আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

ভারতের রেড কার্পেটে পা রাখবেন বাংলাদেশি হিন্দুরা?

মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫, রাত ০৯:৫০

উত্তরটা একইসঙ্গে হ্যাঁ এবং না। এটা ঠিক, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভারতে চলে এসেছেন, ভারত তাদের পাকাপাকিভাবে সে দেশে থাকতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কিন্তু ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এও জানিয়েছে, এই হিন্দু-শিখ বা বৌদ্ধদের দীর্ঘমেয়াদী ভিসা দেওয়া হবে মানবিক কারণে। তবে শর্ত একটাই, ২০১৪-এর ৩১ ডিসেম্বর বা তার আগে যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন তারাই কেবল এ সুযোগ পাবেন। ফলে সোজা কথায়, এখন যদি কোনও হিন্দু বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তার কপালে এই সুবিধা জুটতে নাও পারে।

সবচেয়ে বড় কথা, যে বেশ কয়েক লাখ হিন্দু এর আওতায় পড়ছেন, শরণার্থীদের প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধাই তাদের মিলবে, তবে নাগরিকত্বের ব্যাপারে ভারত তাদের এখনই কোনও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না। ফলে ভারতে থাকতে পারলেও তাদের কতদিন সে দেশে কার্যত শরণার্থী হিসেবে থেকে যেতে হতে পারে তারও কিন্তু কোনও নিশ্চয়তা নেই। হয়তো এমনও হতে পারে, তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কখনও পূর্ণ ভারতীয় নাগরিক হতেই পারলেন না!

ভারত সরকারের বক্তব্য, ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে বা নির্যাতনের ভয়ে বেশ কয়েক লক্ষ সংখ্যালঘু মানুষ প্রতিবেশী বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এই হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-জৈনরা কেউ কেউ ভিসা নিয়ে ভারতে ঢুকলেও ভিসা শেষ হওয়ার পরও আর দেশে ফেরেননি, অনেকেই আবার কোনও কাগজপত্র ছাড়া হয়তো স্রেফ দালালকে ধরে সীমান্ত পেরিয়েছেন।

এখন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত, গত বছর পর্যন্ত যারা এভাবে ভারতে এসেছেন তাদের দীর্ঘমেয়াদী ভিসা দিয়ে ভারতেই থাকার সুযোগ করে দেওয়া হবে। আসলে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এর মাধ্যমে তাদের পুরনো একটি প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করল।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনি প্রচারে বারবার বলেছিলেন সারা দুনিয়ার হিন্দুদের নির্যাতিত হলে যাওয়ার জায়গা একটাই– ভারত। বিজেপি নেতাদের কথায়, ‘ভারত সব ধর্মেরই। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভারত সারা বিশ্বের হিন্দুদের প্রতিই তাদের দায়িত্ব পালন করল।’ প্রকারান্তরে বিজেপি নেতৃত্ব এটাও বলতে চাইছেন যে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মুসলিমদের এর আওতায় রাখা হয়নি। কারণ প্রয়োজন হলে তাদের যাওয়ার জন্য আরও নানা দেশ আছে!

সরকার আসলে এই নির্বাহী আদেশটি জারি করেছে ১৯২০ সালের পাসপোর্ট আইন ও ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্টের আওতা থেকে ওই সংখ্যালঘুদের বাইরে রেখে। যদিও তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি। বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য বহুদিন ধরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা লড়ছে স্বজন নামে একটি এনজিও। তাদের পক্ষে আইনজীবী শুভদীপ রায় অবশ্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশি হিন্দুদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দিতে গেলে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু পার্লামেন্টে যে অবস্থা তাতে সেটা কবে সম্ভব হবে কে জানে। বর্ষাকালীন অধিবেশনে তো সংসদের ৯০ শতাংশরও বেশি সময় স্রেফ নষ্ট হয়েছে, রাজ্যসভাতেও সরকারের গরিষ্ঠতা নেই – ফলে এক্ষুণি আমরা নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়ে খুব আশাবাদী হতে পারছি না!’

তিনি সে সঙ্গেই যোগ করেছেন, ‘এই সিদ্ধান্তে আমাদের দাবি পুরোপুরি মিটছে না ঠিকই। তবে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচয় অন্তত মিলছে। আপাতত নির্বাহী আদেশে যেটুকু করা যায় সরকার সেটাই করেছে।’

ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে আসামে। যেখানে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ একটি প্রধান ইস্যু এবং যে রাজ্যে ভোট আর কয়েক মাসের মধ্যেই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইতিমধ্যেই সেখানে বিদেশি নাগরিকদের চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে ও অনেককেই বিদেশি বলে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক রাখা হয়েছে।

ঘটনা হল, আসামে বিরোধিতাটা মূলত বাংলাদেশের মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে। যদিও ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকদের মধ্যে অনেক হিন্দুও আছেন। আসামে শিলচরের এমপি ও কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব মনে করছেন এই সরকারি নির্দেশনামা সেই সঙ্কটের কোনও সুরাহা করতে পারবে না।

তিনি এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘দিন দশেক আগেই আমি শিলচরের বহু ক্যাম্পে গিয়ে দেখেছি বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুরাও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে আটক আছেন এবং তারা দেশে ফিরতে চান। কিন্তু তাদের আমি বোঝাতে পারিনি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে একটি অর্থপূর্ণ ডিপোর্টেশন চুক্তি না-থাকলে তাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। ফলে তারা কেউ ছমাস, কেউ দুছর ধরে ক্যাম্পেই আটকে আছেন।’

আসামের বরাক উপত্যকার কংগ্রেসি দিকপাল সন্তোষমোহন দেবের কন্যা সুস্মিতা দেব তাই মনে করছেন এই অসহায় মানুষগুলো শিবির থেকে মুক্তি পাবেন কি না তার কোনও জবাব কিন্তু নির্বাহী আদেশে নেই। তিনি আরও বলছেন এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি হিন্দুরা কেউ সান্ত্বনা পেলে তার বলার কিছু নেই, তবে এটা কোনও সর্বাত্মক সমাধান নয় – বরং আসামের নির্বাচনের আগে ঝুলিয়ে দেওয়া একটা ‘ললিপপ’ মাত্র!

এই সিদ্ধান্ত বিজেপিকে আসামে কোনও নির্বাচনি ফায়দা দিক বা না-দিক, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের যে হিন্দু বা শিখরা দিনের পর দিন ভারতে অবৈধভাবে বাস করছিলেন তারা যে সাময়িক স্বস্তি পাবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে সরকার একটা কাট-অফ তারিখ বেঁধে দিলেও এর পর নতুন করে বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে ভারতে সংখ্যালঘুদের আসার ঢল নামতে পারে, এমন একটা সম্ভাবনাও কিন্তু দিল্লি নাকচ করছে না।

কিন্তু ওই যে প্রথমেই বলছিলাম, এই সিদ্ধান্তের ভরসায় বাংলাদেশের কোনও হিন্দু যদি এরপর পাততাড়ি গুটিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে কিন্তু তাকে সে কাজ করতে হবে অনেক ভেবেচিন্তে!

বাংলা ট্রিবিউন

মন্তব্য করুন


 

Link copied