এই ক্যাম্পাসে শিবিরের অধিপত্যে মুখ থুবড়ে পড়েছিলো অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম। কিন্তু শিবিরের সেই দাপুটে অধিপত্যের দিন এখন আর নেই। ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে ২০১০ সালে ক্যাম্পাস ছেড়েছে ছাত্রশিবির। সেই সাথে গেল ৬ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে শিবিরের ব্যারাক হিসেবে ব্যবহৃত কলেজ হোস্টেলগুলো।
বর্তমানে ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির নেই বললেই চলে। কিন্তু যাদের তাড়িয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অন্য ছাত্রসংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মন জয় করেছিলো। আজ সেই ছাত্রলীগই ছত্রভঙ্গ ছাত্রলীগে পরিণত হয়েছে। সময় মতো কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্বের অভাবে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখন হতোদ্যম হয়ে পড়েছে। আর এ সুযোগে ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি হিসেবে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির।
শতবর্ষে পদার্পণ করতে যাওয়া উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ এখন নানাবিধ কারণে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাসে এক সময়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকা নেতাদের অনেকেই এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে খুবই পরিচিত মুখ। কিন্তু বর্তমানে কোনো কমিটি না থাকায় কলেজে কোনো জাতীয় প্রোগ্রামে ও দলীয় তৎপরতায় ছাত্রলীগ নেই বললেই চলে।
আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড হিসেবে উত্তরবঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগ ইউনিট। সেখানে কমিটি না থাকায় সেই গুরুত্ব থেকে ছিটকে পড়ে হতোদ্যম হয়ে পড়েছে নেতা-কর্মীসহ ছাত্রলীগ অনুরাগী সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। কলেজ ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে তাদের তীব্র অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে।
দলীয় সূত্রমতে, ২০১২ সালের ২৪ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের উপস্থিতিতে ও রংপুর জেলা ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে রাফিউর রহমান রাফিকে সভাপতি ও রাকিবুল হাসান কাননকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। গেল বছর কলেজ সভাপতি রাফি রংপুর সিটি করপোরেশনে চাকরিতে যোগদান করায় এবং সাধারণ সম্পাদক কানন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার কারমাইকেল কলেজে নতুন কোনো কমিটি না দিয়েই ২০ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে দীর্ঘ ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কমিটি হয়নি। একারণে দিন দিন কমিটিহীন হয়ে ছত্রভঙ্গ হতে চলেছে দলটির নেতাকর্মীরা।
নাম না প্রকাশের শর্তে ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকায় কলেজের ১০০ বছর উদযাপনকে কার্যকর করতে বিভিন্ন দলের ছাত্রনেতাদের বিভিন্ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও ছাত্রলীগের কাউকে রাখা হচ্ছে না। এছাড়া ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ না থাকায় এখন দিনদিন ছাত্রশিবিরের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ওই শিক্ষক আরো জানান, শিবিরের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে অপবাদপ্রাপ্ত ছাত্রহোস্টেলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি খুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় এসব হলে আবারো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষে থাকা ছাত্ররাই অবস্থান নিতে পারে।
এ ব্যাপারে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শাফিউর রহমান স্বাধীন বলেন, ‘চলতি মাসেই মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরই সম্মেলনের মাধ্যমে কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের কমিটি গঠন করা হবে’।
রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান কানন বলেন, ‘কমিটি গঠন করা মহানগর ছাত্রলীগের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে আমার বলার কিছু নেই।’
অন্যদিকে, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি শাফিউর রহমান শফি বলেন, ‘কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগ একটি ঐহিত্যবাহী ইউনিট। ছাত্রলীগের এই ইউনিট সব সময়ই দলীয় কার্যক্রম ও দেশনেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে নির্ভীক সৈনিক হয়ে রাজপথে ছিলো।’ তিনি বলেন, ‘মহানগর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার পরপরই কারমাইকেল কলেজ ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের করে কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগ ইউনিট ঘোষণা করা হবে।’