আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

ড. ইউনূস বিতর্ক

বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫, সকাল ০৭:০৩

 বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী।।

রাজনীতি এমনিতে নির্মম কঠোর। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে যুগ কাউকে ক্ষমা করে না। রাজনীতির ময়দানে এটা অমোঘ সত্য। এই সত্যটাকে উপেক্ষা করে চলতে চলতে বিএনপির পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকেছে। তবুও তাদের শিক্ষা হচ্ছে না। কয়দিন আগে আমেরিকার এক গোয়েন্দার এবং বিএনপির এক নেতার ছেলের মার্কিন আদালতে শাস্তি হয়েছে। কারণ তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং তার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল।

লন্ডনে বসে তারেক জিয়া একের পর এক অপকর্ম করার চেষ্টা করছেন। সর্ব বিষয়ে মরহুম পিতার স্বার্থক উত্তরসূরী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছেন তিনি। ঢাকায় জাপানের বিমান হাইজ্যাকের ঘটনার কালে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে তার বিরোধী পক্ষের মূল উৎপাটন করে ফেলেছিলেন। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের জনসভায় অসংখ্য গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল। এই পরিকল্পনায় হাওয়া ভবনের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল। জিয়াউর রহমান বলতেন, ‘আই উইল মেক দি পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর পলিটিশিয়ানস’। সত্যি তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিকে কণ্টকাকীর্ণ করে তুলেছিলেন রাজনীতিবিদদের জন্য। তারেক জিয়াও তার পিতার আদর্শের অনুসারী হয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে সাধারণ মানুষের জন্য ক্লান্তিকর করে তুলেছেন।

গত শতাব্দির ৫ দশকে ভারত থেকে বাংলাদেশে এক সার্কাস এসেছিল। এই সার্কাসের নামছিল আইন্দী সরাবাই সার্কাস। বাঘ আর ছাগল নিয়ে একটা খেলা ছিল। আনন্দী সরাবাই নিজেই সেটা পরিচালনা করতেন। এক গামলা পানি রেখে বাঘ-ছাগল দুটোকে পানি খেতে বাধ্য করতেন তিনি। বাংলাদেশের বহু জায়গায় আনন্দী এই খেলা দেখিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন কিন্তু চাঁদপুরে এই খেলা দেখানোর সময় বাঘ আনন্দীকে মেরে ফেলেছিল।

জিয়াইর রহমান আনন্দীর মতো সাহসী ছিলেন। বহু খেলার অবতারণা করেছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে। শেষ খেলায় আনন্দীর মতো জীবন হারিয়েছিলেন। জিয়ার মতো তারেকও ঝুঁকিপূর্ণ খেলায় মাঝে মাঝে মেতে উঠেন। এই পর্যন্ত পরিণতি কী হয় কে জানে! বিদ্বেষের ফল বিদ্বেষেই পরিসমাপ্তি ঘটে।

এখন তারেক বিএনপিকে দিয়ে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও বাংলাদেশ বিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করান। অপরাজনীতি করেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শেখ হাসিনার যোগদানকালে বিএনপিকে দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন তারই একটি নমুনা। সে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখলাম। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে তিনি বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিয়েছেন। কিন্তু জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সময় বাইরে বিএনপির বিক্ষোভে নোবেলজয়ী ইউনূসের যোগ দেওয়ার যে খবর এসেছে, তাকে পরদিন ভুয়া বলে দাবি করেছে ইউনূস সেন্টার। ইউনূস সেন্টারের বিবৃতিতে বলা হয়, “অধ্যাপক ইউনূস একটি সভা থেকে আরেকটি সভায় যেতে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের পাশের রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন। তখন তিনি একটি জটলা অতিক্রম করেন, যেখানে একদল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছিল। তিনি না থেমেই তার গন্তব্যে চলে যান, যেখানে তার বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় ছিল শ্রোতারা।”

ইউনূস সেন্টারের ওই বক্তব্য পুরোপুরি সত্য মেনে নেওয়া কঠিন। কারণ উনি সেখানে দাঁড়িয়েছেন তা প্রমাণিত। সংবাদপত্রের খবরে যে ছবি এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, তিনি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দাঁড়ানো এবং হাসছেন। পেছনে বিক্ষোভের প্ল্যাকার্ড। ইউনূস ভালো করেই জানেন বিক্ষোভকারীরা কারা। এতো রাস্তা থাকতে বিক্ষোভকারীদের জন্য খোঁয়াড়ের মতো ফিতাটানানো নির্ধারিত স্থানের সামনে দিয়ে তাকে তার বক্তৃতাস্থলে যেতে হবে কেন? তিনি যদি সেটা সমর্থন না করেন, দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে ছবি তুলবেন কেন! উনার বডি ল্যাংগুয়েজ বলে দিচ্ছে উনি স্ব-ইচ্ছায় বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন।

ড. ইউনুস ১/১১ এর আগে বিএনপি-জামাত সমর্থিত ইয়াজউদ্দিনের কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করেছেন, সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আবার ১/১১ সময় সেনা সমর্থনে রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করেছেন। বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ভণ্ডুল করার সব চেষ্টায় তিনি পর্দার আড়ালে সক্রিয় ছিলেন। তখন বিএনপি-জামাতের বুদ্ধিজীবীদের ডেরা হয়ে উঠেছিল ইউনূস সেন্টার। আওয়ামী লীগ যখন তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় বিএনপি ইউনূসের পক্ষে দাঁড়িয়ে বলছে, আওয়ামী লীগ মানী লোকের অসম্মান করছে। বিএনপি তাকে ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রপতি বানাবে এই প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। সে প্রতিশ্রুতির কারণে নাকি সরকারের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে টানাপোড়েনের সৃষ্ট জ্বালা মেটাতে ইউনূস হঠা‍ৎ করে বিএনপির বিক্ষোভে যোগ দিলেন তা একমাত্র ইউনূসই ভাল বলতে পারবেন। অবশ্য যে কারণেই তিনি বিক্ষোভে যোগদান করেন না কেন- বিভিন্ন রাষ্ট্র তাতে নজর দেবে কারণ ড. ইউনূস তাতে যোগদান করেছেন।

ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক গঠন করার পর আর্থিক অনটনে পড়েছিলেন। আর ব্যাংকের অগ্রগতি প্রায় রুদ্ধ পড়েছিল। শেখ হাসিনা ’৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসলে ড. ইউনূস তার সঙ্গে দেখা করে ব্যাংকের ব্যাপারে সাহায্য কামনা করেছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রী তখন তার ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে বলে চারশ’ কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। মৃতপ্রায় ব্যাংকটির প্রসার হওয়ার ব্যাপারে শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক আইন অনুসারে ব্যাংকের কাজে সরকার কোনও অনিয়ম দেখলে এমডি পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। অন্যান্য ব্যাংকের নিয়ম অনুসরণ করে এর এমডি'র অবসরে যাওয়ার কথা অন্য এমডিদের মতো। কিন্তু ড. ইউনূস চিরস্থায়ীভাবে থাকতে চান বা তার ইচ্ছানুসারে অবসরে যেতে যান বলেই সরকারের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়। এরপর সরকার তাকে এমডির পদ থেকে সরিয়ে দিলে তিনি হাইকোর্টে যান। উচ্চ আদালত সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হলে ড. ইউনূস সামান্য একটি পদের জন্য আকাশ-পাতাল ভ্রমণ করেছেন। আমেরিকাকে দিয়ে সরকারকে চাপের ব্যবস্থা করেন। পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ বন্ধ করাসহ বিদেশে সরকারবিরোধী নানা প্রচারণায় তার নাম উঠে আসতে থাকে তখন থেকেই।

ড. ইউনূস ব্যবসায়ী। তার জীবনের শুরুতে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান প্যাকেজেস লিমিটেড (পারিবারিক ব্যবসা) নামে একটি ইন্ডাস্ট্রি করে তার ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ব্যবসা বলেন, ঋণ প্রদান বলেন- কোথাও উদারতার স্বাক্ষর রাখেননি। তার ব্যবসার আকাঙ্ক্ষার কাছে তার দেশপ্রেমও পরাজিত হয়েছে এবং ধীরে ধীরে বিশ্বে তিনি এখন সেরা ব্যবসায়ী সংগঠক হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছেন। অবশেষে বিএনপি’র বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে তিনি তার প্রতিহিংসাপরায়নতাও প্রকাশ করলেন।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

bakhtiaruddinchowdhury@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied