সিদ্দিকুর রহমান শাহীন ,ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম করার পর বিয়ে করার জন্য ওই কলেজের পিয়নের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক খায়রুল বাসার রানা এবং পিয়ন জিয়াউল হায়দার জুলিয়াসকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনা তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কলেজের পিয়ন জিয়াউল হায়দার জুলিয়াসের ঘরের ভিতর উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) মাওলানা মো: সোলায়মান আলী রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করছেন। তার পাশে চেয়ারে ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক খায়রুল বাশার রানা ও একটি কম বয়স্ক মেয়ে তার পাশে বসে আছে। এসময় একজন লোক তাদের ভিডিও করতে থাকলে প্রভাষক রানা তাকে ভিডিও করতে নিষেধ করছেন। এক পর্যায়ে ও ছাত্রী চেয়ার থেকে উঠে ভিডিওকারীর দিকে তেড়ে যাচ্ছেন। এরপরও ভিডিও বন্ধ না হলে ওই ছাত্রী প্রভাষকের গলা জড়িয়ে ধরেন। একপর্যায়ে পিয়ন জুলিয়াস ঘরে ঢুকে ভিডিওকারীকে শাসাতে থাকেন। পরে মেয়ের অভিভাবকের লোকজন এসে প্রভাষক রানাকে উত্তম মধ্যম দিয়ে মেয়েকে জোর পুর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়।
জানা গেছে, ফুলবাড়ী ডিগ্রী কলেজের ইংরেজী প্রভাষক খাইরুল বাশার রানার সঙ্গে ওই কলেজের ২০২৪ সালের মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীর প্রাইভেট পড়ানোর সুবাদে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর সুবাদে অভিযুক্ত প্রভাষক গত ১৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) ওই ছাত্রীটিকে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষা ফেরুষা গ্রামের বাসিন্দা ওই কলেজের পিয়ন জিয়াউল হায়দার জুলিয়াসের বাড়ীতে নিয়ে যান। সেখানে কাজী ডেকে বিয়ে রেজেস্ট্রী করার সময় স্থানীয়রা মেয়ের অভিভাবককে খবর দেন। এরপর মেয়েটির অভিভাবকরা দ্রুত ওই বাড়ীতে এসে প্রভাষককে উত্তম- মধ্যম দিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত প্রভাষক খাইরুল বাশারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বের হলে সত্য মিথ্যা জানা যাবে। তবে এটা আমার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র।
পিয়ন জিয়াউল হায়দার জুলিয়াসের মোবাইলে কল দিলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) মাওলানা সোলায়মান আলী জানান, মেয়ের বিবাহ রেজিস্ট্রাী করার জন্য জুলিয়াস ভাই আমাকে ডেকেছেন। গিয়ে দেখি সেখানে অন্য ঘটনা। তাই রেজিস্টী না করে চলে এসেছি।
ফুলবাড়ী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম রিজু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিভাবকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত প্রভাষক ও পিয়নকে সাময়িক বরখাস্তের পর ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি আজিজার রহমান মাস্টার জানান, ঘটনাটি দুঃখজনক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। এর মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ জানান, ২৪ এপ্রিল তদন্তের চিঠি তিনি পেয়েছেন ১৫ কার্যদিবসে রিপোর্ট জমা দেয়া হবে। এর মধ্যে সরকারী বম্ধ সহ ১৯ দিন হবে। এর মধ্যেই তারা তদন্তের তথ্য শুরু করেছেন। তদন্ত শেষে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।