গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ উত্তরের জেলা গুলোর হাওর আর জলাশয়গুলো থেকে ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। এক সময় প্রায় ২৬০ প্রজাতির দেশি মাছ এসব স্থানে থাকলেও এখন কোনো মতে টিকে আছে মাত্র ৫০ প্রজাতির মাছ।
এসব প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম নদ-নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস, খাল-বিল ভরাট করে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি নির্মাণ, চাষযোগ্য জমি তৈরি করে মাছের আশ্রমের পার্শ্ববর্তী জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি, অপরিকল্পিত পানি নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, ডিমওয়ালা মাছ নিধন, বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন, কারেন্ট জাল ও নেট জালের ব্যবহার ইত্যাদি।
এছাড়াও জেলেরা জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মা-মাছ, মাছের রেনু পোনা নির্বিচারে ধরার কারনে মাছ বংশ বৃদ্ধি করতে পারছে না। এটিও দেশি মৎস্যসম্পদ বিপন্ন হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জানা যায়, বর্তমানে মিঠা পানির দেশি প্রজাতির এ সামান্যসংখ্যক মাছ সর্বপরিচিত আখিরা, করতোয়া, নলেয়া, ঘাঘট, দুর্গদাহ, কুশুমদাহ ইছানই, রাঙ্গামাটি, দুধকুশুমসহ ছোট বড় প্রায় ২০০টির বেশি নদী ও পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয়ে টিকে আছে। এসব মাছের উৎসস্থল থেকে অতীতে বিপুল মাছ আহরণ করা সম্ভব হলেও বর্তমানে নানা কারণে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলছে। একসময় প্রায় ২৬০ প্রজাতির দেশি মিঠা পানির মাছ থাকলেও এর মধ্যে মাত্র ৫০ প্রজাতির মাছ সচরাচর দেখা যায়। এছাড়া আনুমানিক ১৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
মৎস্য অফিসের তথ্য মতে হুমকির মুখে রয়েছে আরও ১৪-১৫ প্রজাতির মাছ। জানা যায়, বিলুপ্তপ্রায় এসব মাছের মধ্যে মলা, কয়েক প্রজাতির দাঁরকিনা, নাপিত কৈ, গুতুম, বাঘা গুতুম, বালিগড়া, চাপিলা, গজার, পাবদা ইত্যাদি। এর মধ্যে হুমকির মুখে বাঘা, রিটা, নানদিনা, আইড়, মহাসুল ইত্যাদি অন্যতম। বর্তমানে বিপন্ন হওয়ার পথে পা বাড়ানো এসব মাছ এখন আর বাজারগুলোতে তেমন একটা দেখা যায় না। হাতেগোনা কয়েক প্রজাতির মাছ দেখা গেলেও মূলত বিদেশি প্রজাতির মাছ এখন হাট-বাজারগুলো দখল করে রেখেছে।
সরেজমিনে রাঙ্গামাটি বিল এলাকায় গেলে দেখা যায়, জেলেরা জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মা-মাছ, মাছের রেনু পোনা নির্বিচারে ধরছেন। বাঁধ নির্মাণ করে মাছ শিকার, ডিমওয়ালা মাছ নিধন, কীটনাশক প্রয়োগ, কারেন্ট জাল ও নেট জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করতে দেখা যায়। বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন মাছের আড়তে কার্প জাতিয় মাছ দিয়ে পুরো বাজার ভরপুর। কিছু বড় প্রজাতির মাছ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দাম এত বেশি যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে কেনা অসম্ভব। মাছ বিক্রেতারা জানান, হাওরের মাছগুলোর দাম খামারের মাছের তুলনায় অনেক বেশি।
এ ব্যাপারে দেশি মৎস্যসম্পদ রক্ষায় কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে পলাশবাড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব সুবাস জানান, মৎস্য অধিদপ্তর থেকে দেশি মৎস্যসম্পদ রক্ষায় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। জনসাধারনের সচেতনতা ও মৎস্যসম্পদ আইন মেনে যদি মাছ ধরা হয় তাহলে দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষা সম্ভব হবে।