আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

সাহিত্যিক সত্যন সেন

শনিবার, ২৮ মার্চ ২০১৫, দুপুর ০৩:০১

ড. শাশ্বত ভট্টাচার্য

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা বিক্রমপুরের গর্ব সত্যন সেন আমরা তাকে জানি সংগ্রামী হিসেবে। জাতীয় স্বার্থে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছেন। জীবনের বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে জেলে থাকতে হয়েছে। তিনি আমাদের সকলের পরিচিত বিপ্লবী সত্যেন সেন। তিনি একাধারে বিপ্লবী, সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি সাংবাদিকতার সাথেও যুক্ত ছিলেন। তিনি দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংগঠন, উদীচীর প্রতিষ্ঠাতাও সত্যেন সেন। সত্যেন সেনের জন্ম ২৮ মার্চ ১৯০৭ সালে। জন্মস্থান মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনার গ্রামে। তাঁর জন্ম তারিখটা নিয়ে একটু ভিন্নমত রয়েছে। ‘জীবন কথা’ নামের একটি বইয়ে সত্যেন গবেষক কাজল বন্দ্যোপাধ্যায় ও নজরুল আলম লেখেন সত্যেন সেনের জন্ম ২৮ মে ১৯০৭। কিন্তু সত্যেন সেনের বোন প্রতিভা সেনের উদ্ধৃতি দিয়ে “সত্যেন সেন” নামক গ্রন্থে ড. সৌমিত্র শেখর লেখেন- সত্যেনের জন্ম ২৮ মার্চ ১৯০৭। উল্লেখিত দু’টি তারিখই বাংলাদেশ ভারতে ব্যবহূত হচ্ছে। সত্যেন সেন যখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র, তখন এক বিপ্লবীর সাথে তার পরিচয় ঘটে। তার নাম মাহাংগু বানিয়া বাউ। এর কাছেই সত্যেন দেশপ্রেম, স্বাধীনতা ও সংস্কৃতির সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করেন। শৈশবের সেই গুরুকে সত্যেন কথা দিয়েছিলেন বড় হয়ে দেশের কাজ করবেন। সত্যেন অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করেছেন। বিএ পরীক্ষার পরই সত্যেন সেন ১৯৩১ সালে গ্রেফতার হন। আলীপুর ও বহরমপুর জেলে তিনি কারাবাস করেন। জেলে থেকেই তিনি ১৯৩৩ সালে এম.এ পাস করেন। প্রথম পর্যায়ে সত্যেন সেন পাঁচ বছর জেলে ছিলেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সত্যেন সেন সোজা চলে আসেন নিজ গ্রাম মুন্সীগঞ্জের সোনারং গ্রামে। তিনি সমমনাদের নিয়ে গড়ে তোলেন কৃষি আন্দোলন। সাথে পেয়ে গেলেন আরো এক কৃষক নেতা শ্রী জিতেন ঘোষকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় তিনি অনেক গান ও কবিতা রচনা করেন। সে সকল কবিতা ও গান তাঁকে সাহিত্যের একটি অবস্থানে নিয়ে আসে। সত্যেন সেনের একটি কবিতা হতে কয়েকটি চরণ তুলে ধরা হলো- “মানুষের কাছে পেয়েছি যে বাণী, তা দিয়ে রচি গান। মানুষের লাগি ঢেরে দিয়ে যাব, মানুষের দেয়া প্রাণ।’ এমনি অসংখ্য গান, কবিতা প্রবন্ধ লিখেছেন সত্যেন সেন। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান নামে দু’টি রাষ্ট্র গঠিত হয়। বাংলাদেশের অনেক হিন্দু ভারতে চলে যায়। কিন্তু সত্যেন সেন ও জিতেন ঘোষরা গেলেন না। মাতৃভূমির মায়ায় থেকে গেলেন এদেশে। কৃষক আন্দোলনের জন্য ১৯৪৯ সালে ঢাকার বনগ্রামের বাসা হতে আবার গ্রেফতার হলেন সত্যেন সেন। ছাড়া পেলেন ১৯৫৩ সালে। তিনি আটক ছিলেন ঢাকা ও রাজশাহী জেলে। তিনি কারাগারে একাধারে ৪০ দিন অনশন করেন। ব্রিটিশ ও পাক-শাসনামলে সত্যেন সেনকে ১৪ বছর কারাভোগ ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়। দীর্ঘ কারাভোগ ও নির্যাতনে সত্যেন সেনের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যায়। তাই বলে তার সাহিত্য সাধনা থেমে যায়নি। তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। সত্যেনের বিখ্যাত কয়েকটি গ্রন্থ হলো: পদচিহ্ন মহাবিদ্রোহের কাহিনী, উত্তরণ, সেয়ানা, রুদ্ধদ্বার-মুক্তপ্রাণ, অভিযাত্রী, গ্রাম-বাংলার পথে পথে, পাপের সন্তান, অপরাজেয়, আলবেরুনী, ভোরের বিহঙ্গী ও অভিশপ্ত নগরী উল্লেখযোগ্য। সত্যেন সেন সাহিত্যের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৬ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া পাপের সন্তানের জন্য তিনি ১৯৬৯ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। কর্মব্যস্ত ও ঝঞ্ঝাতাড়িত সত্যেন সেন ৫ জানুয়ারি ১৯৮১ সালে শান্তিনিকেতনে বোনের বাসায় দেহত্যাগ করেন। তাঁর কর্মের মধ্যদিয়েই আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন সত্যেন সেন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied