অনুষন্ধানে জানাযায়, গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর সেতুটি উদ্বোধনের পর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে লালমনিরহাট সড়ক জনপদ বিভাগ ও স্থানীয় একটি চক্র। বেসরকারী ক্ষাতে সেতুটির ইজারা প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় প্রায় ৬ মাস থেকে লালমনিরহাট সড়ক বিভাগ নিজস্ব জনবল দিয়ে টোল আদায়ের কাজ করে আসছে।
সরেজমিন অনুষন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, সেতুটি লালমনিরহাট সড়ক বিভাগের কয়েকজন স্টাফ সেতুটির দক্ষিন পার্শ্বে টোল প্লাজায় টোল আদায় করছেন। তবে তারা যাত্রীবাহি বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ প্রভৃতি যানবাহনের টোল আদায় করলেও মোটার সাইকেল, ইজিবাইক, ভটভটি, ট্রাক্টর এসব থেকে টোল আদায় করছেন না।মোটর সাইকেল, ইজিবাইক, ভটভটি, ট্রাক্টর এসব থেকে টোল আদায় করছেন বহিরাগত কিছু যুবক। আর এই বহিরাগত যুবকরাই নাকি যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুর কাদেরের ভাগ্নে হয়! টোল আদায়ে দায়িত্বরত সরকারী কর্মচারীরা অনেক গাড়ী থেকে রশীদ ছাড়াই টোল আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছেন। আবার কাউকে রশীদও দিচ্ছেন।
গত বৃহস্পতিবার ২২ মার্চ টোল প্লাজায় প্রায় ২ ঘন্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, ‘২০০ শতটি যানবাহনের মধ্যে ১১০ টি যানবাহনকে রশীদ দেয়া হয়েছে আর বাকি ৯০ যানবাহনে রশীদ দেয়া হয়নি।’ টোলপ্লাজা সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়,‘ প্রতিদিনের আদায়কৃত টোলের মাত্র অর্ধেক জমা হয় সরকারের কোষাগারে। আর বাকি অর্ধেক জমা হয় সিন্ডিকেটের পকেটে। সেখান থেকেই প্রতিদিন ভাগবাটোয়ারা হয়ে থাকে।’ সরেজমিন অনুষন্ধানে আরো দেখা যায়,‘ মোটর সাইকেল, ভটভাটি, ইজিবাইক প্রভৃতি ছোট যানবাহন গুলো থেকে টোল আদায় করছে বহিরাগত কিছু যুবক।’
টোল আদায় কাজে জড়িত সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,‘ শুধু মাত্র মোটর সাইকেল, ইজিবাইক, ভটভটি থেকেই প্রতিদিন টোল আদায় হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর এই পুরো টাকাটাই চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পকেটে।
এ বিষয়ে টোল আদায়কারী লালমনিরহাট সওজের নাইটর্গাড জয়নাল এর সাথে কথা হলে তিনি জানান,‘ উপরের নির্দেশে তারা মোটর সাইকেল, ভটভটি ও ইজিবাইকের টোল আদায় করেন না। স্থানীয় কতিপয় যুবক এসব তুলে থাকেন।’ স্থানীয় এই যুবকরা কারা এমন প্রশ্ন করলে টোল আদায়কারী অপর এক ব্যাক্তি হাবিব নামে নিজেকে রংপুর সহজের কার্যসহকারী পরিচয় দিয়ে জানান,‘ মোটর বাইকের টোল আদায়কারীরা যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুর কাদেরের ভাগ্নে হয়।’
সরেজমিন অনুষন্ধান চালাকালীন টোল আদায়কারীদের মোবাইল ফোনে এ সময় একটি পালসার মোটর সাইকেলে ছুটে আসেন দুজন অজ্ঞাত যুবক। তারা এসেই জানতে চান,‘ কার পারমিশনে টোল প্লাজায় সাংবাদিকরা ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করছে।’ এসময় তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের পরিচয় না দিয়েই এই প্রতিবেদককে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়ে নিউজ প্রকাশ না করার হুমকি প্রদান করে।’
খোজঁ নিয়ে জানাযায়, সেতুটি পারাপারের জন্য বাস ট্রাকের জন্য ১২০ টাকা মিনিবাস-৬৫ টাকা, মাইক্রো ও পিকআপের জন্য ৫০ টাকা এবং ইজিবাইক,থ্রি-হুইলার, মোটর সাইকেলের জন্য ১০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরী শ্রমিক এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম জানান,“ লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০০ বাস ও ট্রাক পারাপার হয়।” যার টোল আদায়ের পরিমান ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অপরদিকে অন্যান্য যানবাহনতো আছেই। টোল আদায় কাজে সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, ‘শুধু মাত্র মোটর সাইকেল, ইজিবাইক আর থ্রি-হুইলার থেকেই প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা টোল আদায় করা হয় যার পুরোটাই আত্নসাৎ হয়ে থাকে।’ কেননা কোন প্রকার রশীদ প্রদান ছাড়াই এসব ছোট যানবাহন থেকে টোল আদায়ের কাজটি করছেন বহিরাগতরা।
এ বিষয়ে, লালমনিরহাট সওজের এসও আনোয়ার হোসেন জানান, ‘তারা প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ট্রেজারীর মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে জমা করা হচ্ছে।’ তবে গাড়ী পারাপারের সংখ্যা হিসেবে টাকার এই অংক আদায়ের অর্ধেক। কেননা মোটর বাইক, ইজিবাইক, ভটভটির কোন টাকা জমা হয়না। সেই সাথে রশীদ ছাড়া পারাপারকারী গাড়ীরও টাকা জমা হয়না। আর সেই মোতাবেক প্রতিদিন কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়,‘ গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর সেতুটি উদ্বোধনের পর থেকে টোল আদায়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে লালমনিরহাট সড়ক বিভাগ। সেতুর দুই পার্শ্বে টোল আদায়ের কথা থাকলেও শুধু মাত্র দক্ষির পার্শে আদায় করা হচ্ছে দুই পার্শের টোল। আর টোল আদায়ের কাজে লালমনিরহাট সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সুরুজ মিয়া ও এসডি খাইরুজ্জামানের পছন্দের কর্মচারীদের নিযুক্ত করা হয় গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে।
সুত্র আরো জানায়,‘ টোল আদায়ের এই অনিয়ম ও দূর্নীতি চালিয়ে যেতে স্থানীয় কিছু পাতি নেতা ও সহজের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সম্মনয়ে গঠিত হয়েছে একটি সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই আত্নসাৎ করা টোলের টাকা প্রতিদিন রাতে ভাগ হয় টোল প্লাজার ঘরেই।
এবিষয়ে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুরুজ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,‘ কোন প্রকার অনিয়মের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা নেই। অনিয়ম হলে টোল আদায়ের সাথে জড়িতরাই করছে। আর অনিয়মের বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান।