাঁচশিরা বাজারের আকন্দ রাইস মিলে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সেখানে ১০/১২ জন শ্রমিক ধান শুকানোর কাজ করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাতাল মালিক আব্দুল আজিজ আমন মৌসুমে বিপুল পরিমাণ ধান মজুদ করায় চাতালে সেগুলো সেদ্ধ ও শুকানোর কাজ চলছে। কিন্তু ট্রাক চলাচল বন্ধের কারণে চাল বিক্রি করা যাচ্ছে না। অার এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে এই মিলও বন্ধ হয়ে যাবে।
অপরদিকে, কালাইয়ে একই মালিকের প্রতিষ্ঠান থ্রি এফ ফুড প্রসেসিং লিমিটেড এ দেখা গেছে উল্টো চিত্র। এখানে অবরোধের কারণে চাল প্রসেসিং এর কাজ বন্ধ থাকায় প্রায় ৪০ জন শ্রমিক বেকার বসে আছেন। প্রতিদিন শ্রমিকদের প্রসেসিং করা চাল বস্তায় প্যাকেটজাত করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর কাজে ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু এখন তারা বেকার হয়ে বসে আছেন।
মিলের শ্রমিক খোরশেদ আলম ও সাইফুল ইসলাম জানান, একদিন কাজ করলে চার থেকে পাঁচশ টাকা মজুরি পেতেন। এতে সংসার খরচ বাদ দিয়ে ধার দেনা শোধ করে তারা চলতে পারতেন। কিন্তু অবরোধ আর হরতালে কাজ বন্ধ থাকায় এখন তাদের দিন কাটছে বসে বসে। অথচ দিন শেষেই ৪০ থেকে ৫০ টাকা তাদের এনজিওর কিস্তি শোধ করতে হয়।
বারী অটো রাইস মিলের ম্যানেজার ছরোয়ার হোসেন বলেন, 'অবরোধ চলাকালে জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০টি ট্রাকে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। তাই ধান-চাল কেনা-বেচা করতে পারছি না। আর ধান না পেয়ে অটো রাইস মিলও বন্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি জয়পুরহাট জেলার সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বলেন, 'রাস্তাঘাট অরক্ষিত, হরতাল অবরোধে সমস্ত পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা ধানও কিনতে পারছি না, চালও বেচতে পারছি না। এ অবস্থায় জেলার ৮০ ভাগ মিল চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ২০ ভাগও বন্ধের পথে।'
জয়পুরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক চৌধূরী মোছাব্বের হোসেন খান বলেন, 'জেলার ৫০১ জন মিল মালিক চলতি আমন মৌসুমে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে ইতোমধ্যেই ৬ হাজার ৫৯০ মেট্রিক টন চাল পরিশোধ করেছেন। বাকি চাল আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শোধ করবেন।
তবে অবরোধের কারণে বর্তমানে মিল-চাতাল বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করলেও তিনি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।