আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে ছেলের বাঁধা ॥ পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফন সম্পন্ন       নীলফামারীতে স্বামীর প্রথম বিয়ের খবরে নববধূ দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ স্বামী গ্রেপ্তার       রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা      

 width=
 

মঙ্গা এলাকার মানুষের আয় বেড়েছে?

বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৫, সকাল ০৭:৩৪

এ কে এম মাঈদুল ইসলাম :

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) এক সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশ, উত্তরবঙ্গের ৭৪ শতাংশ পরিবারই এখন তিন বেলা খেতে পারছে। অর্থাৎ মানুষ আর অনাহারে থাকছে না, মঙ্গা দূরীভূত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে মাত্র পাঁচ বছরে এতগুলো লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা কী করে হয়ে গেল?

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২০০৮ সালে এসব এলাকার একটি পরিবারের বার্ষিক গড় আয় ছিল ৩৫ হাজার ৪০০ টাকা। তবে ২০১৩ সালে সেটি বেড়ে ৭৮ হাজার ১০০ টাকায় দাঁড়ায়। অর্থাৎ পাঁচ বছরে আয় বেড়েছে ১২০ শতাংশ। একই সঙ্গে মঙ্গাপীড়িত জেলার পরিবারগুলোর বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের পরিমাণও বেড়েছে।’ এই বিনিয়োগের উৎস শুধুই ঋণ, না বাড়তি আয়, তা পরিষ্কার করে বলা হয়নি। বলা হয়েছে, মঙ্গা নিরসনে পিকেএসএফের ‘প্রাইম’-এর অবদান রয়েছে ১৩ শতাংশ। বাকি অবদানের কৃতিত্ব আর কোন কোন সংস্থার, তা উল্লেখ করা হয়নি।

কিন্তু এটাও সত্য যে দুর্ভিক্ষ বলি বা নরমভাবে মঙ্গা বলি, সেটা এখনো এই এলাকায় রয়ে গেছে। এর ভীতি এখনো মানুষকে তাড়া করে ফিরছে। তাই মঙ্গাপীড়িত জেলাগুলোর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এ অঞ্চলের বাইরে গিয়ে পোশাকশিল্প, ইটের ভাটা, মানুষের বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ইত্যাদিতে কাজ করছেন। বিপুলসংখ্যক নারী দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন শুধু মঙ্গা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।

সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে কোনো কাজ না পেয়ে দরিদ্র লোকজন বেঁচে থাকার আশায় বিভিন্ন শহরে চলে যাচ্ছেন। এই পাঁচ লাখ মানুষ বর্তমানে বিভিন্ন শহরের যে বস্তিতে রয়েছেন, সেখান থেকে তাঁদের সুখের সংসারের ঠিকানা হয়তো কোনো দিনই তাঁরা পাবেন না। তাঁদের নিজেদের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে হলে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে (২০ মে ২০১৫)।

আসলে বাইরে দেখে অনেক কিছুই খুব উজ্জ্বল মনে হয়, কিন্তু ভেতরে তা না-ও হতে পারে। সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের একেকজন মানুষ বছরে প্রায় ১২ কেজি মাছ খায়। তার মধ্যে চট্টগ্রামের অধিবাসীদের মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ বছরে ১৭ কেজি। আর ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলাবিধৌত কুড়িগ্রাম জেলাসহ রংপুরের অধিবাসীদের মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ বছরে মাত্র সাড়ে সাত কেজি, যা সবচেয়ে কম। অথচ বিশ্বে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ ২২ দশমিক ৪ কেজি।

পিকেএসএফ এ পর্যন্ত কতজন লোককে ঋণ দিয়েছে, কতজনকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পেরেছে, কতজনের দারিদ্র্য দূর করতে পেরেছে, তার হিসাব কতটা সন্তোষজনক হবে জানি না। পিকেএসএফ আমাদের এলাকায় হাজার কোটি টাকার ওপরে ঋণ দিয়েছে। কিন্তু সেখানে দরিদ্র মানুষের কাক্সিক্ষত ও ঘোষিত উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না। সেখানে এই টাকা দিয়ে পেট্রলপাম্প করা হয়েছে, মেডিকেল কলেজ করা হয়েছে, নার্সিং প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, এমনকি জুটমিল নির্মাণসহ বড় পুঁজির ব্যবসা করা হচ্ছে। তাদের পুঁজি বাড়ছে। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যে কতটুকু পরিবর্তন এসেছে, তা স্পষ্ট নয়।

এ কথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার, রিলিফ ও ক্ষক্ষুদ্রঋণ শুধু সাময়িক উপশমের ব্যবস্থা। এগুলো স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন নয়। স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শিল্পায়ন—বড়, মাঝারি কিংবা ক্ষুদ্র যে শিল্পই হোক। কৃষিতে সেচ, পানি সংরক্ষণ, বাধাহীন উপকরণ সরবরাহ, যোগাযোগব্যবস্থা, জনস্বাস্থ্য, সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণ, নদী খনন, মানসম্মত অর্থবহ শিক্ষাব্যবস্থা, সর্বোপরি স্বচ্ছ প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির মাধ্যমে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন সম্ভব। এ লক্ষ্যে কুড়িগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমরা বরাবরই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছি।

সবাই জানেন যে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার বিরাট অংশ ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা নদীর ভাঙনে প্রতিবছরই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কুড়িগ্রাম জেলার ১৫টি নদী প্রতিবছরই ভাঙে। এতে হাজার হাজার মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। তা ছাড়া অসময়ে অতিবৃষ্টির কারণে বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়

সবাই জানেন যে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার বিরাট অংশ ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা নদীর ভাঙনে প্রতিবছরই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কুড়িগ্রাম জেলার ১৫টি নদী প্রতিবছরই ভাঙে। এতে হাজার হাজার মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। তা ছাড়া অসময়ে অতিবৃষ্টির কারণে বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার অনেক সময় খরায়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলো ভৌগোলিক ও ভূতাত্ত্বিক সত্য। এগুলোর কারণে সেখানে মঙ্গা হয়, এটা ঐতিহাসিক সত্য। এটাও সত্য যে আমাদের সরকারগুলোর অমনোযোগিতা এবং ব্যর্থ উন্নয়ন-কৌশলও এ জন্য দায়ী।

এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, ১৯৭৯ সালে রংপুরে ভীষণ খরা হয়েছিল। কোথাও পানি ছিল না। খরার প্রচ-তা এতই ছিল যে ধান, পাট, শস্যাদি সব পুড়ে গিয়েছিল। গভীর নলকূপ যেখানে ছিল, সেখানে একই জায়গা থেকে মানুষ, গরু, ছাগল, কুকুর, কাক একই সঙ্গে পানি পান করেছে। আমরা আশা করি হয়তো তিস্তা ও পদ্মায় পানি পাব। কিন্তু তাতে করে আমাদের চাহিদা মিটবে না, পানি সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ ফারাক্কা, তিস্তা ও অন্যান্য নদী দিয়ে মাত্র ৩৩ শতাংশ পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ নিয়ে আমরা প্রায়ই উদ্বেগ প্রকাশ করছি। কিন্তু চীন থেকে উৎপন্ন হয়ে যে ব্রহ্মপুত্র নদের মাধ্যমে বাকি ৬৭ শতাংশ পানি আসে, তা নিয়ে আমরা কোনো চিন্তাভাবনা করছি না।

আমি মঙ্গা এলাকার সন্তান। ছোটবেলা থেকে সেখানে বড় হয়েছি। বন্যা, খরা, নদীভাঙন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর বিপর্যয় মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। মঙ্গা নিরসনে তথা আমাদের এই গরিব এলাকার উন্নয়নে কিছু বাস্তব সমস্যা চিহ্নিত করেছি। সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন দরকার। বিশেষ করে এই প্রকল্পগুলো:

১. ধরলা ব্যারাজ-কুড়িগ্রাম সেচ প্রকল্প (দক্ষিণ ইউনিট), ২. কুড়িগ্রাম সেচ প্রকল্প (উত্তর ইউনিট), ৩. ব্রহ্মপুত্র নদের ড্রেজিং, ৪. চিলমারী নৌবন্দর চালু করা, ৫. রংপুর বিভাগে শিল্প এলাকা স্থাপন, (এর জন্য চিলমারী সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হতে পারে। ঢাকাসহ আশপাশের শহরগুলোতে পোশাকশ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। তাই চিলমারীতে গার্মেন্টস জোন করা হলে পোশাককর্মীরা নিজ নিজ বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া করে চাকরি করতে পারবেন। তাঁদের ব্যয় কমে আসবে। এ জন্য এখানে সস্তায় শ্রমিক পাওয়া যাবে। এ ছাড়া চিলমারী নদীবন্দর দিয়ে নদীপথে মংলা, চট্টগ্রাম পোর্টে এবং ভারতেও সহজ ও সাশ্রয়ে মালামাল পরিবহন করা যাবে। অধিকন্তু এখানে রেললাইন আছে। রেললাইন ব্যবহার করে কনটেইনারের মাধ্যমে মালামাল পরিবহন করা যাবে।) ৬. কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন, ৭. চিলমারী (রমনাবাজার)-তিস্তা (কাউনিয়া) রেললাইনটি সংস্কার, ৮. লালমনিরহাট থেকে আসামের গোলকগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইনটি পুনরায় চালুকরণ, ৯. কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের হেলিপ্যাড থেকে উলিপুর বাজার হয়ে গুনাইগাছ স্কুল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা চার লেনে উন্নীতকরণ, ১০. কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলাধীন রংপুর জুটমিলের জায়গায় বিসিক এস্টেট স্থাপন, ১১. চিলমারী-সুন্দরগঞ্জ সেতু নির্মাণ, ১২. কুড়িগ্রামের রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি স্থাপন, ১৩. এসএমই প্রোগ্রাম চালুকরণ, ১৪. কুড়িগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ, ১৫. উলিপুর-চিলমারী উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তিকরণ, ১৬. চিলমারী স্টেডিয়াম নির্মাণ, ১৭. উলিপুর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকল্পের বাস্তবায়ন।

যত দিন পর্যন্ত এই প্রকল্পগুলোর সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হবে, ততি দন এই এলাকার মানুষের দারিদ্র্য দূর হবে না। শুধুক্ষ ক্ষুদ্রঋণের ওপর নির্ভর করে স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়।

এ কে এম মাঈদুল ইসলাম: সংসদ সদস্য

মন্তব্য করুন


 

Link copied