আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখতে বসেছে

কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখতে বসেছে

 width=
 
শিরোনাম: রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর       কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি      

 width=
 

ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না

মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫, সকাল ০৯:৫০

প্রভাষ আমিন॥

শিক্ষায় ভ্যাট আরোপ নিয়ে সরকারি দলের মধ্যেই ভিন্নমত ছিল। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ৬০ কোটি টাকার জন্য ৬ হাজার কোটি টাকার ঝামেলা পোহাতে হবে কেন? হানিফ যেটা বুঝেছেন, সেটা অর্থমন্ত্রীর বুঝতে এত দেরি হলো কেন, প্রশ্ন সেটাই। এটা ঠিক, সরকার চালানোর ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে ট্যাক্স-ভ্যাটের ওপরেই নির্ভর করতে হয়। সরকার নানা উৎস থেকেই ট্যাক্স-ভ্যাট আদায়ের চেষ্টা করবে। কিন্তু কোন খাতে ট্যাক্স বা ভ্যাট আরোপ করলে কত টাকা আয় হবে, আর তাতে কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সেটাও বিবেচনা করা উচিত। আর সব সিদ্ধান্ত অর্থমন্ত্রী একাও নেন না। কিন্তু নিজের কথা দিয়ে অর্থমন্ত্রী দ্রুতই পানি ঘোলা করে ফেলেন। আলাদা বেতন স্কেলের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন বিবেচনায় নিয়ে সরকার মন্ত্রিসভা কমিটিতে বিষয়টি আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বলে দিলেন, শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে, তারা না বুঝেই আন্দোলন করছে। শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীকে দুঃখপ্রকাশ করে বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও অর্থমন্ত্রীর কাছে ‘অযৌক্তিক’ মনে হয়েছে। কিন্তু দু'দিনের মাথায় সেই ‘অযৌক্তিক’ দাবিও তাকে মেনে নিতে হলো। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তার টাকা দরকার, তাই তিনি নানা জায়গায় খোঁচা দেন। কিন্তু মাঝে মাঝে খোঁচাটা ভুল জায়গায় পড়ে যায়। ভিমরুলের চাকে ঢিল ছোঁড়ার পরিণাম এখন পোহাচ্ছে জাতি। কথা বলে, দুঃখপ্রকাশ করে তা ফিরিয়ে নেয়ার স্বভাব পুরোনো আমাদের অর্থমন্ত্রীর। শেষ পর্যন্ত ভ্যাটও প্রত্যাহার করতে হলো, মাঝখানে অর্থমন্ত্রীর গোয়ার্তুমির কারণে জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হলো। অর্থমন্ত্রীর জন্য সেই পুরোনো কথাটিই বলতে হচ্ছে ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ব্যাখ্যা দিয়েছিল, ভ্যাট শিক্ষার্থীদের নয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। একই কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী নিজেও। কিন্তু এই ধারণাটাই যে অবাস্তব, সেটাও ধরিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নিজেই। তিনি বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যাতে অন্য কোনও নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করতে না পারে, সে ব্যাপারে যাতে শিক্ষার্থীরা সজাগ থাকে। তার মানে মন্ত্রীও জানতেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কৌশলে ছাত্রদের কাছ থেকেই এটা আদায় করে নেবে।

অর্থমন্ত্রী আরেকটা ভুল ধারণা নিয়ে বসেছিলেন। তার ধারণা ছিল, শুধু উচ্চবিত্তের সন্তানরাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তার দাবি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টাকা খরচ করে। সেখান থেকে তিনি মাত্র ৭৫ টাকা চেয়েছেন। দুটিই ভুল ধারণা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানও এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আবার অনেক অভিভাবক ছাত্র রাজনীতির বিষ থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। বাবার পেনশনের টাকা, মায়ের গয়না বেচার টাকা, জমি বেচার টাকা, টিউশনির টাকা, এমনকি পার্টটাইম চাকরি করেও অনেকে টিউশন ফি জোগাড় করেন। তাই শুধু বড়লোকের সন্তানরাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এ ধারণা ঠিক নয়। আর দিনে এক হাজার, মানে ৩০ হাজার টাকা টিউশন ফিও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। তবে এই আন্দোলনে একটা বিষয় সামনে এসেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কি সত্যি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান নাকি নিছক ব্যবসা? আমার বিবেচনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন নিছকই একটি ব্যবসা। তাই সরকারের উচিত তাদের ওপর আরও নজরদারি বাড়ানো। সর্বোচ্চ কত টাকা টিউশন ফি নিতে পারবে, তারও একটা লিমিট ঠিক করে দেওয়া উচিত। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেন এখন এক স্বেচ্ছাচারিতার ভূমি হয়ে গেছে। তারা ইচ্ছামত টিউশন ফি নির্ধারণ করে, একেক বিশ্ববিদ্যালয় একেক রকম ফি নেয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। সরকারের উচিত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এবং দাম ঠিক করে দেওয়া। শিক্ষাকে পণ্য কিন্তু সরকার বানায়নি, তার আগেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বানিয়েছে। টাকা না দিলে পরীক্ষা দিতে না দেয়ার উদাহরণও কম নেই। শিক্ষার ওপর ভ্যাট আরোপ করা ঠিক নয়, এই যুক্তিতে যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়; তাহলে একই যুক্তিতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে না কেন?

শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলন আরেকটা ব্যাপার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, না কাঁদলে মাও দুধ দেয় না। যৌক্তিক হোক আর অযৌক্তিক, ঠিকমত চাপ দিতে পারলে দাবি আদায় করা সম্ভব। কিন্তু এটা হওয়া উচিত নয়, যদি ন্যায্য দাবি হয়, তবে এমনিতেই তা বিবেচনা করা উচিত। আমাদের গণমাধ্যমের দায়ও কম নয়। বাজেট পাশের পর থেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টুকটাক ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা বলে আসছিল। আমরা অত পাত্তা দেইনি। কিন্তু যেই তারা রাস্তাঘাট আটকে ঢাকা অচল করে দিল, অমনি আমরা এর যৌক্তিকতা বুঝতে পারলাম, আর সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। এটা কোনও দেশের বা সরকারের সুশাসনের লক্ষণ নয়। একটি জনবান্ধব সরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই এর ভালো-মন্দ বিবেচনা করবে, সবার সঙ্গে কথা বলবে; পরে নয়। গণমাধ্যমও ন্যায্যতা বিবেচনা করে সরকারের ভুলটা ধরিয়ে দেবে।

লেখক:  অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।

ইমেইল: probhash2000@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied