গত রবিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে শুরু করা টানা অনশন কর্মসূচির ফলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নয় জন।
আজ বুধবার সকালে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক তারিকুল ইসলাম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধান, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান (রিপন), এবংঅর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহজাহান আলী, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের মো. মিল্লাদ হাসান, মো. হাবিবুর রহমান, এবং কর্মচারী আব্দুল ওহাব, আব্দুল মালেক মিয়া এবং আসাদুজ্জামান কবির গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহজাহান আলীকে গতকাল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্পের সামনে এই অনশন শুরু করেন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেওয়ার পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঢাকায় অবস্থান করায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়ে সাড়া না দেওয়ায় আবারো নিরাপত্তাহীতায় ভুগছেন অনশনকারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে অনশনকারীদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে জানালেও তারা নিরাপত্তা দিতে অস্বীকার করে। তবে অনশনের নিরাপত্তার বিষয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার ও রংপুর কোতয়ালি থানার ওসিকে অনশনকারীদের পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, সেশনজট নিরসন ও অবিলম্বে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণসহ আট দফা দাবিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে একই স্থানে কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী অনশন কর্মসূচি শুরু করলে উপাচার্যপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বহিরাগতরা তাদের সেখান থেকে উঠে যাওয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু অনশনকারীরা তাদের অবস্থানে অনঢ় থাকলে মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে। এ সময় শিক্ষকদের ডরমিটরি থেকে তাদের বাঁচাতে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক এইচএম তারিকুল ইসলাম এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান এগিয়ে আসলে তাদের ওপরও হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে ওই দুই শিক্ষকসহ অন্তত ১২ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ছয় জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতরা রবিবার মেডিকেল থেকে রিলিজ নিয়ে এসে একই স্থানে আবার অনশন শুরু করেন। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একাত্মতা ঘোষণা করেন। এছাড়াও উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলন করা ‘সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’ সমর্থন দেয়।
অনশনরত শিক্ষার্থী অর্থনীতি বিভাগের শাহজাহান আলী বলেন, ‘গত বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনাসহ শিক্ষার্থীদের কিছু যৌক্তিক দাবি নিয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অনশনে বসেছিলাম কিন্তু উপাচার্যের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা গভীর রাতে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। কিছুটা সুস্থ হয়ে আবার আমাদের দাবি নিয়ে বসেছি। এবার শুধু ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা নয়, যে উপাচার্য সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে পারে তাঁর অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব।’
বুধবারের হামলার ঘটনায় আহত রসায়ন বিভাগের শিক্ষক এইচএম তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দাবি একটাই উপাচার্যের অপসারণ। তাঁর অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নাজমুল হকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। সহকারী প্রক্টর মো: শাহজামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোর্শেদ উল আলম বলেন, ভিসি স্যার ঢাকা থেকে ফিরে এসেই এ বিষয়ে কথা বলবেন। প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি নিজেও প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে পাচ্ছি না।
উল্লেখ, উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবীকে অপসারণের দাবিতে গত তিন মাস থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা। গত ২৭ অক্টোবর ২০১৪ তারিখ থেকে শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন দাবিতে এই আন্দোলন শুরু করলেও তাতে উপাচার্য কর্ণপাত না করায় পরে এটি সর্বজনীন আন্দোলনে রূপ নেয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক সমিতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে আন্দোলন পরিচালনার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে ‘সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’ গঠন করা হয়। আন্দোলন শুরু হওয়ার পরেই উপাচার্য তাঁর একক সিদ্ধান্তে ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করেন। গত ৪, ৫ ও ৬ ডিসেম্বর এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণসহ হল, ক্যাফেটেরিয়া অবিলম্বে খুলে দেওয়ার দাবিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাক দেয় শিক্ষার্থীরা। এসব আন্দোলনে মূলত অচল হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়।