আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: ডিমলা উপজেলা নির্বাচন॥ এমপির ভাই, ভাতিজা ও ভাতিজি বউ প্রার্থী-তৃণমূলে ক্ষোভ       কিশোরী গৃহকর্মীকে খুন্তির ছ্যাকা; রংপুর মেডিকেলে মৃত্যু যন্ত্রণায় পাঞ্জা লড়ছে নাজিরা       সারাদেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি       হিট অ্যালার্টে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি       শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল      

 width=
 

মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে হিলি

বুধবার, ২০ মার্চ ২০১৩, বিকাল ০৭:১৫

হিলির এমন কোন এলাকা নেই যেখানে মাদক পাওয়া যায় না। বিভিন্ন ধরনের মাদক গ্রহণ করে হিলির অনেক সম্ভাবনাময় মেধাবী ছাত্র, যুবক ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। অনেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে পরিবারের বোঝা হয়ে পড়েছে। অজ্ঞাত কারণে মাদক প্রতিরোধ বা বন্ধের ব্যাপারে তেমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। সারা দেশের সাথে হিলির সহজসাধ্য যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে। সড়ক ও রেলপথে হিলি থেকে দেশের সব স্থানে যাতায়াত খুবই সহজ ব্যাপার। আর এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী হিলিকে মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে।

হিলি এখন দেশের অন্যতম মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব মাদক ভারত থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে পৌঁছে হিলিতে। এর কিছুটা এখানে ব্যবহৃত হয়। কিছুটা হিলির বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিদের জন্য রেখে দেয়া হয়। বাকি মাদক পাচার করা হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মাদক পাচার ও ব্যবসার কাজে জড়িত থাকে দলের ছত্রছায়ায় থাকা এক শ্রেণীর প্রভাবশালী লোক। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে তাদের সখ্যতা থাকায় কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযানে দু’চারজন ধরা পড়লেও আইনের নানা ফাঁক-ফোঁকর গলে তারা বেরিয়ে আসে। মাদক নির্মূলের ব্যাপারে হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ‘তারা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন’। জানা যায়, মাদকের মধ্যে বিক্রি তালিকার শীর্ষে রয়েছে ফেনসিডিল। এরও আবার রয়েছে বাহারি নাম। যেমন-‘ব্যাটারি’, ‘মামা’, ‘সম্রাট’ বা ‘ছোটারাজা।’ হিলির প্রায় সব এলাকাতেই এটি পাওয়া যায়। এছাড়া রয়েছে হেরোইন, ভারতীয় মদ, বিয়ার, গাঁজা, নেশা সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট, ক্যাপসুলসহ নানা প্রকারের ইনজেকশন। হিলিতে বেশ সহজেই পাওয়া যায় হেরোইন। আর হিলির বাতাস ভারি হয়ে আছে গাঁজার গন্ধে। এখানে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত আছে বিভিন্ন শ্রেণীর লোক। এরমধ্যে রয়েছে আমদানি-কারক, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা, ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা। পাশাপাশি হিলির নির্ধারিত কিছু বাসা-বাড়িতে প্রকাশ্যে বিক্রি হয় মাদক।

শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে মাদক বেচাকেনা ওপেন সিক্রেট। কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত মাদক সেবন করছে। তবে যুবকদের মধ্যে মাদক সেবনের হার সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে বেকার ও বখাটে যুবকরা বেশি মাত্রায় মাদক সেবন করে। বিভিন্ন স্কুল কলেজের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও মাদকের ভয়াল নেশায় আক্রান্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত: তারা বন্ধু-বান্ধবের পাল্লা¬য় পড়ে নেহায়েত শখের বশে মাদক গ্রহণ করে পরে আর ছাড়তে পারে না, নেশায় পরিণত হয়ে যায়। আর মাদক সেবনের কারণে হিলির অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হলেও সংশ্লিষ্ট মাদকসেবীর মধ্যে কোন পরিবর্তন নেই। পার্বতীপুরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করলেও তেমন কাজ হয় না। অভিযান পরিচালনার আগে ভাগেই প্রভাবশালী এসব মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে খবর পৌঁছে যায়। ফলে তারা থাকে সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এখন প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে বেশি দাম নিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা-এ অভিযোগ মাদকসেবীদের। নিয়মিত মাদক সেবনের ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে যুবসমাজ। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা তা শুধু মাত্র আইওয়াশই মনে করেন এখানকার সচেতন মহল। কারণ হিসেবে তারা বলেন, যত অভিযানই পরিচালনা করুক না কেন আগে ভাগেই খবর পেয়ে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা সবসময়ই থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, প্রভাবশালী মহল, মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারী সাধারণ মানুষ ও তাদের পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন যে, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, মাদক নিয়ন্ত্রণে আইনের কঠোর বাস্তবায়ন, সচেতনতা মূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুশাসন বজায় রাখা এবং মাদক ব্যবসায়ীদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে হিলিকে মাদক মুক্ত করা সম্ভব।

মন্তব্য করুন


 

Link copied