আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

বিএনপি জনগণের শক্তির ওপর আস্থা রাখুক

বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫, সকাল ০৯:১১

প্রভাষ আমিন

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থানটা আমার কাছে কখনোই পরিষ্কার নয়। কোনো নির্বাচন তারা কেন বর্জন করে, কোনো নির্বাচনে তারা কেন অংশ নেয় আমি ঠিক বুঝতে পারি না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন তারা বয়কট করেছে, যদিও ঠেকাতে পারেনি। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ৬টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা অংশ নিয়ে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরপরই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি।

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু যৌক্তিক আপত্তি তুললেও তার মীমাংসা ছাড়াই অংশ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও। যদিও সাফল্য-ব্যর্থতা মাপার আগেই মাঝপথে সে নির্বাচন বয়কট করেছিল তারা। তখনকার পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি একই; সরকার পরিবর্তন হয়নি, নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন হয়নি; তাও পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। এবারেরটা আরো সরাসরি। কারণ এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতো নির্দলীয়। তাই দলীয় ব্যানারে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই ‘শত নাগরিক কমিটি’ বা ‘সম্মিলিত নাগরিক ফোরাম’ এ ধরনের কোনো ব্যানারে নির্বাচনে যেত বিএনপি। তাতে নির্বাচনে যাওয়াটাও হতো আবার বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি; এই ‘গোঁ’টাও বহাল রাখা যেত। কিন্তু এবার স্থানীয় সরকার আইন পরিবর্তন করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান করায় বিএনপিকে সরাসরি অংশ নিতে হচ্ছে।

আমার ধারণা সরকার বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ফাঁদ হিসেবেই আইন পরিবর্তন করেছে। পৌরসভা নির্বাচনের পর ‘এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না’ এ ধরনের কোনো ঘোষণা আর দিতে পারবে না বিএনপি। এখন পর্যন্ত বিএনপির অবস্থান বিশ্লেষণ করে আমার মনে হয়েছে, তারা বর্তমান সরকারের অধীনে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই যাবে, কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি নেতারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচনে গুণগত পার্থক্য আছে। অবশ্যই আছে। কিন্তু নির্বাচন তো হয় একই কমিশনের অধীনে। সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক, বিএনপি নেতারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতা পরিবর্তন হয় না। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে হয়। তাদের যুক্তি শুনে মনে হচ্ছে, তারা চান আওয়ামী লীগ সারা জীবন ক্ষমতায় থাকুক, এই জন্যই ওনারা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন না। যেহেতু স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ভয় নেই, তাই তারা শুধু স্থানীয় নির্বাচনেই অংশ নেন।

আমি বলছি না, বাংলাদেশে এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আছে। আওয়ামী লীগের আগের আমলে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন, উপনির্বাচন ভালো হয়েছে। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাও হেরেছে। তখন আওয়ামী লীগের সামনে ‘দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে’ এটা প্রমাণের দায় ছিল। তাই ৬ সিটি করপোরেশন নির্বাচনও হয়েছে চমৎকার পরিবেশে। সম্ভাব্য সর্বোচ্চ উন্নয়ন কাজ করার পরও আওয়ামী লীগের মেয়ররা গো-হারা হেরেছেন। কিন্তু এত কিছুর পরও বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না আসায় যেন দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়মুক্তি ঘটে আওয়ামী লীগের।

৫ জানুয়ারি প্রার্থীবিহীন, ভোটারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনের একটি। তারপর উপজেলা নির্বাচনে প্রথম দুই দফা ভালো হলেও তাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বেশি করে হারছিল। ব্যস, তারপর আবারও নির্বাচন ব্যবস্থাকেই কলঙ্কিত করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুপুরে বিএনপি প্রার্থীরা নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরও আওয়ামী লীগ যেভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে, তা আতঙ্কজনক। মনে হচ্ছে, ৫ জানুয়ারির পর দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করার সব দায় কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলেছে আওয়ামী লীগ।

এত কিছুর পরও বিএনপি যে পৌর নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে, সে জন্য অবশ্যই তারা ধন্যবাদ পাবেন। দেশটা তো আর আওয়ামী লীগের একার নয়। ইচ্ছা হলে তারা ভালো নির্বাচন করবেন, ইচ্ছা হলে খারাপ; এটা তো আর গণতন্ত্র নয়। তাই নির্বাচনী গণতান্ত্রিক ধারা পুনর্বহালের জন্য হলেও বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি যে ভুল করেছে, তার খেসারত দিতে হচ্ছে গোটা জাতিকে, দিতে হবে অনেকদিন। বিএনপি ক্ষমতায় আসতই কি না জানি না, তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি আরো ভালো অবস্থায় থাকত। সংসদে এমন ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ মার্কা বিরোধী দল থাকত না। জামায়াতের পাল্লায় পড়ে, তাদের কুপরামর্শে বিএনপি আন্দোলনের নামে যা করেছে তাতে দলটির দীর্ঘ ঐতিহ্যে কলঙ্কের দাগ পড়েছে। পেট্রল বোমায় পুড়িয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যার দায় বিএনপিকে নিতেই হবে। ক্যান্টনমেন্টে জন্ম হলেও স্বৈরাচারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনের পথপরিক্রমায় বিএনপি জনগণের দলে পরিণত হয়েছে।

বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটসংখ্যা কাছাকাছি। জোটগত ভোটের হিসাব আর দোদুল্যমান ভোটাররাই ক্ষমতার পালাবদল ঘটান। তাই বিএনপির মতো একটি গণতান্ত্রিক দলকে তার নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙা রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হলে নির্বাচনী ধারার কোনো বিকল্প নেই। দিনের পর দিন সহিংসতা চালিয়ে আর পরে মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়ানোর মতো আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি বিএনপি নয়। আমার ধারণা দেরিতে হলেও বিএনপি বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। তাই তারা পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে তাদের স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার রেকর্ড খুব ভালো নয়। জেতাটা নিশ্চিত হলেই তারা নির্বাচনে থাকেন, নইলে মাঠ ছেড়ে দেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগের মধ্যরাতে তারা নির্বাচন থেকে সরে এসেছেন। আবার রাজশাহী-খুলনা-গাজীপুর-সিলেট-বরিশাল-কুমিল্লায় শেষ পর্যন্ত থেকেছেন। আবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুপুরের মধ্যে অনিচ্ছুক প্রার্থীদের সরিয়ে এনেছেন। নির্বাচনে হার-জিত আছেই।

শুধু জেতা নিশ্চিত হলেই আমি নির্বাচনে যাব বা হারলেই নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে; এ ধরনের মানসিকতা ঠিক নয়। আমার ধারণা ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি নির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলে ফলাফল অন্যরকম হতেও পারত। বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, শুধু যদি এটা প্রমাণের জন্য বিএনপি স্থানীয় নির্বাচনে যায়, তাহলে কারোই কোনো লাভ হবে না। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থেকেও এটা প্রমাণ করা সম্ভব। তবে নির্বাচন যেমনই হোক, নির্বাচনের পর যদি নানা ছুতোনাতায় বিএনপির নির্বাচিত মেয়রদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচনের ওপর মানুষের আস্থা থাকবে না। জনগণের বিপুল রায় নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়া রাজশাহী-খুলনা-গাজীপুর-সিলেটের মেয়ররা এখন কোথায়? তাই দেশে নির্বাচনী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারকেও আরো সহনশীল হতে হবে, জনগণের রায়ের প্রতি আরো শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রবল বিরোধিতা করলেও বিএনপি শেষ পর্যন্ত পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এ জন্য শুরুতেই তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই বিএনপি নানা ওজর-আপত্তি তুলছে। তার অনেকটি সত্য, অনেকটি অজুহাত। দেশের বিভিন্নস্থানে বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের পরও সরকারি দলের প্রার্থী বদলের মতো নজিরবিহীন ঘটনাও ঘটেছে। অনেক জায়গায় বিরোধী দলের প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। অনেক জায়গায় ভয়ে বিরোধী দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ফেনীসহ অনেক জায়গায় সরকারি দলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র বা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছেন।

আচরণবিধি ভঙ্গ করে সরকারি দলের সাংসদরা বিভিন্নস্থানে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন এখনো মাঠে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। এখনো খেলার মাঠ সমতল নয়। এত সব অনিয়ম সত্ত্বেও আমরা চাই বিএনপি জনগণের শক্তির ওপর আস্থা রাখুক, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকুক। কিন্তু আমরা ঘর পোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পাই। তাই মনের আড়ালে শঙ্কা, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবে তো?

মন্তব্য করুন


 

Link copied