বুধবার রাত থেকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মা নিজ হাতে দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। মা জেসমিন দীর্ঘ দিন ধরেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। হত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে মা নিজেই র্যাবের কাছে পরকীয়া, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে মানসিকভাবে অসুস্থতা হয়ে পড়ার কথা উল্লেখ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় সাংবাদিকদের জানানো হয়, মা জেসমিন আক্তার তার দুই সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে দুপুর একটায় সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব বিস্তারিত জানাবে।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জেসমিন দাবি করেছেন, শ্বাসরোধ করে প্রথমে মেয়েকে এবং পরে ছেলেকে হত্যা করেছেন। হত্যার সময় মেয়ে জেগে ছিল, ছেলে ঘুমাচ্ছিল। পারিবারিক অশান্তি থেকে এবং সন্তানেরা পড়াশোনা করত না বলে এই কাজ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
ঘটনার পর গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য চাইনিজ রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে দুই সন্তানের মৃত্যুর কথা প্রচার করতে থাকেন মা নিজে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা বলার পর পুরো বিষয়টি অন্যদিকে মোড় নেয়।
এছাড়া সন্তানের লাশ না নিয়ে তড়িঘড়ি করে গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়া, বক্তব্যে অসংলগ্নতার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে। এর পরই র্যাব বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করে।
সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর প্রভাব পড়ে দুই সন্তানের ওপরও। স্কুলেও তারা অন্যমনস্ক থাকতো বলে তারই সহপাঠীরা জানিয়েছে। এরই একপর্যায়ে সোমবার বিকালে দুই সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে করেন জেসমিন নামের এই ঘাতক মা।
এর আগে বুধবার নিহত ভাই-বোনের বাবা-মা ও খালাকে জামালপুর থেকে আটক করে নিয়ে আসে র্যাব। পরে র্যাব সদর দপ্তরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এদিকে খুনের ঘটনার তিনদিন পার হয়ে গেলেও এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
গত সোমবার রাতে রাজধানীর ভিকারুন নেছা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ইসরাত জাহান অরনী ও হলি ক্রিসেন্ট স্কুলের নার্সারির ছাত্র আলভী আমানকে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে ওই সময়ে বলা হয়েছিল, বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকীতে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে আনা খাবার খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর থেকে তাদের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে হাসপাতালে আনা হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, শ্বাসরোধ করেই তাদের হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এরপর থেকেই ঘটনার মোড় নেয় অন্যদিকে। পুলিশ মঙ্গলবার থেকে আজ পর্যন্ত নিহতের বাবা-মা খালা, বাড়ির দারোয়ান শিক্ষিকাসহ মোট নয়জনকে আটক করেছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।
এ ব্যাপারে রামপুরা থানার পরিদর্শক তদন্ত আসাদুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। আর আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব।