আর্কাইভ  রবিবার ● ১৯ মে ২০২৪ ● ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
আর্কাইভ   রবিবার ● ১৯ মে ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামে উত্তরবঙ্গ জাদুঘর পরিদর্শন করলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী       সৈয়দপুরে আচরণবিধি লঙ্ঘনে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা টাকা দিতে অস্বীকার, জেলহাজতে চেয়ারম্যান প্রার্থী       নীলফামারীতে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ       চার বিভাগে হিট অ্যালার্ট জারি       জীবন্ত ঘোড়া দিয়ে প্রচারণায় সৈয়দপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা      

 width=
 

ডিমলা উপজেলা নির্বাচন॥ এমপির ভাই, ভাতিজা ও ভাতিজি বউ প্রার্থী-তৃণমূলে ক্ষোভ

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, দুপুর ১২:৫০

বিশেষ প্রতিনিধি॥ নিজ উপজেলার রাজনীতি নিজের কবজায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য ও ডিমলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন সরকার। ছষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে এমপির পরিবারের নিকট আত্বীয় এমন তিনজন প্রার্থী হয়েছেন। এতে এমপি ও নেতাদের গ্রুপিংয়ে বেকায়দায় পড়েছে দলের অন্যান্য প্রার্থী ও সাধারণ নেতাকর্মীরা। ফলে ডিমলা উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের গৃহদাহ আরও প্রকট হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে এমপির বিরুদ্ধে। 
না প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অনেক স্থানীয়রা অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, ডিমলা উপজেলায় এমপির এক পরিবার তন্ত্র চলছে। তাদের বিরুদ্ধে বা উপরে কেউ কথা বলতে পারে না। ফলে তারাই ডিমলা উপজেলায় রাজত্ব করেই চলেছে। একদিকে বাংলাদেশ সরকার দেশ পরিচালনা করছে, তো অন্য এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার ডিমলা উপজেলা পরিচালনা করছে। টেন্ডার থেকে শুরু করে নিয়োগ বানির্জ্য সব এই একটি পরিবারের নিয়ন্ত্রণে।  
এদিকে কোন্দল এবং বিভক্তি বিদ্যমান থাকায় সহিংসতাও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ডিমলায় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তাই স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশ ডিমলায় মানা হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারন ভোটাররা। 
জেলা নির্বাচন অফিসার ও ডিমলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রির্টানীং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ডিমলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইতোমধ্যে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যা যাচাই বাছাইও হয়ে গেছে।  ডিমলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এতে সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষনা করা হয়েছে। এখন প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ সময় রয়েছে আগামী ২২ এপ্রিল ও ভোট গ্রহন ৮ মে।
ডিমলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিলকারি ৪ জন হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি টানা দুই মেয়াদের নৌকা প্রতিকের উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য ফেরদৌস পারভেজ ও ন্যাপ নেতা আব্দুর রহমান। 
উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমুল কর্মীরা জানায়, চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে দুইজন এমপি আফতাব উদ্দিন সরকারের পরিবারের নিকট আত্বীয়। এরমধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু হলো এমপির আপন চাচাতো ভাই ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক ফেরদৌস পারভেজ হলেন এমপির আপন ভাতিজা। তৃণমুল নেতাকর্মীরা আরও জানান, চাচাতো ভাই আনোয়ারুল হক মিন্টুর সঙ্গে এমপির ব্যাক্তিগত সর্ম্পক খুব একটা ভাল নয়। ফলে এমপি তার ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের ডেকে ভাতিজার পক্ষে নির্বাচন করার জন্য রিতিমত নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে দলের নেতাকর্মীরা বাধ্য হয়ে নির্বাচনে ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজের পক্ষে মিছিল মিটিং করতে বাধ্য হচ্ছে। 
অপর দিকে যারা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা তারাও বিভক্ত হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি টানা দুই মেয়াদের নৌকা প্রতিকের উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম ও এমপির আপন চাচাতো ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আনোয়াররুল হক সরকারের পক্ষ নিয়েছেন। 
এদিকে ডিমলায় বিভিন্ন ক্লাবের ও সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়ে এমপির ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফেরদৌস পারভেজকে বক্তব্যে বলতে শোনা যায় আমি ফেরদৌস পারভেজ। আমার চাচা টানা তিনবারের এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার। আমার বড় ভাই ফিরোজ সরকার ডিমলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক এবং ডিমলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান। বক্তব্যে বর্তমান টানা দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও এবারের প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতেও শোনা যায় ফেরদৌস পারভেজকে। 
অপরদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে এমপির আপন ভাতিজি বউ ডিমলা সদর ইউনিয়নের মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পারুল বেগম প্রার্থী হয়েছেন। উক্ত পদে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি জাহানারা বেগম ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত পন্থি আয়শা সিদ্দিকাও রয়েছে। 
এদিকে দিকে তৃণমুল নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে এমপির পরিবারের বা নিকট আত্বীয় কেউ প্রার্থী না হলেও ওই পদে ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে মোফাক্কারুল ইসলাম পেলবকে এমপি সমর্থন দিয়েছেন। তৃণমুল নেতারা অভিযোগ করে বলেন, মোফাক্কারুল ইসলাম পেলব কিছুদিন আগেও ন্যাপের উপজেলা আহবায়ক ছিলেন। তাকে এমপি আওয়ামী লীগের যোগদান করিয়েছেন। 
সুত্র মতে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান নীরেন্দ্র নাথ রায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ডিমলা সদর ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক। বাকী প্রার্থী যথাক্রমে মোঃ স্বপন, হামিদার রহমান, উত্তম কুমার রায়, আবু সাঈদ, সুজয় চন্দ্র রায় সকলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। এ সকল প্রার্থীদের অনেকে বলেন, এমপি আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মোফাক্কারুল ইসলাম পেলবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
ডিমলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নীলফামারী-১ আসনের (ডোমার-ডিমলা) সংসদ সদস্য ডিমলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন সরকারের আপন চাচাতো ভাই আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু ও ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজ চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এরমধ্যে ফেরদৌস পারভেজকে বিজয়ী করার জন্য উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আঃলীগ নেতাদের প্রতিদিন বাসায় ঢেকে এসে পক্ষে কাজ করার জন্য দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। এছাড়া যারা সমর্থন করছেন না তাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদান করতেছেন। 
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের এমপির প্রভাব বিস্তারের কারনে সুষ্ঠ ভোট নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে এই বীরমুক্তিযাদ্ধা অভিযোগ তুলে সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে এমপির ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজ প্রকাশ্যে আমাকে লাঞ্চিত করেছিল। যার বিচার আজও পাইনি আমি। 
এ ব্যাপারে কথা বলা হলে এমপি আফতাব উদ্দিন সরকারের আপন চাচাতো ভাই ডিমলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের কোন চিঠি এখনও হাতে পাইনি। তবে পত্রপত্রিকায় জানতে পেরেছি মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেনা। যদি দলীয় চিঠি হাতে পাই তাহলে সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে আগামী ২২ এপ্রিল মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিব। তিনি অভিযোগ করে জানান, নির্বাচনে এমপি ভাই হিসাবে আমাকে সমর্থন দেননি। তিনি ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজকে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে দলের লোকজনকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে এমপির ভাতিজা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক ফেরদৌস পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। এখানে এমপি চাচার কোন প্রভাব নেই। নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি ভোট করার জন্য। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি প্রতিদ্বন্দী অপর তিনজন যে ভোট পাবে তাদের চেয়ে আমি দ্বিগুন ভোট পেয়ে বিজয়ী হবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এটাতো আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির  সিদ্ধান্ত, যুবলীগের কোন সিদ্ধান্ত নয়। এধরনের কোন চিঠি হাতে পাইনি। এমপির স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে কি পারবে না তা পরে ভেবে চিন্তা করবো। 
সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি চাচাতো ভাই আনোয়াররুল হক সরকার ও ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজের প্রার্থী হওয়া নিয়ে শুরু থেকেই বিরোধিতা করেছেন। এখন দলের সিদ্ধান্ত মন্ত্রী বা এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না- তা সবাই মানবে বলে মনে করেন তিনি। 

মন্তব্য করুন


 

Link copied