৫ জানুয়ারি অবরোধ ডেকে তিন মাস দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানের পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে নিজ বাড়িতে ফিরে গেলেন খালেদা জিয়া। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর টানা হরতালও প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিএনপি। অবরোধের ঘোষণা থাকলেও কর্মসূচির পক্ষে সক্রিয় নয় নেতাকর্মীরা।
বিএনপির নেতারা বলেছিলেন, যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। কার্যত ঘরে ফিরে যাওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি কি সেই যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছেছে। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই প্রশ্নের কোনো জবাব নেই বলেই অবরোধ প্রত্যাহার করছে না দলটি। কর্মীদেরকে তারা বোঝাতে চায় সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আন্দোলন শিথিল করেছে তারা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিন ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে টানা অবরোধের ডাক দেন খালেদা জিয়া। ১৫ জানুয়ারি পর থেকে তার সঙ্গে যোগ হয় প্রতি কার্যদিবসে হরতাল। আর কর্মসূচি ডাকার পর দেশজুড়ে যানবাহনে পেট্রলবোমা হামলায় পুড়ে মৃত্যু হয় প্রায় একশ মানুষের। আহত হয় শত শত। কৃষিপণ্য বিক্রি করতে না পেরে প্রথম কয়দিন দিশেহারা হয়ে যায় কৃষক। কাজ হারিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষেরা একেবারে পথে বসে যায়।
তবে ধীরে ধীরে ফিরে আসতে থাকে স্বাভাবিক পরিস্থিতি। অবরোধের মতো শিথিল হয়ে আসে হরতালও। শুরু হয় দূরপাল্লার বাস চলাচল। চালু হয় স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য। আর দুই পক্ষের সমঝোতার জন্য দেশি-বিদেশি নানা মহলের তৎপরতাও থেমে যায়। বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালের খবর গুরুত্ব হারায় গণমাধ্যমেও। নেতা-কর্মীরাও আর প্রকাশ্যে নামেনি কর্মসূচির।
আর ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর প্রত্যাহার করা হয় টানা হরতালও। তাহলে তিন মাসের আন্দোলনে কি বিএনপি পুরোপুরি ব্যর্থ?- কথা উঠেছে দলের ভেতরেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আন্দোলন কর্মসূচি সফল না হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েই তা প্রত্যাহার করেছেন’। ওই নেতা বলেন, খালেদা জিয়া যে দাবি জানিয়েছেন, তা পূরণের কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই, সেটা বুঝে গেছেন তারা।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ‘বিএনপি খালি হাতে ফেরেনি। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তালা তো আর এমনি এমনিতেই খোলেনি। আমাদের চেয়ারপারসনও জামিন পেয়েছেন। তা ছাড়া আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি, যে কোনো সময় ১০ মিনিটের নোটিশেই আবার আন্দোলন শুরু হবে’।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুহ উল আলম লেনিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অনেকটা রসিকতা করেই বলেন, ‘বিএনপি তিন মাস আন্দোলন করে খালেদা জিয়ার জামিন পেয়েছেন’।