আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

শিয়া মসজিদে হামলার নেপথ্যেও জঙ্গিরা?

শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৫, দুপুর ০৪:১৪

বৃহস্পতিবারের এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের নাম আনোয়ার হোসেন (৪৮) এবং জুয়েল মিয়া (২৫)। আনোয়ার শিবগঞ্জ ইউনিয়নের মাঝিহট্ট গ্রামের বাসিন্দা। জুয়েল মিয়ার বাড়ি হরিপুরে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান।

মসজিদের কোষাগাররক্ষী সোনামিয়া ইতোমধ্যে শিবগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশও অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করতে যাচ্ছে। কারা এ হামলায় জড়িত থাকতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু জাফর মণ্ডল পুলিশের মতো আগের বিভিন্ন হামলায় জড়িতদের সন্দেহ করছেন বলে জানান।

আবু জাফর মণ্ডল একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করেছেন বলে জানান। আরও জানান, তিনিই এ এলাকার প্রথম শিয়া মত গ্রহণকারী। তাকে অনুসরণ করে বগুড়ায় পরবর্তীতে অনেকেই শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত হন।

তিনি জানান, প্রতি বছরের মতো গত বছর অক্টোবরেও শিবগঞ্জ ইউনিয়নের ভূতিনাথপুরে ইসলামি গানের জলসা হয়। তেমন এক জলসায় অতিথি বক্তা হিসেবে আসেন বগুড়া শহরের শিববাটি জামে মসজিদের ইমাম ড. আশরাফ সিদ্দিকী। ভাষণে তিনি শিয়াদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এতে উপস্থিত শ্রোতারা অস্বস্তিতে পড়ে যান বলে জানান আবু জাফর মণ্ডল।

তিনি আরও জানান, প্রতিবেশী তিন ইউনিয়ন আটমূল,শিবগঞ্জ ও কিচকে অন্তত ১১০ ঘর শিয়া মতাবলম্বীর বাস। তাদের পরিবারের সদস্যসংখ্যা সবমিলিয়ে পাঁচ শতাধিক। প্রায় বিশ-পঁচিশ বছর ধরে শিয়া মতাবলম্বীরা এখানে বসবাস ও নিজস্ব পদ্ধতিতে ধর্মচর্চা করছেন। কোনওদিন কোনও মতবিরোধ ঘটেনি। এমনকি হামলার আগপর্যন্ত এ ধরনের কোনও আশঙ্কাও এলাকায় ছিল না। সে কারণেই গতবছর ড. আশরাফ সিদ্দিকীর ভাষণে মানুষ বিব্রত হয়েছিল। এ বছরের জলসায় তাকে বক্তব্য রাখার জন্য আহ্বান জানানো হয়নি। এমন সময়ে এলাকাবাসীর কারও সঙ্গে মতবিরোধ বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্বের কারণে এ হামলা হয়নি এ কথা মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

আরও একটি তথ্য যোগ করেন স্থানীয় মুসুল্লি জামশেদ আলী। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জানান,তিন মাস আগে এক ধনী ব্যক্তি গাড়িতে করে এ মসজিদে আসেন। সেখানে ওই ব্যক্তি নামাজ আদায় করেন এবং নিজের পরিচয় দেন একজন শিয়া মতাবলম্বী হিসেবে। সেদিনের পর অবশ্য ওই ব্যক্তিকে আর কখনও দেখা যায়নি। ওই আগন্তুকও সাধারণের সন্দেহের বাইরে থাকেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা নাম প্রকাশ না করে জানান, শিয়া মতাবলম্বীরা মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গেই আদায় করে নেয়। এ হামলার ঘটনা ঘটে মাগরিবের নামাজ শেষ করে এশার মূল জামাত শেষ হয়ে যাওয়ার পর। অনেকেই তখন বিতরের নামাজ পড়ছিলেন। এ সময় তিন ব্যক্তি পূর্বপাশের দরজা দিয়ে মসজিদে ঢোকে। তাদের পরনে ছিল শার্ট-প্যান্ট, মাথায় টুপি, পিঠে ব্যাকপ্যাক। তারা ঢোকার পরপরই দরজা তালা দিয়ে আটকে দেয়। প্রাথমিকভাবে কেউ সেটা লক্ষ্য না করলেও গোলাগুলি শুরু হওয়ার পর লক্ষ্য করে। ওই তিন ব্যক্তি মুসুল্লিদের কাছে প্রথমে বাথরুম কোনদিকে জানতে চান। সরল বিশ্বাসে মুসুল্লিরা দেখিয়ে দেওয়ার পর তিনজন সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান নিয়ে পেছনের ব্যাকপ্যাক থেকে অস্ত্র বের করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলি করতে করতে তারা মসজিদের দক্ষিণ দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়।

পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন বলছেন, হামলাকারীরা পয়েন্ট ২২ বোরের রিভলবার ব্যবহার করেছেন।

কথা হয় শিয়া মসজিদটির নিহত মুয়াজ্জিন মোয়াজ্জেম হোসেনের (৭০) পরিবারের সঙ্গে। নিহতের বড়ভাই হাবিবুর রহমান বলেন,মোয়াজ্জেম বিশ থেকে পঁচিশ বছর আগে শিয়া মত গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরাও শিয়া মতাবলম্বী। কিন্তু তাদের পরিবারের আর সবাই সুন্নি। তবে মোয়াজ্জেমের শিয়া মত গ্রহণ করা নিয়ে পরিবারের কারও আপত্তি ছিল না। নিহত মোয়াজ্জেমকে মসজিদ প্রাঙ্গণেই সমাধিস্থ করা হবে বলে জানা যায়।

এদিকে এই হামলা নিয়ে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নয় পুলিশ। তবে পুলিশ সুপার জানান, সাম্প্রতিক সময়ে যারা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন,তারাই এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আবু জাফর মণ্ডল এক প্রশ্নের জবাবে জানান,এ বছর ১০ মহররম হোসনি দালানে বোমাহামলা ও সৈয়দপুরে নামাজরত শিয়া খাদেমের ওপর হামলার সঙ্গে ইমাম খোমেনি মসজিদে হামলাও একইসূত্রে গাঁথা হলেও হতে পারে।

ঘটনার কিছুক্ষণ পর জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক স্টেট (আইএস) তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে শিবগঞ্জ শিয়া মসজিদে হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষক সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স। এর আগে সাইট ইন্টেলিজেন্স বিদেশিদের ওপর হামলা, মুক্তমনাসহ ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর হামলার সূত্র ধরে বাংলাদেশে আইএস তৎপরতা রয়েছে বলে সরকারকে বাস্তবতা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানায়। যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied