আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

চলতি বছরে গণপিটুনিতে ১২৩ জন নিহত

সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫, দুপুর ১০:২৫

সংস্থাটি জানিয়েছে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ১২৩ জন গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছেন এবং বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে ‘সন্দেহের’ ভিত্তিতে। গত ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জে গণপিটুনির শিকার হয়ে আটজন নিহত হন। নিহতরা ওই এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়েছিল জানা গেছে। এই ঘটনায় ‘গণপিটুনি’তে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৩১ জনে।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে আসকের তৈরি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১২৩ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫৭, রাজশাহী বিভাগে ১৮, চট্টগ্রাম বিভাগে ২১, খুলনা বিভাগে ১৬, বরিশাল বিভাগে ৫, সিলেট বিভাগে ৪ এবং রংপুর বিভাগে ২ জন গণুপিটুনির শিকার হয়ে মারা যান। সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গণপিটুনির অধিকাংশ ঘটনায় সন্দেহমূলক ব্যক্তি মারা যান।

বিশ্লেষকদের মতে, গণপিটুনির এই চিত্র ভয়াবহ। সন্দেহের ভিত্তিতে গণপিটুনি দেওয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনা বাড়ার কারণ হিসেবে তারা আইনের শাসনের অভাবকে দায়ী করছেন। এ অপরাধপ্রবণতা মানুষের মধ্যে একদিনে গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বে অবহেলাও দায়ী বলে জানান তারা।

গণপিটুনিতে নিহতের এই চিত্র ভয়াবহ উল্লেখ করে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আবদুর রব খান বলেন, ‘গণপিটুনির ক্ষেত্রে মোটাদাগে তিনটি বিষয় চিহ্তি করা যায়। প্রথমত, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাস কমে যাওয়া। দেশে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা বিচার ব্যবস্থার প্রতি ক্রমাগতভাবে বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। মানুষ মনে করে অপরাধীদের ছেড়ে দিলে আইনে ফাঁকে পার পেয়ে যাবে। কিংবা পুলিশকে ম্যানেজ করে মুক্ত হয়ে যাবে।

দ্বিতীয়ত, মানুষের মধ্যে অসিহিষ্ণুতা বৃদ্ধি। আমাদের দেশের মানুষরা সাধারণত সহিংসতা দেখে দেখে ঘটনাগুলোকে স্বাভাবিক ভাবতে শুরু করেছে। তারা মনেই করে সবাই তো বিভিন্নভাবে মানুষ মারে আমরাও মারি। আর তাদের মজ্জাগত ধারণা এভাবে মারলে কিছু হয় না। আসলে সহিংসতার একটি ঘটনা আরেকটি প্রভাবিত করে।

তৃতীয়ত, সুস্থ রাজনীতির অভাব। কোনো একটি দেশে সুস্থ রাজনীতি না থাকলে সেখানে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক গতিতে চলে না। ফলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। গণপিটুনির মতো এমন ঘটনা ঘটে।’

সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর মানুষের সুশাসনের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে এমন ঘটনার ঘটছে বলে মনে করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তদন্ত সেলের পরিচালক নূর খান বলেন, ‘বর্তমানে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর দেশের মানুষের কোনো আস্থা নেই। যার কারণে একজন অপরাধীকে ধরে তাকে আইনের ছেড়ে দিতে তারা নারাজ। কাজেই এমন ঘটনা ঘটছে।’

নূর খান বলেন, ‘পুলিশের পাশাপাশি বিচার বিভাগের প্রতিও মানুষের আস্থা কমে গেছে। মানুষ মনে করে বিচাররের আওতায় কোনো অপরাধীকে আনলে সে কোনো না কোনোভাবে পার পেয়ে যাবে।’ ক্রটিপূর্ণ তদন্ত কিংবা বিচার অথবা বিচারের ধীরগতির কারণেও এমনটা ঘটতে পারে বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান।

তিনি বলেন, ‘সমাজের সব ক্ষেত্রেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। আইনের নামে মানুষকে তুলে নিচ্ছে। শুধু এগুলো কেন সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদ কিংবা জনপ্রতিনিধিদেরও এখন আর বিশ্বাস করে না।’

বড় ধরনের গণপিটুনির ঘটনাগুলোর মধ্যে সম্প্রতি ঘটে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে। এর আগে ১৪ নভেম্বর ফরিদপুরে ডাকাত ‘সন্দেহে’ গণপিটুনির শিকার হয়ে চারজন মারা যান। ফরিদপুরে গণপিটুনির ঘটনা প্রায় আসে পত্রিকায়। এর আগে ২৫ জুন একই সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে তিনজন মারা যান। ২৩ নভেম্বর যশোরের মাইকেল মধুসূধন কলেজের দুই ছাত্র গণপিটুনিতে মারা যান। ‘শিবির’ করে এমন সন্দেহে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে সাধারণ ছাত্ররা ক্ষুদ্ধ হয়ে তাদের গণপিটুনি দেন। তবে তারা ছাত্রলীগের কর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন বলে দাবি করেন ছাত্রশিবির। ‘গণপিটুনি’র সংবাদ পরিবেশন করায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সম্পাদক দাবি করেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের নির্যাতন করেন। পরে হাসপাতালে নিলে তারা মারা যান। এই ঘটনাকে ‘গণপিটুনি’ বলে সাজানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়। গত ১৯ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জে গণপিটুনিতে মারা যান চারজন। একই দিন নরসিংদীতে মারা যান দুইজন। ‘ডাকাত’ সন্দেহে এদের গণপিটুনি দেওয়া হয়। এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরে ‘গণপিটুনি’র শিকার হয়ে তিন যুবক মারা যান। তবে এই গণপিটুনিতে নিহত যুবকের গায়ে ৫৪টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। ওই সময় এলাকাবাসী জানায়, গণপিটুনির কোনো ঘটনা ঘটেনি এলাকায়। তাদের হত্যা করে ‘গণপিটুনি’র নাটক সাজানো হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিহতরা পেশাদার নাশকতা সৃষ্টিকারী।

বছরের প্রথম বড় গণপিটুনির ঘটনাটি ঘটে নরসিংদীতে। ২৫ ফেব্রুয়ারি রোববার ভোররাতে গণপিটুনিতে সাতজন নিহত হন। এলাকায় ‘ডাকাত’ পড়েছে, এমন ঘোষণা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে এলাকাবাসী বাইরে বের হন। সেদিন গণপিটুনির শিকার হয়ে সাতজন মারা যান।

এছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গায় গণপিটুনিতে এক বা দুইজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে এবং প্রায় সবই সন্দেহমূলক কারণে।

দেশে রাজনীতি দুর্বৃত্তায়িত হয়েছে মন্তব্য করে নূর খান বলেন, ‘গণতন্ত্রের অভাবেও এমন পরিস্থিতি হতে পারে। আসলে রাজনীতিবিদদের কাজ ছিল জনগনের দেখভাল করা, শুভবুদ্ধির চিন্তা করা। কিন্তু তারা এখন এই ভালো কাজগুলো করে না। সেকারণেই জনগণও তাদের আর বিশ্বাস করে না।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘আইনের শাসনের অভাবেই গণপিটুনির মতো ঘটনাগুলো ঘটছে। এ অপরাধপ্রবণতা মানুষের মধ্যে একদিনে গড়ে ওঠেনি। আমরা আইনের শাসন ঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। আইনের শাসন থাকলে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটত না।’ গতকাল শনিবার সাভারের খাগান এলাকায় এক মানবাধিকার সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, গণপিটুনিকে গণতন্ত্রের বিচ্যুতির কারণে হচ্ছে এ কথা খোদ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও মনে করেন। শনিবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনের সাউথ পার্কে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার' প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'এই বিচ্যুতি আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশেও আছে। এই বিচ্যুতির ভুল ধরা একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। এগুলোকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিচ্যুতি হিসেবে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে।’

প্রিয়

মন্তব্য করুন


 

Link copied