বিশেষ প্রতিনিধি ২৭ মার্চ॥ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খগাখরিবাড়ি ও টেপাখাড়িবাড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী ময়নুল হক ও জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে তোলপাড় সৃস্টি হয়েছে।
ময়নুল হক টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। তবে ইউনিয়ন বা উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন সদস্য নন।তার উপর তিনি সরকারি চাকুরী করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ময়নুল হক টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি পদে কর্মরত। সে ২০১১ সালের ২০ নবেম্বর হতে ওই চরখড়িবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মরত রয়েছে। তিনি সরকারি বেতন ভাতা সহ আনুসাঙ্গিক সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।
অপর দিকে খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগ বা ওই দলের কোন অঙ্গসংগঠনের সদস্য পদেই নেই। তারপরেও এই দুই ব্যাক্তি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার ছত্র ছায়ায় কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে নামের তালিকা তাদের কেন্দ্রে প্রেরন করা হয়। কেন্দ্র তৃণমুল থেকে পাঠানো নামের অনুযায়ী দলীয় মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয়। এ নিয়ে এলাকায় আওয়ামী লীগের সক্রিয় ও নিষ্ঠাবান নেতারা স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার কারনে দলীয় মনোনয়নে বঞ্চিত হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ময়নুল হকঃ-তৃতীয় দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইসির ঘোষিত তফসিল থেকে ছিটমহলের সীমানা জটিলতায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন খগাখড়িবাড়ি,গয়াবাড়ি ও টেপাখড়িবাড়ির নির্বাচন নতুন আদেশে বাতিল করা হয়। ওই বাতিলের নির্বাচন কমিশনের জারীকৃত পত্রে (নং ১৭.০০.০০০০.০৭৯.৪১.০৩১.১৬-১১৯) বিভিন্ন কারণে তৃতীয় পর্যায়ের তফশীলের ৬৮৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টির তফশীল বাতিল করা হয়। এর মধ্যে ডিমলা উপজেলার অধুনালুপ্ত ছিটমহলবাসীকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় গয়াবাড়ি এবং টেপাখড়িবাড়ি ও অধুনালুপ্ত ছিটমহল বড়খানকি (২৮ নম্বর) খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আদালতে রীট পিটিশনের (নং ১৯২২/২০১৬) কারণে ঘোষিত তফশীল বাতিলের কথা জানানো হয়।
কিন্তু ইসির এই বাতিল আদেশ যেন মানতে রাজি নয় উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী ময়নুল হক। ময়নুল ওই ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক। তবে আওয়ামী লীগের কোন কমিাটিতে নেই বলে ওই ইউনিয়ন সহ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি সুত্র নিশ্চিত করেন।
এদিকে আগামী ২৩ এপ্রিল তৃতীয় দফা নির্বাচন ঘিরে মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার শেষ দিন আজ রবিবার ২৭ মার্চ ছিল। বেলা ৩টার পরে ময়নুল হক নির্বাচন আচরনবিধি লঙ্ঘন করে শতশত মোটরসাইকেল ও মাহিন্দ্রতে ভাড়া করা হাজারো মানুষজনকে সঙ্গে নিয়ে শো ডাউনের মাধ্যমে ডিমলা উপজেলায় প্রবেশ করে মনোনয়ন পত্র দাখিলের চেস্টা চালায়। তাকে ইসির আদেশ জানান ওই ইউনিয়নের রির্টানীং অফিসার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম। এরপরেও ময়নুল হক তার মনোনয়পত্র জমা নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। পরবর্তিতে তাকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হয়।
ময়নুল হক তার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার চেস্টার আগে দোয়া ও আর্শিবাদ নিতে প্রথমে ছুটে গিয়েছিলেন ডিমলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এলাকার সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারের বাসভবনে। সেখানে সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার তাকে আর্শীবাদ ও দোয়া দেন। এরপরই ময়নুল উপজেলা পরিষদে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য অভিযান চালায়। ইসি কর্তৃক খগাখড়িবাড়ি,গয়াবাড়ি ও টেপাখড়িবাড়ি সহ তিন ইউনিয়নের নির্বাচন বাতিলের পরেও ময়নুল হক কি ভাবে শো ডাউনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারের সাথে দেখা করে জোড়পূর্বক মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান এ নিয়ে এলাকার সাধারন মানুষজনে মাঝে প্রশ্ন উঠেছে।
এ ব্যাপারে ময়নুল হকের সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার তার মোবাইল কল করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে ময়নুল হক তার ফেসবুক আইডিতে রবিবার(২৭ মার্চ) যে শো ডাউন করেছে সেই শো ডাউনের ১৬টি ছবি পোষ্ট করেন। সেই ছবির সাথে তিনি স্ট্যাটাস লিখেছেন। যা পাঠকদের জন্য হু-বা-হু তুলে ধরা হলো।
-আজ আমার জীবনের সবচেয়ে প্রাপ্তির দিন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে মনোনিত করায় মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানাই অভিনন্দন। সেই সাথে আমার রাজনৈতিক গুরু বীরমুক্তিযোদ্ধা জনাব আফতাব উদ্দিন সরকার এম,পি কে ও যারা আমাকে সহযোগীতা করেছেন,যারা আমার সাথে ছিলেন,যারা আমাকে বিভিন্ন পরামর্ষ দিয়েছেন,যারা আমাকে সমর্থন করেছেন এক কথা যাদের উছিলায় আমার এই প্রাপ্তি সবাইকে জানাই আমার অভিনন্দন।-
অভিযোগে জানা যায় ময়নুল হক টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি পদে কর্মরত। সে ২০১১ সালের ২০ নবেম্বর হতে ওই চরখড়িবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত রয়েছে। তিনি সরকারি বেতন ভাতা সহ আনুসাঙ্গিক সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।
সরকারি কর্মচারী হয়ে কিভাবে ময়নুল হক আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় দফার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন আজ রবিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত নীলফামারী জেলা সদরের ৫টি ও ডিমলা উপজেলার ৭টি সহ ১২ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৭২ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৪৪ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৫৭ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
জেলা নির্বাচন অফিসার জিলহাস উদ্দিন জানান চেয়ারম্যান পদে নীলফামারী সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নে ৭ জন,কচুকাটা,রামনগর,সোনারায় ইউনিয়নে ৬ জন করে ও সংগলশী ইউনিয়নে ৫ জন সহ ৩০ জন, ও ৫ ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য পদে ১৭২ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৬৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করে ।
অপর দিকে ডিমলা উপজেলার চেয়ারম্যান পদে ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে বালাপাড়ায় ৭জন,ডিমলা সদরে ৫ জন,ঝুনাগাছচাঁপানীতে ৮ জন, খালিশাচাঁপানীতে ৫ জন,নাউতারায় ৮জন পশ্চিমছাতনাইয়ে ৫জন ও পূর্বছাতনাইয়ে ৪ জন সহ ৪২জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২৭২ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে।
জাহাঙ্গীর আলমঃ-নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের দোহলপাড়া গ্রামের আনারুল ইসলামের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম। যিনি ইউনিয়ন বা উপজেলা আওয়ামীলীগ কিংবা যুবলীগ বা ছাত্রলীগের সদস্য নন তবুও পেয়ে গেছে নৌকা প্রতীক। খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দ্বয়ের স্বাক্ষরিত পৃথক দুইটি প্রত্যয়ন পত্র সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম কোথাও কোন সদস্য নেই। তাহলে কিভাবে নৌকা প্রতিক পেলেন তিনি ? এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে খোদ আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতা কমীদের মাঝে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীর অনেকেই জানায়, জাহাঙ্গীর আলম তিস্তানদীতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর-বালু উত্তোলন করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন। বর্তমানে ডিমলা উপজেলা জুড়ে জাহাঙ্গীর ও পূর্ব ছাতনাই কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের নামমাত্র কম্পউটার মাস্টার আতাউর রহমান , এক জামাই কামরুলের নেতৃত্বে অবৈধভাবে বোমা মেশিনের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।
ফলে শুধুমাত্র টাকার জোড়েই জাহাঙ্গীরের পক্ষে প্রভাবশালীর ছায়া পড়ে। কিন্তু বিধিবাম, নির্বাচনী হাওয়ায় ঝড়ের বেগে নেমে আসে কালো মেঘ। খগাখড়িবাড়ী ইউপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান ববিউল ইসলাম লিথন আসে ঝড় হাওয়ায়। তিনি বিলুপ্ত ছিটমহল বড় খানকির নাগরিকদের নিজ ইউপি’র সীমানায় নিতে মহামান্য হাইকোর্ট রিট পিটিশন দাখিল করেন।
এরই প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট নির্বাচনের উপর স্থগিত আদেশ দিয়ে রুল নিশি জারী করেন। এ কারনে নির্বাচন কমিশন খগাখড়িবাড়ি,টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের তৃতীয় দফায় নির্বাচনী তফসিল বাতিল করেন। এরই ফাঁকে ঘটে যায় ঘটনার আঁড়ালের ঘটনা। শুরু হয় খোদ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে তোলপাড়। প্রত্যয়ন দিতে থাকেন জাহাঙ্গীর কোন সদস্য পদেও নেই আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ ইউনিয়ন কমিটিতে। তাহলে কিভাবে প্রার্থী যাচাই কমিটিতে নাম লেখান আঁঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাওয়া জাহাঙ্গীর আলম। এই প্রশ্ন এখন সর্বত্রই।
এ ব্যাপারে খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হামিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ভুলের কারনে সে এভাবে নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবী করেছেন। আসলে জাহাঙ্গীর কোন দিনেও সদস্য ছিলো না আমাদের দলের। একই কথা বলেন, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আরিফুর রহমান। তারা আরো বলেন, এই ইউনিয়নের নির্বাচনী তফসীল আপাতত বাতিল হওয়ায় এখনও দলের সিন্ধান্ত নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বিষয়গুলি নিয়ে নৌকা প্রতীক পাওয়া বালু-পাথর ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে আর কোন কমিটি ইউনিয়নে হয়নি। তবে লোকে বলে প্রভাবশালী মামার অছিলায় মনোনয়ন বাগাতে সক্ষম হয়েছে জাহাঙ্গীর আলম ।