আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: লালমনিরহাটে মোবাইল ফোনে কথা বলছিল, হঠাৎ পিছন থেকে ট্রেনের ধাক্কায় কাটা পড়লেন যুবক       ঠাকুরগাঁওয়ে নিখোঁজের ২ দিন পরে ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার       ছুটি বাড়ল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে       ডিমলা উপজেলা নির্বাচন॥ এমপির ভাই, ভাতিজা ও ভাতিজি বউ প্রার্থী-তৃণমূলে ক্ষোভ       কিশোরী গৃহকর্মীকে খুন্তির ছ্যাকা; রংপুর মেডিকেলে মৃত্যু যন্ত্রণায় পাঞ্জা লড়ছে নাজিরা      

 width=
 

আজ রংপুরের ঝাড়ুয়ার বিল ও পদ্ম পুকুর গণহত্যা দিবস

মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৮, সকাল ০৯:১৪

রিয়াদ আনোয়ার শুভ

“বুজরুক হাজিপুর, খালিসা হাজিপুর, ঘাটাবিল, রামকৃষ্ণপুর, বাঁশবাড়ী, বানিয়া পাড়া, খোর্দ্দবাগবাড়ি, মাসানডোবাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা ঘেরাও করে গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়। চালায় নির্বিচারে গণহত্যা।”

১৭ এপ্রিল দুপুরের দিকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর একটি দল বদরগঞ্জ রেলস্টেশনের পশ্চিমে ১ কিলোমিটার দূরে বৈরাগীর ঘুমটির কাছ থেকে দক্ষিণ বুজরুক হাজিপুর পর্যন্ত এলাকা ঘিরে ফেলে। অপরদিকে ঘাতক বাহিনীর অন্য একটা দল খোলাহাটি স্টেশনের পূর্বদিকে ট্যাক্সের হাটের ঘুমটির কাছে দক্ষিণে করতোয়া নদীর গা ঘেঁষে বকশিগঞ্জ স্কুল পর্যন্ত অর্ধবৃত্তাকারে ঘেরাও করে। মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুজরুক হাজিপুর, খালিসা হাজিপুর, ঘাটাবিল, রামকৃষ্ণপুর, বাঁশবাড়ী, বানিয়া পাড়া, খোর্দ্দবাগবাড়ি, মাসানডোবাসহ অন্যান্য এলাকার গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়। পাশাপাশি চালায় নির্বিচারে গণহত্যা। বেলা ২টা থেকে রামনাথপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে ধরে নিয়ে আসে ঝাড়ুয়ার বিল এবং পদ্ম পুকুর এলাকায়। সেখানে গুলি করে হত্যা করে প্রায় দেড় সহস্রাধিক মানুষকে। বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত চলে এ হত্যাকাণ্ড। ৫ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৯০ বছরের বৃদ্ধ, কেউই সেদিন রেহাই পায়নি পাকিস্তানিদের হাত থেকে। সেদিনের গণহত্যায় নেতৃত্ব দেয় পার্বতীপুরের কুখ্যাত রাজাকার বাচ্চু খান এবং কামরুজ্জামান। স্বাধীনতার পর এরা দু’জনই পালিয়ে যায় পাকিস্তানে।

Rangpur-Jharua bodhovumiবীর মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনীর রংপুর জেলার অধিনায়ক, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, লেখক, সাংবাদিক প্রয়াত মুকুল মোস্তাফিজ তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যানুসন্ধান চালিয়ে প্রায় ৪শ’ প্রাণদানকারী মানুষের বিবরণ সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু সরকারীভাবে আজও এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হয়নি। জানা যায়নি ঠিক কতজন মুক্তিকামী মানুষ এখানে শহীদ হয়েছেন। তবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মনে সেদিনের গণ হত্যায় আত্মাহুতি দিয়েছেন সহস্রাধিক মানুষ।

আজকের এই দিনের স্মৃতিচারণ করেন মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এটিএম আজহারুলের মামলার এক সাক্ষী বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকলে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এটিএম আজহারকে দেখা যায়। আজহার সেইদিন সাদা প্যান্ট-শার্ট পরে এসেছিল।’ তিনি বলেন, ‘১৭ এপ্রিল ঝাড়ুয়ারবিল পদ্মপুকুর পাড়ে ১২শ লোককে হত্যা করা হয়। এটিএম আজহার ইসলামসহ পাকিস্তানি বাহিনী বদরগঞ্জ শহরের নিয়ন্ত্রণ নেন। সে সময় তারা স্থানীয় জগদীশ নামে এক হিন্দুর বাড়ি দখল করে সেখানে শান্তি কমিটির অফিস খুলে এবং রাজাকারদের নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপন করে।’ উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, ‘বদরগঞ্জে ঝাড়ুয়ারবিল পদ্মপুকুর পাড়ের নির্মমতার সেদিনের শহীদদের স্মরণে ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।

তথ্য সূত্র : ১) মুক্তিযুদ্ধে রংপুর : মুকুল মুস্তাফিজ ২) রাজনীতি আমার জীবন : কাজী মোহাম্মাদ এহিয়া ৩) রংপুর জেলার ইতিহাস : জেলা প্রশাসন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied