আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

নিদাঘ সূর্যের তলে সন্তানের অমল-শীতল ছায়া- তিনি বাবা

রবিবার, ২১ জুন ২০১৫, সকাল ০৯:৪২

‘আয় রে আমার কাছে আয় মামণি, এ হাতটা ভালো করে ধর এখনই...’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের দরাজ কণ্ঠের এই সুরেলা ডাক কিংবা নগর বাউল জেমসের গাওয়া- ‘বাবা কতদিন কতদিন দেখি না তোমায়/ কেউ বলে না তোমার মতো/ কোথায় খোকা ওরে বুকে আয়/বাবা কত রাত কত রাত দেখি না তোমায়/ কেউ বলে না মানিক কোথায় আমার/ ওরে বুকে আয়..’ বাবার স্নেহের এই চিরায়ত রূপের তুলনা আছে কী?

বাবা শব্দটি যেমন নির্মল, তেমনি নিঃস্বার্থ আর পবিত্র। তাই বুঝি বাবা কারো পরম প্রিয় বন্ধু। বাবা কারো অনুপ্রেরণা। বাবা কারো আত্মবিশ্বাস। সন্তানের দুঃখে-সুখে-বিপদে-আনন্দে সব সময় পাশে থাকেন- একমাত্র বাবা-ই। এ কারণে পৃথিবীর সব বাবারাই সন্তানের কাছে অগাধ শ্রদ্ধার৷

প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রোববার পালিত হয় ‘বাবা দিবস’। এ বছর ২১ জুন তাই দিবসটি পালিত হচ্ছে। আসলে মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দ্বায়িত্বশীল- এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবস পালন করা হয়। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু।

ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই প্রথম ‘বাবা দিবস’ পালিত হয়। আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় প্রথম দিনটি পালিত হয়। আবার সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের আইডিয়া আসে। যদিও তিনি ১৯০৮-এর ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটা পান এক গির্জায় পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত আবার মাকে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। তার মনে হয়, তাহলে বাবাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার। ডড আবার তার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর, অর্থাৎ ১৯১০ সালের ১৯ জুন থেকে ‘বাবা দিবস’ পালন করা শুরু করেন।

প্রথমদিকে কিন্তু ‘বাবা দিবস’ বেশ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই পালিত হতো! ধীরে ধীরে অবস্থা পাল্টায়। ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে বাবা দিবসে ছুটি ঘোষণার জন্য একটি বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে সে সময়কার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন বাবা দিবসে ছুটি ঘোষণা করেন। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রোববার ‘বাবা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। বাবা দিবসের প্রচলন বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই।

জার্মান ভাষায় বাবা শব্দটি হচ্ছে ‘ফ্যাট্যা’ আর ড্যানিশ ভাষায় ‘ফার’। আফ্রিকান ভাষায় ‘ভাদের’ হচ্ছেন বাবা! চীনা ভাষায় আবার ‘বাবা’ কেটে ‘বা’ বানিয়ে নিয়েছে! কানাডিয়ান ভাষায় বাবা হচ্ছেন ‘পাপা’, ক্রোয়েশিয়ানরা বাবাকে ‘ওটেক’ বলে! ব্রাজিলিয়ান ও পর্তুগিজ ভাষায় বাবা ডাক হচ্ছে ‘পাই’।

ডাচ ভাষায় পাপা, ভাদের আর পাপাই এই তিনটি হচ্ছে বাবা ডাক। সবচাইতে বেশি প্রতিশব্দ বোধহয় ইংরেজি ভাষাতেই! ইংরেজরা বাবাকে ডাকেন, ফাদার, ড্যাড, ড্যাডি, পপ, পপা বা পাপা! ফিলিপিনো ভাষাও কম যায় না, এই ভাষায় বাবা হচ্ছেন তাতেই, ইতেই, তেয় আর আমা। হিব্রু ভাষায় বাবা হচ্ছে ‘আব্বাহ্’।

হিন্দি ভাষার বাবা ডাকটি অবশ্য কমবেশি সকলেই জানি- পিতাজি! আবার ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় বাবা হবে- বাপা কিংবা আইয়্যাহ! জাপানিরা তাদের ভাষায় বাবাকে ডাকে- ওতোসান, পাপা। পূর্ব আফ্রিকায় অবশ্য বাবাকে ‘বাবা’ বলেই ডাকা হয়! হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় পাপা ছাড়াও বাবা শব্দের অনেকগুলো প্রতিশব্দ আছে, যেমন- আপা, আপু, এদেসাপা।

কোনো কোনো সন্তানের কাছে বাবা পথপ্রদর্শক। অনেকেই বাবাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। অনেক দেশে কার্ডও উপহার দেওয়া হয়। যাদের বাবা বেঁচে নেই, তারা হয়তো আকাশে তাকিয়ে অলক্ষ্যে বাবার স্মৃতি হাতড়ায়। ‘বাবা’ ছোট্ট একটি শব্দ, অথচ এর ব্যাপকতা বিশাল। কারো মনে এ প্রশ্নও জাগে, বাবা কি শুধুই একটি বিশেষ দিনের জন্য! বলবো, অবশ্যই না। তবে একটি দিন বাবাকে বিশেষভাবে উইশ করলে, বাবার জন্য প্রার্থনা করলে- দোষেরই বা কি আছে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied