আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ● ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি       রংপুর বিভাগে আসছেন ভূমিমন্ত্রী       রংপুর জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নব নির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত       রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজ আদায়       যুদ্ধ নয়, আলোচনায় সমাধান সম্ভব : প্রধানমন্ত্রী      

 width=
 

বন্ধুরা এটা সন্ত্রাসবাদ নয়, কিন্তু ক্রিকেট…

শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৫, দুপুর ১২:৪৭

নাদীম কাদির॥

বাংলাদেশে দুই বিদেশি হত্যার পর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এটা পর্যবেক্ষণ করেছি- যদি তাদের হাতে অন্য কোনও গল্প না থাকে তবে জাতীয় পর্যায়ের কোনও কোনও গণমাধ্যম শঠতার আশ্রয় নেয়।

কয়েক দশকের একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি এসব হত্যাকাণ্ডের কাভারেজে ব্যবহৃত কিছু শব্দ কিভাবে অন্য গণমাধ্যমের তুলনায় আরও বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

লন্ডনে আসার পর থেকে আমি অবশ্যই মূলধারার ইংরেজি পত্রিকার চেয়ে শক্তিশালী বাংলা গণমাধ্যমগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছি।

বাংলাদেশের মূলধারার একটি ইংরেজি গণমাধ্যমের সঙ্গে বৈঠকের সময় আমি দেখতে পেয়েছি তাদের অধিকাংশই ক্রিকেটের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের খবরের ক্ষেত্রেই যা প্রযোজ্য।

২০ জনের মধ্যে প্রভাবশালী দৈনিকটির মাত্র একজন সাংবাদিক আমার কাছে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তার পরবর্তী বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড এবং সিডনি ও ইস্তানবুলের ঘটনাবলী সম্পর্কে আমি তাকে অবহিত করলাম। স্রষ্টাকে ধন্যবাদ আমরা তাদের চেয়ে ভালো আছি।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের আমলে দেশের চরমপন্থার উত্থানের পটভূমি আমি তার কাছে তুলে ধরলাম।

ওই আমলে ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগও রয়েছে। এরপর বাংলাদেশের বিষয়ে তার আর কোনও প্রশ্ন ছিল না।

তাকে বললাম, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিভাবে বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর শেকড় উপড়ে ফেলেছেন। সবখানেই সন্ত্রাসী গ্রুপ, অন্ততপক্ষে জিহাদিদের অস্তিত্ব রয়েছে এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে কেন নয়?

ক্রিকেট সম্পর্কে কথা বলাই ছিল অধিক উপভোগ্য। কারণ ব্রিটিশ সরকার তার ওয়েবসাইটে যে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উল্লেখ করেছে সেদিকে কারও ভ্রুক্ষেপ ছিল না।

আমাদের মিডিয়ারও এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত যে, আমরা কী রিপোর্ট করছি এবং কীভাবে করছি। অন্যদের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্সের ফলে এটা আরও খারাপের দিকে যাবে না, বরং ২০০১-২০০৬ সময়কালের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

যাই হোক, ঢাকার বিভিন্ন মিডিয়া হাউস থেকে কিছু টেলিফোন কলে আমাকে জানানো হয়, ব্রিটিশ ওয়েবসাইটে যা বোঝানো হয়েছে এ বিষয়ে আমরা তার চেয়েও বেশি উদ্বিগ্ন। পশ্চিমা দেশগুলো নিজস্ব গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে পর্যায়ক্রমে তাদের ওয়েবসাইট হালনাগাদ করে। কিন্তু আমরা কি অন্যান্য দেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশে বসবাসরত নিজ নাগরিকদের এই সতর্কতা এবং ভীতির বিষয়ে ফোকাস করতে দেখেছি?

এদিকে, আমাদের গণমাধ্যমগুলোর শীর্ষ ব্যক্তিরা ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনের দেওয়া বিবৃতিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশে ব্রিটিশ পর্যটকদের প্রতি দেওয়া ওই পরামর্শ ছিল একটা রুটিন আপডেট এবং এতে বাংলাদেশে ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার’ কথা বলা হয়নি। যদিও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনও সতর্কতা ছিল না।”

দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সরকার এটা পরিষ্কার করেছে যে, বিষয়টির তদন্ত চলছে। কিন্তু আমরা কেন এই সতর্কতাকে পুঁজি করে টার্গেট গ্রুপকে এড়িয়ে একটা ধুয়ো তুলতে যাবো? তারা এটা অনুভব করে যে, পুরো দুনিয়াটাই সন্ত্রাসী হুমকিতে রয়েছে। এর জন্য পালিয়ে যাওয়া অথবা অন্য কোনও দেশে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। শুধু সতর্ক থাকুন। এই পশ্চিমারা এখনও আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে কাজ করে যাচ্ছে। সেখানকার গণমাধ্যম ক্রমাগত একটি ভিন্ন রাষ্ট্র তার নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে কী বলছে সেদিকে ফোকাস করে না।

বাংলাদেশের সাংবাদিক বন্ধুদের উচিত তাদের কোন প্রতিবেদন প্রকাশ করা উচিত বা উচিত নয় সে বিষয়ে পুনরায় চিন্তা করা। বরং এমনটা হতে পারে যে, ক্রিকেটের পর বিভিন্ন দেশ যারা ভয় বা আতঙ্ক সৃষ্টি করে সেসব দেশের টেরর অ্যালার্টের বিষয়ে প্রতি মিনিটে আপডেট দেওয়া।

আমাদের মিডিয়ারও এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত যে, আমরা কী রিপোর্ট করছি এবং কীভাবে করছি। অন্যদের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্সের ফলে এটা আরও খারাপের দিকে যাবে না, বরং ২০০১-২০০৬ সময়কালের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বহুল আলোচিত বাংলা ভাইয়ের উত্থান সম্পর্কে নিশ্চয়ই মনে আছে। তখন সরকার তাদের অস্তিত্বই অস্বীকার করেছিল এবং পরে অভিযুক্তদের তড়িঘড়ি করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

এখানে আমাদের ক্রিকেটারদের জন্য একটি সতর্কতার নোট আছে। আমার জুনিয়র বন্ধুদের ক্রিকেট নিয়ে স্তূতিবাক্য থাকতে পারে। ভিন্ন স্ক্যান্ডালের কারণে রুবেল এবং শাহাদাতের সমালোচনা আলাদা বিষয়। মনে রাখবেন, ক্রিকেট একটা প্রধান দূত এবং আমাদের ক্রিকেটারদের সতর্ক হওয়া উচিত। বাংলাদেশের সাংবাদিক বন্ধুদের উচিত তাদের কোন প্রতিবেদন প্রকাশ করা উচিত বা উচিত নয় সে বিষয়ে পুনরায় চিন্তা করা। বরং এমনটা হতে পারে যে, ক্রিকেটের পর বিভিন্ন দেশ যারা ভয় বা আতঙ্ক সৃষ্টি করে সেসব দেশের টেরর অ্যালার্টের বিষয়ে প্রতি মিনিটে আপডেট দেওয়া।

ব্রিটেনে মূলধারার ইংরেজি পত্রিকা বা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে আমি এ ধরনের টেরর অ্যালার্টের খবর দেখতে পাইনি।

এটা সেল্ফ সেন্সরশিপ নয়, বরং দায়িত্বশীলতার বিষয়। আমরা দেখেছি কিভাবে সিএনএনের একজন রিপোর্টার সম্প্রতি সরকারের হয়ে তাদের প্রচারিত রিপোর্টের বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। রাজনীতি কিংবা চিন্তাভাবনা না করেই জোরালোভাবে প্রচারের চেয়ে বরং দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই এটা করা হয়েছে।

একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি মনে করি পশ্চিমা গণমাধ্যম থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। কিন্তু আমাদের এটাও শেখা প্রয়োজন যে, কিভাবে তারা সংকটময় মুহূর্তে নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষা করে।

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার।

মন্তব্য করুন


 

Link copied